সাপের জিভ কেন চেরা, সেই আশ্চর্য গল্প রয়েছে মহাভারতে।


সাপকে দেখলেই গা শিরশির। অথচ পৃথিবীতে যত প্রজাতির সাপের দেখা মেলে তার একটা বিরাট অংশই বিষহীন। আসলে সাপের প্রতি ভয়ের কারণ কেবল তার প্রাণঘাতী বিষ নয়, তার চিত্রবিচিত্র নকশা আঁকা শরীর, চেরা জিভ— সব মিলে এক রহস্যময় ভয়াল ছবি ফুটে ওঠা। সাপকে ঘিরে কিংবদন্তির শেষ নেই।

কোনও কোনও কিংবদন্তি লুকিয়ে রয়েছে মহাভারতের পাতাতেও। যেমন, সাপের জিভ কেন চেরা, সেই আশ্চর্য গল্পই রয়েছে মহাভারতে। 

আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই কাহিনি—
মহর্ষি কাশ্যপের তেরো পত্নীর অন্যতম কদ্রু। তিনি কাশ্যপের কাছে ১ হাজার নাগ-সন্তান প্রার্থনা করলেন। কাশ্যপের অন্য পত্নী বিনতাও বর চাইলেন, তবে মাত্র দু'টি সন্তানের। কিন্তু শর্ত দিলেন, সেই সন্তানেরা যেন কদ্রুর সন্তানদের থেকে ঢের বেশি বলশালী হয়।

কদ্রু জন্ম দেন ১ হাজার সাপের। কাশ্যপ-বিনতার দুই সন্তানের একজন গরুড়। অমৃত মন্থনের সময়ে যখন উচ্চৈশ্রবা নামের ঘোড়া উঠে আসছিল তখন কদ্রু ও বিনতার মধ্যে বাজি হয় ঘোড়ার লেজের রং নিয়ে। কদ্রু বলেন, সাপটির লেজ কালো। বিনতা বলেন, সাদা। ঠিক হয় যে বাজিতে হারবে, সে অন্যের দাসী হয়ে থাকবে।

কদ্রু তাঁর সন্তানদের বলেন, উচ্চৈশ্রবার লেজকে ঢেকে রাখতে, যাতে তা কালোই দেখায়। সর্প-পুত্রেরা তাই করেন। বাজিতে হেরে বিনতা কদ্রুর দাসী হন।

গরুড় তাঁর মা'কে মুক্ত করতে চাইলে কদ্রুর সর্প-পুত্ররা গরুড়কে বলেছিলেন যে, তিনি যদি তাঁদের জন্য অমৃত নিয়ে আসতে পারেন, তাহলে বিনতাকে মুক্তি দেওয়া হবে।

গরুড় অনেক সংগ্রাম করে অমৃত নিয়ে আসেন। তবে কদ্রুর সর্প-সন্তানদের তিনি শর্ত দেন, অমৃত অত্যন্ত পবিত্র বস্তু, স্নান করে শূচিশুভ্র হয়ে তবেই সেই অমৃত গ্রহণ করা যাবে। ততক্ষণ অমৃতের পাত্র রাখা থাকবে কুশ (তীক্ষ্ণ ধারবিশিষ্ট ঘাস) নির্মিত আসনের উপরে।

স্নানশেষে ফিরে সর্পকুল ফিরে এসে দেখল, অমৃত নেই! হতাশ হয়ে তারা কুশ-আসনটিই চাটতে লাগল। আর তার ফলেই তার জিভ দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল। সেই থেকে তাদের জিভ চেরা।

এই গল্পটা এখানেই শেষ হলেও, একটা ছোট্ট রহস্য বাকি রয়েছে। আসলে গরুড়ের এই যে অমৃত খাওয়ার আগে স্নান করার পরামর্শ, এর পিছনে ছিল তাঁর সঙ্গে ইন্দ্রের একটি অনবদ্য প্ল্যান। প্ল্যানটা এই— অমৃত দেখিয়ে বিনতার মুক্তি। তার পর সাপেদের নাগাল থেকে অমৃত নিয়ে পালাবেন দেবরাজ ইন্দ্র। কেননা, সাপেদের নাগালে অমৃত চলে গেলে মহা সর্বনাশ!

বিজ্ঞান অবশ্য বলছে, সাপ তার জিভ দিয়েই নিশ্বাস নেয়। পাশাপাশি, সাপের নাকে ঘ্রাণগ্রন্থি নেই। সে চেরা জিভ দিয়েই ঘ্রাণ নেয়। তাই তার জিভ চেরা। বিজ্ঞানের এই ব্যাখ্যার পাশেও কিন্তু টিকে থাকে মহাভারতের এই অনবদ্য উপাখ্যান। মহাকাব্যের গল্পের আকর্ষণ যে অনতিক্রম্য।