শরবতে কি মিশছে সংরক্ষণের বরফ? চিনে নিন রং দেখেই


বাণিজ্যিক বরফের রং হবে নীল। আগামী ২০ জুন থেকে। এমনই নির্দেশ দিল কেন্দ্রীয় খাদ্য নিরাপত্তা কমিশন। 

দেশ জুড়ে বাণিজ্যিক বরফ শরবতে মিশিয়ে বিক্রির প্রবণতা বাড়ছিল। কলকাতা শহরেও এ নিয়ে প্রায়শই নানা অভিযোগ জমা পড়েছে। চিকিৎসকদের মতে, বাণিজ্যিক বরফ পেটে গেলে তা শরীরে ক্ষতি করতে পারে। তা কেবল মাছ, মাংস, আনাজ সংরক্ষণের কাজে লাগানো যায়। শব সংরক্ষণের কাজেও প্রয়োজন হয়। কিন্তু সেই বরফ রাস্তাঘাটে শরবত, আখের রসে প্রকাশ্যেই মেশানোর রেওয়াজ চলছিল। ফলে সংরক্ষণের বরফ এবং খাওয়ার বরফের রং এক হওয়ায় অনেক সময়ে মেশানোর কারবার ধরাও মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। গত জুলাইয়ে কলকাতা পুরসভা ওই দুই বরফের রং আলাদা করার বিষয়ে উদ্যোগীও হয়। তবে বাণিজ্যিক বরফ প্রস্তুত কর্তা এবং একাধিক বিশেষজ্ঞের মতকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে সেই কাজে আর এগোতে পারেনি পুর প্রশাসন। এ বার কেন্দ্রীয় ফুড সেফটি কমিশনের নির্দেশ পেয়ে অনেকটা আশ্বস্ত পুর কর্তারা। বৃহস্পতিবার সেই নির্দেশের কথা বলে মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ জানালেন, এ বার খাবারে বাণিজ্যিক বরফ মেশানো নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।

শহরের পথঘাটে বিক্রি হওয়া শরবত, আখের রসে বাণিজ্যিক বরফ মেশানোর ঘটনা ঘটেই চলেছে। এমনকি, মধ্য কলকাতায় কিড স্ট্রিটে রাজ্যের বিধায়কদের অতিথি আবাসের সামনেও আখের রস, শরবতে বাণিজ্যিক বরফ মেশানোর কারবার ধরেছে পুরসভার খাদ্য সুরক্ষা দল। কলকাতার উত্তর থেকে 

দক্ষিণে কালীঘাট, রাসবিহারীতে একই চিত্র। টন টন বাণিজ্যিক বরফ ফেলে দিয়েছেন পুরকর্মীরা। পানীয়ে বাণিজ্যিক বরফ মেশানোর কারবার রুখতে মাঝেমাঝেই অভিযান চলেছে। টন টন বরফ ফেলেও দেওয়া হয়েছে। তবুও খাবারে বাণিজ্যিক বরফের ব্যবহার বন্ধ করা যায়নি বলে জানিয়েছেন পুর অফিসারেরা। তখনই ঠিক হয় বরফের রং আলাদা করার বিষয়টি। সংরক্ষণের বরফে নীল রং করা হবে, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ডাকা হয়েছিল শহরে বাণিজ্যিক বরফ বিক্রি করা একাধিক সংস্থার মালিক এবং একাধিক বি‌শ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞকে। বাণিজ্যিক বরফ প্রস্তুতকারক সংস্থার একাধিক প্রতিনিধি তখন জানান, রং করলে যে জিনিস সংরক্ষণ করা হবে, তা খারাপ হয়ে যেতে পারে। তাই আলাদা রং করা উপযুক্ত হবে না। বরফ মালিকদের যুক্তি খণ্ডাতে অন্য কোনও মত দেননি বিশেষজ্ঞেরাও। তাতে আটকে যায় সেই উদ্যোগ। 

এ বারও বাণিজ্যিক বরফ শরবতে মিশিয়ে বিক্রির নমুনা পেয়েছে পুরসভা। এর মধ্যেই খবর আসে, মহারাষ্ট্র সরকার বাণিজ্যিক বরফ নীল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার পরেই ফের টনক নড়ে পুরসভার। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ফুড সেফটি কমিশন জানিয়ে দিয়েছে, বাণিজ্যিক বরফের রং নীল করতেই হবে। কী করে তা করা যাবে, তারও একটি সূত্র দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ইন্ডিগো কারমাইন নামে একটি রাসায়নিক ১০ পিএম পর্যন্ত মেশাতে হবে। তাতে বরফের রং নীল হয়ে যাবে। এর ফলে সাধারণ মানুষ সেই বরফ দেখেই বুঝতে পারবেন যে, তা খাওয়ার নয়। কলকাতা পুরসভা ওই নির্দেশ কার্যকর করতে তোড়জোর শুরু করে দিয়েছে।