কলকাতার বাসে প্রকাশ্যে হস্তমৈথুন, প্রতিবাদী ছাত্রী পাশে পেলেন না কাউকে


বারো দিনের মাথায় ফের এক বার প্রকাশ্যে কলঙ্কিত হল কলকাতা!

গত ৩০ এপ্রিল রাতে মেট্রোর ভিতরে আলিঙ্গন করার 'অপরাধে' এক দল লোক চড়াও হয়ে এক যুগলকে মারধর করেন। কিন্তু শনিবার, শ্যামবাজারের কাছে চলন্ত বাসের মধ্যে প্রকাশ্যে হস্তমৈথুন করার পরেও কোনও প্রতিবাদ করতে দেখা গেল না কাউকে। বাসে থাকা দুই ছাত্রী চিৎকার করার পরেও কেউ এগিয়ে আসেননি বলে অভিযোগ। পরে তাদেরই এক জন ঘটনার ভিডিও তুলে পোস্ট করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। পরে পুলিশ তৎপর হয়ে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে।

প্রকাশ্যে আলিঙ্গনের 'শাস্তি' দিয়েছিলেন যখন কেউ কেউ, তখনই অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন, প্রকৃত 'অশালীন' ঘটনা ঘটলে এমন প্রতিবাদ দেখা যাবে তো? সেই সংশয়কে শনিবার সত্যি বলে প্রমাণ করল কলকাতা।

এ দিন হেদুয়া থেকে প্রাইভেট টিউশন নিয়ে দমদমের বাড়িতে ফিরছিলেন উত্তর কলকাতার একটি কলেজে পড়া বিএসসি দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী। ৩০বি/১ রুটের ওই বাসে এক বান্ধবীর সঙ্গে সামনের দিকের আসনেই বসেছিলেন তিনি। হঠাৎ এক ছাত্রীর নজরে পড়ে, পিছনের আসনে বসে থাকা এক প্রৌঢ় সহযাত্রী অদ্ভুত ভঙ্গিতে তাঁদের দিকে তাকিয়ে হস্তমৈথুন করছে। এ দিন ওই ছাত্রী আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলেন, ''দুপুর তখন ১২টা হবে। টিউশন নিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম। হাতিবাগান ঢোকার আগে হঠাৎ দেখি আমাদের দেখিয়ে দেখিয়ে ওই লোকটি অমন করছে। আমি চিৎকার করি। কেউ কোনও প্রতিবাদ না করায় ভিডিও করতে শুরু করি। তাতেও লোকটা থামেনি। আমার বন্ধুটি ভয় পাচ্ছিল। ও ভিডিও করতে বারণ করে। এর পর ভয় পেয়ে আমরা দু'জনে মিলে চিৎকার করি। কিন্তু বাসের কোনও যাত্রীই বিষয়টা নিয়ে এগিয়ে আসেননি।''

যাত্রীটি নেমে যাওয়ার পরে বাসের কন্ডাক্টরকে ওই ছাত্রী বিষয়টা চিৎকার করে জানান। কিন্তু, কন্ডাক্টরের জবাব শুনে আরও চমকে যান তিনি। তাঁর কথায়, ''কেউ কোনও প্রতিবাদ না করায় আমরা কন্ডাক্টরকে চিৎকার করে বলি। তিনি হেসে বলেন, 'কী করব বলুন! কার মনে কী আছে, কী করে বুঝব!' আমি চিৎকার করি, ওঁকে ধরুন। উনি আমাদের সঙ্গে অভদ্রতা করছেন। কিন্তু, কেউ আটকালো না। তার পর লোকটি নিজের আসন ছেড়ে উঠে যায়। বাস তখনও চলছে। শ্যামবাজার মোড়ের আগেই বাসটি একটু স্লো হতেই তিনি নেমে যান।''

ওই ছাত্রীর দাবি, এমনটা প্রথম বার নয়। এর আগেও একই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছেন ওই ব্যাক্তি। দিন ১৫ আগে ওই একই পথে ফেরার সময় এমনটা ঘটে। সে বার তিনি ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। তাই কাউকে কিছু বলতে পারেননি। এ বার সাহস করে ভিডিও করেছেন। ছাত্রীটির অভিযোগ, সে বার যৌনাঙ্গ বার করেই প্রকাশ্যে বাসের ভিতর হস্তমৈথুন করছিলেন এই একই ব্যক্তি।

ওই ছাত্রীর তোলা ভিডিও সমেত পোস্টটি এক জন নেটিজেন কলকাতা পুলিশের ফেসবুক পেজে পোস্ট করেন। সেখানে কলকাতা পুলিশের তরফে অভিযোগকারীকে ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে দ্রুত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। ওই ছাত্রী বলেন, ''আমি সঙ্গে সঙ্গে মেসেঞ্জারে ভিডিও এবং আমার অভিযোগ জানিয়েছি। এখনও কেউ কোনও যোগাযোগ করেননি। আমি শ্যামপুকুর থানায় লিখিত ভাবে অভিযোগও করছি।''

তবে এ দিন বিকালে কলকাতা পুলিশের ফেসবুক পেজে লেখা হয়েছে, 'এক ভদ্রমহিলা আমাদের পেজে একটি ভিডিও পোস্ট করে জানিয়েছেন বাসে এক পুরুষের চূড়ান্ত অশালীন অঙ্গভঙ্গির কথা। সেই পোস্টটির উল্লেখ করে অনেকে আমাদের মেসেজ করেছেন, করছেন, প্রতিকার চেয়ে। লিখিত অভিযোগের কোনও প্রয়োজন দেখছি না আমরা এই ক্ষেত্রে। তাঁর পোস্ট এবং ভিডিও দু'টিই যথেষ্ট। তার ভিত্তিতেই ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছি আমরা বিষয়টি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই। ওই পুরুষকে যত দ্রুত সম্ভব চিহ্নিত করে কঠোর আইনি ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি রইল।'

এর পরেই পুলিশ তৎপর হয়ে শ্যামবাজার থেকে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তির নাম অসিত রাই। বাড়ি হুগলির বৈদ্যবাটিতে। খবরটি কলকাতা পুলিশ তাদের ফেসবুক পেজেও পোস্ট করেছে।