ঋতুস্রাবের ট্যাবু ভাঙতে সামিল তরুণরাও


পিরিয়ডস নিয়ে আমরা কী বলব? ওটা তো মেয়েদের বিষয়! এ ধরনের কথা বলে বা শুনে অভ্যস্ত? তা হলে আপনাদের পরিচয় করানো যাক খাস কলকাতারই একদল ছেলের সঙ্গে। কেউ স্কুলে পড়ছে, কেউ আবার কলেজ পড়ুয়া। বাঁধা গত থেকে বেরিয়ে পড়েছে ওঁরা ক'জন মিলে। পিরিয়ডসের 'ছুঁতমার্গ' কাটাতে যাঁরা পথে নেমেছেন শহরের অন্য মহিলাদের সঙ্গে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। 

বড়বাজারের চন্দ্রবর্ধন সিং ঋতুস্রাব সম্পর্কে প্রথম শুনেছিল দিদির কাছে। স্কুলে পড়ার সময়। দিদির কাছ থেকে মাসিকের খুঁটিনাটি জানতে প্রথমে স্বচ্ছন্দ বোধ করেনি চন্দ্রবর্ধনও। কিন্তু দিদির কথাগুলো অগ্রাহ্যও করতে পারেননি তিনি। মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্যবিদ্যার এই পড়ুয়ার কথায়, 'দিদির কথাগুলো আমার চোখ খুলে দিয়েছিল আক্ষরিক অর্থে। মহিলারা যখন আমাদের জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ, তখন তাঁদের জীবনের এত গুরুত্বপূর্ণ অংশটা আমরা কী ভাবে অবহেলা করতে পারি?' আর তাই মুম্বইয়ের 'মিউস' নামের যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত তিনি, সেই সংস্থা পিরিয়ডসকে উদ্‌যাপিত করার জন্য দেশের বিভিন্ন শহরে 'মাসিকা মহোৎসব' আয়োজন করতে শহরে ছুটে এসেছেন, এই কুসংস্কার ভাঙার লড়াইয়ে সামিল হতে। 

ক্লাস টুয়েলভের সনিত সিং, শুভম উপাধ্যায় কিংবা সদ্য কলেজ পাশ করা গৌতম ওঝাও শুক্রবার জোড়াসাঁকো লাগোয়া ঘিঞ্জি সিংহী বাগান বস্তিতে হাজির হয়েছিলেন একই উদ্দেশ্যে। শুভমের কথায়, 'বাড়িতে দিদি আর মাকে দেখতাম মাসের কিছু সময় হঠাৎ হঠাৎ করে পুজো করা বন্ধ করে দিতেন বা কিছু কিছু কাজে মানা করতেন। ছোটবেলায় বুঝতাম না ঠিক। কিন্তু পরে নিজেই এ সম্পর্কে পড়াশোনা করে জানতে পারি। এখন বাড়িতে মা-দিদির সঙ্গে এ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়। প্রয়োজনে ওদের ন্যাপকিন কিনেও এনে দিই।' 

সিংহী বাগান বস্তির প্রায় জনা পঞ্চাশেক মহিলার মন থেকে পিরিয়ডস সম্পর্কে ভুল ধারণা কাটাতে বস্তির মধ্যেই এক সচেতনতা প্রচার কর্মসূচি নিয়েছিল ওই সংস্থা। বয়ঃসন্ধির কিশোরী থেকে মেনোপজের দোড়গোড়ায় দাঁড়ানো মহিলারা উপস্থিত ছিলেন সেখানে। মধ্যবয়স্কা সরস্বতী শর্মার কথায়, 'আমরা তো ছোট থেকেই জেনে এসেছি, মাসিকের দিনগুলোয় আচারের বোতল ধরলে নাকি খারাপ হয়ে যায়। আজ দিদিদের থেকে জানলাম, দুটোর মধ্যে নাকি কোনও সম্পর্কই নেই।' কলেজ পড়ুয়া খুশবু রজকের কথায়, 'আমার যখন প্রথম পিরিয়ডস হয়, মা আমাকে কিছুই বলেনি। বন্ধুদের থেকে যেটুকু জেনেছিলাম, সেটা দিয়েই কাজ চালিয়েছিলাম। এখন কলেজে উঠে বুঝি, আমি কত কম জানতাম। আমার মনে হয়, আমাদের মায়েদের আরও বেশি জানা উচিত। এ ধরনের শিবির খুব সাহায্য করবে তাতে।' 

মাসিক নিয়ে আসল উৎসব অবশ্য পালন হবে ২৮ তারিখ, মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন দিবসে। এই বস্তিতেই। নেচে, গেয়ে, পথনাটিকার মাধ্যমে জীবনের অত্যন্ত স্বাভাবিক একটা প্রক্রিয়ার উদ্‌যাপন করবেন মহিলারা। সামিল হবেন চন্দ্রবর্ধনদের মতো জনাকয়েক পুরুষও। সাফল্য সেটাই।