পিএফ-এর তথ্য ফাঁসের আশঙ্কা!পরিষেবা বন্ধ করল কেন্দ্র


প্রভিডেন্ট ফান্ড দফতর থেকে আধারের তথ্য ফাঁসের অভিযোগ ঘিরে বিতর্ক ক্রমেই মাথাচাড়া দিচ্ছিল। সেই অভিযোগ অস্বীকার করলেও কমন সার্ভিস সেন্টার (সিএসসি)-এর মাধ্যমে পরিষেবা দেওয়া বন্ধ করে দিল পিএফ দফতর। গত ২২ মার্চ থেকেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে বলে সেন্ট্রাল প্রভিডেন্ট ফান্ড কমিশনার ভি পি জয় জানিয়েছেন। এর ফলে সিএসসি কেন্দ্র থেকে ডিজিটাল লাইফ সার্টিফিকেট জমা দেওয়া, আধার সংযুক্তিকরণ, আধার কার্ড সংক্রান্ত ত্রুটি সংশোধনের মতো কাজ আপাতত আর করতে পারবেন না পিএফ গ্রাহকেরা।

সিএসসি কেন্দ্রগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের বৈদ্যুতিন ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের অধীনে। বিভিন্ন পরিষেবা দিতে তারা একাধিক বেসরকারি সংস্থাকে লাইসেন্স দিয়েছে। সংস্থাগুলি গোটা দেশে বহু সিএসসি কেন্দ্র চালায়। সম্প্রতি অভিযোগ ওঠে, সিএসসি পরিষেবার অন্তর্গত 'আধার.ইপিএফওসার্ভিসেস.কম' ওয়েবসাইট থেকে প্রভিডেন্ট ফান্ডের গ্রাহকদের নানা তথ্য ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। প্রায় ২ কোটি ৭০ লক্ষ পিএফ গ্রাহকের তথ্য ফাঁস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পিএফ দফতর সূত্রে অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। তাদের তরফে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'তথ্য ফাঁস হয়েছে এ কথা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় এমন কোনও তথ্য বা ঘটনার কথা নজরে আসেনি।' সে ক্ষেত্রে সিএসসি কেন্দ্রগুলি মারফত  পরিষেবা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হল কেন? বিবৃতি বলছে, 'তথ্য নিরাপত্তার স্বার্থে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবেই সিইসি-র মাধ্যমে সার্ভার ও হোস্ট সার্ভিস বন্ধ রাখা হয়েছে। তথ্য ফাঁসের সম্ভাবনা খতিয়ে না দেখা পর্যন্ত এই সতর্কতা বহাল থাকবে।'

জয় আবার বলেন, ''সিএসসির মাধ্যমে যে পরিষেবা পিএফ গ্রাহকরা পেতেন, তা এখন পিএফের নিজস্ব পোর্টাল থেকেই পাওয়া যায়। তা ছাড়া, কেন্দ্রীয় সরকারের চালু করা অ্যানড্রয়েড প্রযুক্তিভিত্তিক 'উমঙ্গ' অ্যাপের সাহায্যে মোবাইল ফোনের মাধ্যমেও তাঁরা ওই সব পরিষেবা পেতে পারেন। তাই সিএসসি-র মাধ্যমে পিএফ সংক্রান্ত পরিষেবা চালু রাখার কোনও প্রয়োজন এখন নেই।''

পিএফ দফতরের একটি সূত্রের দাবি, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর (ইনটেলিজেন্স ব্যুরো বা আইবি) থেকেই তথ্য ফাঁসের আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে। সূত্রটি আরও জানাচ্ছে, এ নিয়ে পিএফ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রককে 'গোপন' চিঠি পাঠানো হয়েছে। বলা হয়েছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখে সম্ভাব্য প্রযুক্তিগত ত্রুটি সংশোধন করার জন্য। এ প্রসঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের এক আধিকারিক জানান, বিষয়টি তাঁরা খতিয়ে দেখবেন। কোনও ত্রুটি থাকলে অবশ্যই তা সংশোধনের জন্য পদক্ষেপ করা হবে।

পিএফ দফতর সূত্রের বক্তব্য, তথ্য কতটা ফাঁস হয়েছে, তা এখনও জানা যায়নি। তবে তথ্য ফাঁসের আশঙ্কা যে তৈরি হয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। পিএফ দফতরের ওয়েবসাইটে পিএফ গ্রাহকদের নাম, ঠিকানা, তাঁরা কোন কোন সংস্থায় কাজ করেছেন, কত টাকা পিএফ হিসেবে জমা দিয়েছেন— ইত্যাদি তথ্য জমা থাকে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, ওয়েবসাইটের তথ্য বিশ্লেষণ করে এক জন পিএফ গ্রাহক কত টাকা মাইনে পান তা জেনে যাওয়া সম্ভব। এমনকী, তিনি যদি পিএফ থেকে কখনও ধার নিয়ে থাকেন, তা হলে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর জেনে ফেলাও অসম্ভব নয়। কারণ, এখন ধারের টাকা সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ও সেই তথ্য ওয়েবসাইটে জমা থাকে।