বাঁধা ছিল সিটবেল্ট! বিমানে চাপিয়ে কীভাবে কলকাতায় আনা হয়েছিল হৃদযন্ত্র


বাক্সের ওজন ২০ কেজি। ভিতরে বরফ এবং বিশেষ ধরনের সংরক্ষণের কাজে ব্যবহৃত রাসায়নিকের মিশ্রণে ছিল সংগৃহীত হৃদ্‌যন্ত্র।

যত্ন: প্রতিস্থাপনের জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হৃদ্‌যন্ত্র। ফাইল চিত্র
প্রতিস্থাপনের জন্য দান করা হৃদ্‌যন্ত্র বেঙ্গালুরু থেকে বিমানে তোলা হয়েছিল যাত্রীর মতো টিকিট বুকিং করেই।  

বাক্সের ওজন ২০ কেজি। ভিতরে বরফ এবং বিশেষ ধরনের সংরক্ষণের কাজে ব্যবহৃত রাসায়নিকের মিশ্রণে ছিল সংগৃহীত হৃদ্‌যন্ত্র। তার জন্য টিকিট বুকিং করা হয়। সেখানে লেখা ছিল, 'হিউম্যান অরগ্যান-হার্ট। ডোনার-বরুণ'। যাত্রী হিসাবে তার টিকিট মেলে ৮ নম্বর সারির ডান দিকে মাঝের আসনে। নিয়ম মাফিক বিমানের ওই আসনে সিট বেল্টের বাঁধনেই কলকাতা বিমানবন্দরে প্রতিস্থাপনের জন্য পৌঁছয় বেঙ্গালুরুতে ব্রেন ডেথ হওয়া যুবক বরুণ ডি কে'র (১৮) শরীর থেকে সংগৃহীত হৃদ্‌যন্ত্র। 

সোমবার ইএম বাইপাসের আনন্দপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা দিলচাঁদ সিংহের শরীরে ওই হৃদ্‌যন্ত্র প্রতিস্থাপন করা হয়। 

এক চিকিত্সক জানান, একটি বেসরকারি বিমান সংস্থার তিনটি আসনের টিকিট কেনা হয়। দুই ট্রান্সপ্লান্ট কো-অর্ডিনেটর ধনরাজ এবং তন্ময়ের সঙ্গে হৃদ্‌যন্ত্রেরও টিকিট কাটা হয়। হৃদ্‌যন্ত্রের বাক্স মাঝের আসনে বসিয়ে তার দু'পাশে দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন ওই দুই কো-অর্ডিনেটর। 'ব্যুরো অফ সিভিল অ্যাভিয়েশনে'র বিশেষ অনুমতিতে এসব হয়। বিমান কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছনোর আগে প্রতিস্থাপনে যুক্ত এক চিকিত্সকের ফোন যায় 'এয়ারপোর্ট ম্যানেজারে'র কাছে। ওই চিকিত্সক বলেন, ''অনুরোধ করছি। প্রতিটি সেকেন্ড খুব মূল্যবান। সবচেয়ে প্রথমে আমাদের সংগৃহীত হৃদযন্ত্র নিয়ে নামার ব্যবস্থা করুন।'' চিকিত্সকের আবেদনে সাড়া দিয়ে ককপিটে খবর যায়। বিমান রানওয়েতে নামার পরই বিমানসেবিকারা ঘোষণা করেন, 'এক থেকে সাত নম্বর সারি পর্যন্ত কোনও যাত্রী উঠে দাঁড়াবেন না। ৮ নম্বর সারি থেকে নির্দিষ্ট তিনজন নামার পর বাকিরা নামবেন।' 

প্রতিস্থাপনে যুক্ত ওই হাসপাতালের কার্ডিও থোরাসিক ভাসকুলার সায়েন্স বিভাগের প্রধান তাপস রায়চৌধুরী বলেন, ''হৃদ্‌যন্ত্র সংরক্ষণের বাক্সটিকে খুবই যত্নের সঙ্গে 'হ্যান্ডেল' করা প্রয়োজন। সে জন্যই তা যাত্রীর মতো করে আনা হয়েছে। কারণ, ওই বাক্স কার্গোতে লাগেজ হিসাবে দেওয়া যাবে না। আবার 'ওভার হেড লাগেজ কাউন্টারে' ওই বাক্স ঢুকবে না। কেয়ার নিয়ে আনাটাই আসল বিষয়।''