মোটা মুনাফার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কলকাতায় কোটি টাকার প্রতারণা, অনলাইন চিটফান্ড!



সারদা-রোজভ্যালির দৌলতে চিট ফান্ড এখন আর নতুন কিছু নয় আমাদের কাছে। কিন্তু অনলাইন চিটফান্ড? অবাক হওয়ার কিছু নেই। তা-ও হাজির লোক ঠকাতে। খাস কলকাতারই এক বাসিন্দা জীবনের সব সঞ্চয় এই চিটফান্ডে খুইয়ে এখন হাত কামড়াচ্ছেন। পুলিশের দ্বারস্থ হয়েও এখনও হদিশ মেলেনি তাঁর টাকার।

কী ভাবে প্রতারণা?

আলিপুর থানা এলাকার ডায়মন্ড হারবার রোডের বাসিন্দা ৫৯ বছরের অজয় কুমার গুপ্ত। ২০১৬ সালে কলকাতারই বাসিন্দা সন্দীপ সিংহ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ হয় অজয় গুপ্তের। তার মাধ্যমেই যোগাযোগ সিঙ্গাপুরের সংস্থা ভ্যারিয়েবল টেক প্রাইভেট লিমিটেডের ডিরেক্টর অজয় ভরদ্বাজের সঙ্গে। অজয়কে বলা হয় সিঙ্গাপুরের ওই সংস্থা বিটকয়েন বা ভার্চুয়াল টাকার কারবার করে। এই সংস্থায় লগ্নি করলে মোটা মুনাফা পাওয়া যাবে।

কী রকম মুনাফা?

সারদা বা রোজ ভ্যালির ঢংয়েই এই সংস্থা বলে, লগ্নি করা টাকার দশ শতাংশ প্রতি মাসে ফেরত পাবেন লগ্নিকারী। অর্থাৎ আঠারো মাসের লগ্নির শেষে ফেরত ১৮০ শতাংশ। ২০১৬-র অক্টোবর থেকে ২০১৭-র জানুয়ারি পর্যন্ত দু'দফায় ৭৯ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ওই সংস্থায় লগ্নি করেন অজয়বাবু। বিনিময়ে পান ১৩৪টি বিটকয়েন। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি মাসে ১৩.৪টি করে অতিরিক্ত বিটকয়েন পাওয়ার কথা ছিল তাঁর। তার অর্থ, আঠারো মাসের শেষে লগ্নি করা ১৩৪টি ছাড়াও আরও ২৪২টি বিটকয়েন। প্রায় ৮০ লাখ টাকায় ১৩৪টি বিটকয়েন পাওয়ার মানে প্রতিটির দাম ৫৯ হাজার ৬০০ টাকা। অর্থাৎ, অজয়ের করা লগ্নির ৭৯ লাখ টাকার বাইরেও এক কোটি ৪৪ লাখ টাকা পাওয়ার কথা ছিল তাঁর। তিনি এই মোটা মুনাফার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন। কিন্তু স্বপ্ন ভাঙতে দেরি হল না যখন টাকা ফেরত পাওয়ার সময় এল।



অজয়ের দাবি, সেই সময়ে ওই কোম্পানি তাঁকে বিটকয়েনের পরিবর্তে ওই কোম্পানির নিজস্ব ডিজিটাল কয়েন এমসিএপিএস-এ ফেরৎ দেওয়ার কথা বলে। তখন বলা হয়েছিল প্রতিটি এমসিএপিএস-এর বাজারে দাম ২৭ ডলার। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, সেই কয়েনের বাজারে দাম এক ডলারেরও কম। তখনই তিনি বুঝতে পারেন, প্রতারণা করা হয়েছে তাঁকে। এর পরই কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। তদন্তের দায়িত্ব নেয় গোয়েন্দা বিভাগের স্পেশ্যাল সেল।

তদন্তে দেখা যায়, শুধু অজয় কুমার গুপ্তই নন, পুণে এবং দিল্লিতেও কয়েক হাজার মানুষকে ঠিক একই কায়দায় প্রতারণা করেছে এই সংস্থা। সংস্থার সিইও অমিত ভরদ্বাজ, পঙ্কজ আদালকা এবং হেমন্ত ভোপে এখন দিল্লি ও পুণে পুলিশের হেফাজতে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, অমিত ভরদ্বাজই হল এই চক্রের অন্যতম পাণ্ডা। কিন্তু তাকে গ্রেফতার করেও বাকি চক্রের হদিশ করতে পারেননি ভিন রাজ্যের তদন্তকারীরা। হদিশ মেলেনি প্রতারণার টাকারও। সেই অমিতকেই মঙ্গলবার নিজেদের হেফাজতে নিল কলকাতা পুলিশ। ধৃতের আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা জানিয়েছেন, "অমিত ভরদ্বাজের জন্য তিনি জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারকের এজলাসে। তিনি জামিনের আবেদন খারিজ করে দেন। ৮ জুন পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।" তদন্তকারীদের সন্দেহ, ঠিক একই ভাবে এই অনলাইন চিটফান্ড চক্র বিটকয়েন দিয়ে এই শহরের আরও বহু মানুষকে প্রতারণা করেছে।