১৪ মে ভোট ঘিরে অনিশ্চয়তা, সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারে কমিশন-রাজ্য সরকার


পঞ্চায়েত ভোট কি ১৪ মে হতে পারবে? মঙ্গলবার দিনভর কলকাতা হাইকোর্টে পঞ্চায়েত ভোট সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলার শুনানির পরেও আদালত থেকে এ ব্যাপারে কোনও দিক্‌নির্দেশ মেলেনি। তবে রাজ্য সরকার মনে করে, ভোটের ঘোষিত দিন সম্পর্কে আদালত যে হেতু এ দিন আলাদা করে কিছু বলেনি, তাই ১৪ মে ভোট করতে বাধা নেই।

বিরোধীদের বক্তব্য অবশ্য ঠিক উল্টো। বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন মনোনয়নের সময়সীমার মধ্যে (অর্থাৎ ২৩ এপ্রিল বিকেল ৩টে) ই-মেলে পাঠানো সব মনোনয়ন গ্রহণ করার যে নির্দেশ দিয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ মে ভোট করা কার্যত অসম্ভব বলে মনে করছে তারা।

যদিও ওই রায়ের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন আজ বুধবারই সুপ্রিম কোর্টে স্পেশাল লিভ পিটিশন (এসএলপি) দাখিল করার কথা ভেবেছে। একই পদক্ষেপ করার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করছে রাজ্যও। সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা, সর্বোচ্চ আদালত যদি এসএলপি গ্রহণ করে তা হলে ডিভিশন বেঞ্চের এ দিনের নির্দেশ কার্যকর করার বাধ্যবাধকতা থাকবে না।

হাইকোর্টের প্রবীণ আইনজীবীদের একাংশ মনে করেন, ই-মেলে মনোনয়ন পেশ বৈধ বলে মানতে হলে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচনে নতুন করে প্রার্থী তালিকা তৈরি করতে হবে। সে ক্ষেত্রে যে সব গ্রাম পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা জিতে গিয়েছেন এবং জেতার শংসাপত্র পেয়ে গিয়েছেন, তাঁরা হাইকোর্টে পাল্টা মামলা করে তাঁদের জেতার পক্ষে রায় আদায়ের চেষ্টা করবেন। সেই সব মামলা দায়েরের সম্ভাবনা একেবারে নেই, তা বলা যায় না। ১৪ মে-র মধ্যে এত কিছু হওয়া সম্ভব নয়।

কমিশনের দফতরে ৬২টি ই-মনোনয়ন জমা পড়েছে। কিন্তু জেলার রিটার্নিং অফিসারদের কাছে কতগুলি ই-মনোনয়ন জমা পড়েছে, তার তালিকা কমিশনের কাছে নেই। তবে ই-মনোনয়ন নিয়ে উদ্ভূত সমস্যা মিটিয়ে ১৪ মে ভোট করতে কমিশন প্রস্তুত। কমিশনের এক কর্তার কথায়, ''শেষ পর্যন্ত ডিভিশনে বেঞ্চের রায় কার্যকর করতে হলে এই সমস্যাগুলোর কথা ভাবতে হবে। তা না হলে নির্দিষ্ট দিনে ভোট করতে আমরা প্রস্তুত।''

কিন্তু সিপিএমের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের বক্তব্য, আদালতের নির্দেশ মানতে হলে প্রার্থীদের মনোনয়ন গ্রহণ করে সেগুলির স্ক্রুটিনি এবং মনোনয়ন প্রত্যাহারের পরে প্রার্থীদের প্রচারের সুযোগ দিতে হবে। সেই সময় কোথায়? তিনি আরও জানান, ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য যদি আজ, বুধবারই সুপ্রিম কোর্টে যায়, তা হলে শীর্ষ আদালতকে হয় সঙ্গে সঙ্গে মামলাটি শুনতে হবে। নয়তো সুপ্রিম কোর্ট সব পক্ষকে হলফনামা দিয়ে শুনানির দিন ধার্য করবে। সে ক্ষেত্রে ১৪ মে ভোট হওয়া কঠিন।

কমিশন সূত্রে খবর, ভোটের পাঁচ দিন আগে জেলায়, বুথে চলে যেতে হয় কমিশনের পর্যবেক্ষকদের। কিন্তু ভোট নির্ধারিত দিনে হবে কি না, তা স্পষ্ট না হওয়ায় অনেক পর্যবেক্ষক জেলায় যাচ্ছেন না। যার অর্থ কমিশন মুখে নির্দিষ্ট দিনে ভোট করার কথা বললেও বাস্তবে তা সম্ভব কি না সে সংশয় তাদের নিজেদেরই রয়েছে।

সিপিএম নেতা রবীন দেবের প্রশ্ন, ''বহু জায়গায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা জয়ী হয়ে গিয়েছেন বলে শংসাপত্র দেওয়া হয়ে গিয়েছে। সেখানে কী করা হবে? কমিশনের কাছে তা জানতে চাই।'' রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ''ই-মনোনয়নের দাবি আমরাই প্রথম তুলেছিলাম। কোর্টের রায়কে স্বাগত।'' আর এক আবেদনকারী পিডিএস নেতা সমীর পূততুণ্ডের আশা, এর ফলে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অশান্তি কমানোর দিশা পাওয়া গেল। বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের আব্দুল মান্নানের বক্তব্য, '' আদালতকে ধন্যবাদ, তারা গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট হয়েছে।''

তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় রায় নিয়ে কিছু বলতে চাননি। তবে তাঁর বক্তব্য, ''যারা ২০০০ আসনে লড়াই করতে পারবে না, তারাই নির্বাচন পিছিয়ে দিতে বার বার আদালতে যাচ্ছে।''