মাওবাদী নেতাদের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির হদিশ পেলেন গোয়েন্দারা


প্রদ্যুমন শর্মা, সন্দীপ যাদব, সন্তোষ ঝা বা কুন্দন যাদব— এঁরা প্রত্যেকেই বিহার বা ঝাড়খণ্ডের মোস্ট ওয়ান্টেড মাওবাদী নেতা। সামাজিক ও অর্থনৈতিক শোষণের শিকার হয়ে এঁরা এক সময় যোগ দিয়েছিলেন সিপিআই(মাওয়িস্ট) পার্টিতে। হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন অর্থনৈতিক শোষণ ও অসাম্যের বিরুদ্ধে। এঁদের দেখেই অনুপ্রাণিত হয়ে মাওবাদী সংগঠনে নাম লিখিয়েছেন বিহার-ঝাড়খণ্ডের অসংখ্য তরুণ-তরুণী।

সম্প্রতি এ রকমই কয়েকজন মাওবাদী নেতার সম্পত্তির পরিমাণ দেখে তাজ্জব হয়ে গিয়েছেন স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্তারা। বিহার এবং ঝাড়খণ্ডের প্রায় ২৭ জন বিভিন্ন মাপের মাওবাদী নেতার সম্পত্তির হদিশ পেয়েছেন তাঁরা। যার মূল্য সব মিলিয়ে প্রায় একশ কোটি টাকা! কেউ দিল্লিতে ফ্ল্যাট কিনেছেন, কারও একাধিক এসইউভি, কেউ বা কিনে রেখেছেন একরের পর একর জমি। নগদ টাকাও কম পাওয়া যায়নি এঁদের কাছ থেকে। অথচ এঁরা প্রত্যেকেই খুব নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে এসেছেন। এই সম্পদের কোনওটাই তাঁদের পরিবার সূত্রে পাওয়া নয়, দাবি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আধিকারিকদের।

যেমন, প্রদ্যুমন শর্মা। সিপিআই(মাওবাদী) সংগঠনের মগধ বিশেষ জোনাল কমিটির শীর্ষ নেতা। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট(ইডি) বিহারের জেহানাবাদে তাঁর আটটি জমির হদিশ পেয়েছে। ২০১০-১৬ সালের মধ্যে এই জমি কেনা হয়েছে। যার দাম কমপক্ষে ৩২ লক্ষ টাকা। শুধু তাই নয়, প্রদ্যুমনের নিজের বাড়ির দামই প্রায় ৩৬ লক্ষ টাকা।

আর এক মাওবাদী নেতা সন্দীপ যাদব। সংগঠনের বিহার-ঝাড়খণ্ড আঞ্চলিক কমিটির নেতা তিনি। ঔরাঙ্গাবাদ ও গয়াতে তিনটি জমি ও একটি বাড়ি আছে তাঁর। দিল্লির দ্বারকা এলাকার স্মার্ট সিটি আবাসনে রয়েছে বিশাল ফ্ল্যাট। ব্যাঙ্কেও আছে প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা। মোট সম্পত্তির পরিমাণ কোটির কাছাকাছি।

মৃত্যুর আগে পর্যন্ত বিহার-ঝাড়খণ্ডে নিরাপত্তা বাহিনীর ত্রাস ছিলেন অরবিন্দ জি। আসল নাম দেব কুমার। মাওবাদী সংগঠনের সেন্ট্রাল কমিটির নেতা ছিলেন তিনি। সম্প্রতি তাঁর মৃত্যু হয়। এর পরই তাঁর স্ত্রী প্রভাবতী দেবীর কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে নগদ প্রায় ২৮ লক্ষ টাকা। বিহারেরই আরও এক মাওবাদী নেতা সন্তোষ ঝা ওরফে চন্দ্রশেখর। তাঁর আবার দু'টি ফ্ল্যাট রয়েছে কলকাতায়।

তেলঙ্গানার সত্য নারায়ণ রেড্ডি এবং লাতেহারের রোহিত যাদবের কাছ থেকে মিলেছে নগদ ৫০ লক্ষ টাকা। এ রকম কম বেশি সকলের কাছ থেকেই বিপুল সম্পত্তির হদিশ মিলেছে, যা এক জন মাওবাদী নেতা বা ক্যাডারের কাছে পাওয়াটা খুব অস্বাভাবিক।

শুধু সম্পত্তিই নয়, এঁদের অনেকের ছেলে-মেয়ে বা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়েন। যেমন সন্দীপ যাদবের ছেলে-মেয়ে দু'জনেই যথেষ্ট ব্যয়সাপেক্ষ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে। প্রদ্যুমনের ভাইজির লেখাপড়ায় খরচ হয় বছরে ১৭ লক্ষ টাকা। এঁদের সকলেরই ট্র্যাক্টর, জমি ছাড়াও আছে সেডান গাড়ি।

যাঁরা বছরের পর বছর পুলিশের খাতায় মোস্ট ওয়ান্টেড, যাঁরা জীবনের বেশি সময়টাই কাটিয়েছেন জঙ্গলে, তাঁরা এই বিপুল সম্পত্তি করলেন কী ভাবে?
গোয়েন্দাদের দাবি, বিহার-ঝাড়খণ্ডের খনি এলাকার ঠিকাদারদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা তোলা তোলে মাওবাদী সংগঠন। সেই টাকারই একটা বড় অংশ সংগঠনের তহবিল পর্যন্ত আদৌ পৌঁছয় না। টাকা তোলার দায়িত্বে থাকা স্থানীয় নেতারা সেই টাকারই একটা অংশ সরিয়ে ফেলে ব্যক্তিগত সম্পত্তি করেছে, দাবি গোয়েন্দাদের। এই সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে ইডি।