গুলি-যুদ্ধ বিমানবন্দরে, ঘায়েল তিন ‘জঙ্গি’


গাড়িটাকে হাত দেখালেও দাঁড়াল না। দুই নিরাপত্তারক্ষীর পাশ দিয়ে হুশ করে পেরিয়ে গেল টোল প্লাজা।

টোল প্লাজার পরেই বাঁ দিকের রাস্তাটা চলে গিয়েছে টার্মিনালের দোতলার দিকে, ডিপারচার এলাকায়। আর ডান দিকের রাস্তাটা দু'ভাগ হয়ে একটি গিয়েছে টার্মিনালের একতলায় অ্যারাইভালের দিকে। অন্যটি গিয়েছে পার্কিং এলাকায়।

সোমবার সকালে কলকাতা বিমানবন্দরে ঢোকার মুখে টোল প্লাজায় নির্দেশ না মেনে গাড়িটি সোজা উঠে যায় ডিপারচারে যাওয়ার সেতুতে। টোল প্লাজার সামনে থাকা সিআইএসএফের দুই জওয়ান সঙ্গে সঙ্গে ওয়াকিটকিতে সতর্ক করেন সহকর্মীদের। সেতুটি ইংরেজি 'ইউ'-এর মতো বাঁক নিয়ে টার্মিনালের সামনে পৌঁছেছে। বাঁ দিকে প্রথমেই ১এ গেট। সেই গেটের আগে, বাঁকের মুখে সিআইএসএফের চৌকি। ভিতরে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল হাতে জওয়ান। চৌকির সামনে রাখা গার্ড রেল। যা দিয়ে আটকে দেওয়া যায় রাস্তা।

এ দিন ওয়াকিটকিতে বার্তা পেয়েই ওই চৌকির জওয়ানেরা সঙ্গে সঙ্গে গার্ড রেল দিয়ে আটকে দেন রাস্তা। মুহূর্তে নিয়ে নেন পজিশন। গাড়িটি ততক্ষণে চলে এসেছে চৌকির কাছে। বাধা পেয়ে গার্ড রেলের সামনেই দাঁড়িয়ে যায় সেটি। গাড়ি থেকে লাফিয়ে নেমে পড়েন তিন যুবক। পিঠে বড় ব্যাগ। হাতে একে ৪৭ এবং ৯ এমএম পিস্তল। গাড়ির আড়ালে গিয়ে তাঁরা গুলি ছুড়তে থাকেন। পাল্টা গুলি চালাতে শুরু করেন জওয়ানেরাও। ততক্ষণে খবর পেয়ে টার্মিনালের সামনে থেকে চৌকির সামনে চলে এসেছেন 'কুইক রিঅ্যাকশন টিম'-এর জওয়ানেরা।

সোমবার সকাল সাড়ে ১১টায় ওই গুলির লড়াই চলার সময়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় টার্মিনালের দোতলায় গাড়ি নিয়ে ওঠার একমাত্র রাস্তাটি। বিমান ধরতে আসা যাত্রীরা আটকে পড়েন টোল প্লাজার আগে। তবে, মিনিট সাতেকের মধ্যেই 'ঘায়েল' করে ফেলা হয় তিন জঙ্গিকে। তাঁদের দেহ যেখানে ছিটকে পড়ে, তার কাছেই পড়েছিল পিঠের দু'টি ব্যাগ। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কুকুর শুঁকে জানিয়ে দেয়, ব্যাগে বিস্ফোরক আছে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তার জন্য আনা আধুনিক 'মিনি রিমোটলি অপারেটেড ভেহিক্যাল'-এর সাহায্যে ব্যাগ দু'টিকে নিরাপদ দূরত্বে সরানো হয়। তার পরে যাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়া হয় রাস্তা।

আসল ঘটনা নয়, পুরোটাই মহড়া। কলকাতা বিমানবন্দরে আচমকা জঙ্গি হানা হলে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফ কতটা তৈরি, মূলত তা দেখার জন্যই এ দিন সকালের ঘটনাটি সাজানো হয়েছিল। জঙ্গি সেজেছিলেন যে তিন জন, তাঁরা বিমানবন্দরেরই নিরাপত্তারক্ষী। একটি গাড়ি করে তাঁরা কৈখালির দিক থেকে বিমানবন্দরে ঢোকেন। তাঁদের কাছে যে একে ৪৭ রাইফেল এবং ৯ এমএম পিস্তল ছিল, সেগুলি আসল হলেও গুলি ছিল নকল। ঘটনার সময়ে আসল গুলি-যুদ্ধের মতো ফট ফট শব্দ হলেও, গুলি বেরোয়নি। এই মহড়ার কথা জানা ছিল জওয়ানদেরও। ফলে যাঁদের পাল্টা গুলি করার কথা ছিল, তাঁদের বন্দুকেও ভরা ছিল নকল গুলি।

সিআইএসএফ সূত্রের খবর, বছরে এক বার এই ধরনের জঙ্গি হানার মহড়া হয় কলকাতায়। তা ছাড়াও সারা বছর ধরে বিস্ফোরক উদ্ধার, বিমান ছিনতাই, আত্মঘাতী হামলার মহড়াও হয়।