আইএসসি ও আইসিএসইতে বাংলার জয়



কৌশিকী দাশগুপ্ত চৌধুরী

এ বারের আইসিএসই (দশম) এবং আইএসসি (দ্বাদশ) পরীক্ষার দু'টি সর্বভারতীয় মেধা-তালিকায় প্রথম তিনটি স্থানে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের ১১ জন। শুধু কলকাতা নয়, জেলার স্কুল থেকেও বেশ কয়েক জন উঠে এসেছেন ওই মেধা-তালিকায়। শিক্ষা শিবিরের একাংশের মত, এ রাজ্যে এমন ফল আগে কখনও হয়নি।

এই দুই পরীক্ষায় প্রথম তিনে রয়েছেন মোট ৪৯ জন। তাঁদের মধ্যে ১১ জন বাংলার। আইসিএসই-র তুলনায় আইএসসি-তে বাংলার ফল উজ্জ্বলতর। আইএসসি-তে অন্য ছ'জনের সঙ্গে প্রথম হয়েছেন পানিহাটির সেন্ট জেভিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের কৌশিকী দাশগুপ্ত চৌধুরী। তিনি পেয়েছেন ৯৯.৫০% নম্বর। দ্বিতীয় হয়েছেন ১৭ জন। তাঁদের মধ্যে আছেন মডার্ন হাইস্কুল ফর গার্লসের অস্মিতা সরকার, ব্যারাকপুরের মডার্ন ইংলিশ অ্যাকাডেমির জয়দীপ বসু এবং হাওড়া লিলুয়ার ডন বস্কো স্কুলের ঋষভ জালান (৯৯.২৫%)। তৃতীয় ২৫ জন। তাঁদের মধ্যে আছেন এ রাজ্যের পাঁচ জন: গার্ডেন হাইস্কুলের আদিত্য পাল, লা মার্টিনিয়ার ফর গার্লসের সুমেধা ঘোষ, পার্ক সার্কাস ডন বস্কো স্কুলের আর্যমান জৈন, মডার্ন হাইস্কুল ফর গার্লসের দীবীশা জায়সবাল এবং শিলিগুড়ি ডন বস্কো স্কুলের আমন চৌধুরী (৯৯%)।

আইসিএসই পরীক্ষায় প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে রাজ্যের কেউ না-থাকলেও তৃতীয় স্থানে রয়েছে কলকাতার হেরিটেজ স্কুলের স্পৃহা পাণ্ডে এবং কামারহাটির এরিয়ান্স স্কুলের অনুরাগ ঘোষ (৯৯%)। প্রথম হয়েছে নবী মুম্বইয়ের সেন্ট মেরিজ আইসিএসই স্কুলের স্বয়ম দাস।


এ বার আইসিএসই-তে পাশের হার ৯৮.৫১%। গত বার ছিল ৯৮.৫৩%। আইএসসি-তে পাশের হার এ বার ৯৬.২১%। গত বার ছিল ৯৬.৪৭%। বোর্ডের সচিব জেরি অ্যারাথুন জানান, এই দুই পরীক্ষাতেই ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীদের ফল ভাল হয়েছে। দেশের এবং বাইরের মোট ২০৬১টি স্কুলের এক লক্ষ ৮৩ হাজার ৩৮৭ জন আইসিএসই পরীক্ষায় বসেছিল। আইএসই পরীক্ষা দেন দেশ এবং দেশের বাইরের মোট ১০৩৪টি স্কুলের ৮০ হাজার ৮৮০ জন।

রাজ্যের ৩৫৯টি স্কুলের পড়ুয়ার বসেছিল আইসিএসই পরীক্ষায়। ২৪৬টি স্কুলের পড়ুয়ারা দিয়েছেন আইএসসি পরীক্ষা। ইদানীং কলকাতা ছাড়াও মফস্‌সলেও অভিভাবকদের মধ্যে ছেলেমেয়েদের আইসিএসই বা সিবিএসই বোর্ডের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ানোর প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। কলকাতার পাশাপাশি জেলার স্কুলও উঠে আসছে মেধা-তালিকায়।

রাজ্যের স্কুলগুলির এই উজ্জ্বল ফলের পরে মডার্ন হাইস্কুল ফর গার্লসের অধ্যক্ষা দময়ন্তী মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, আইসিএসই বোর্ডের পাঠ্যক্রম খুবই বিজ্ঞানসম্মত। তাই অভিভাবকেরা সন্তানদের এই বোর্ডের স্কুলে পড়াতে চাইছেন। ''শুধু বিজ্ঞান তো নয়, কলা এবং বাণিজ্য পাঠ্যক্রমকেও সমান গুরুত্ব দেয় এই বোর্ড। যে-পড়ুয়া পড়াশোনায় মনোযোগী, তার পক্ষে ভাল ফল করতে তাই অসুবিধা হয় না,'' বলছেন দময়ন্তীদেবী। আইএসসি-তে তাঁর স্কুল থেকে সর্বভারতীয় মেধা-তালিকায় ঠাঁই পাওয়া অস্মিতা আর দীবীশা দু'জনেই কলা বিভাগের।

পার্ক সার্কাস ডন বস্কো স্কুল থেকে আইএসসি-তে যুগ্ম ভাবে তৃতীয় স্থানে ঠাঁই পাওয়া আর্যমান বাণিজ্য শাখার পড়ুয়া। ওই স্কুলের অধ্যক্ষ বিকাশ মণ্ডলের মতে, উন্নত মানের পাঠ্যক্রমের পাশাপাশি রাজ্যের পড়ুয়াদের ভাল করার কারণ অবশ্যই তাদের পড়াশোনায় মনোযোগ। ''প্রতিযোগিতা বাড়ছে। পড়ুয়ারাও পড়াশোনা নিয়ে আগের থেকে বেশি মনোযোগী হচ্ছে। এটা খুব ভাল লক্ষণ,'' বলছেন অধ্যক্ষ। রাজ্যের আইসিএসই বোর্ডের স্কুলগুলির সংগঠন-সচিব সুজয় বিশ্বাস বলেন, ''ভাল ছেলেমেয়েরা এখন এই বোর্ডেই পড়তে চায়। পঠনপাঠনের মান এবং বিজ্ঞান-ভিত্তিক পাঠ্যক্রম এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করছে।''