মধুমিতার ঝুলন্ত দেহে লেখা, ‘আমার ডায়েরিটা দেখুন’!


দু'মাস আগে বিয়ে হয়েছিল। পছন্দমতো পণ না-মেলায় বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়িতে তাঁর উপরে অত্যাচার চলছিল বলে অভিযোগ। শনিবার সকালে হাওড়ার শ্যামপুরের কাঠিলাবাড় গ্রামের বাসিন্দা, মধুমিতা প্রামাণিক (২০) নামে ওই তরুণীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের সময়ে চমকে যায় পুলিশ। মধুমিতার বাঁ হাতে লেখা, 'আমার ডায়েরিটা দেখুন'!

তদন্তকারীদের অনুমান, নিজের আত্মঘাতী হওয়ার ইঙ্গিত এ ভাবেই দিয়ে গিয়েছেন ওই তরুণী। মৃতার বাবা অবশ্য খুনের অভিযোগ দায়ের করায় তার ভিত্তিতে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে মৃতার স্বামী নেপাল প্রামাণিক এবং ভাসুর গোপালকে। মধুমিতার বাবা, পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের বাসিন্দা ভরতচন্দ্র পড়্যার দাবি, ''শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতনের কথা মেয়ে নিজের ডায়েরিতেই সব লিখে গিয়েছে। পড়লেই জানা যাবে।''

দেহটি উদ্ধারের পরে বাড়ির পাশের পুকুরের পাঁক থেকে পুলিশ ডায়েরিটি উদ্ধার করেছে। তদন্তকারীরা জানান, স্ত্রীর মৃত্যুর পরে নেপাল ডায়েরিটি নষ্ট করার জন্য পুঁতে দেয় বলে জেরায় জানিয়েছে। ডায়েরিটি পরিষ্কার করে লেখা উদ্ধারের চেষ্টা হচ্ছে। তদন্তে তা কাজে আসবে। ঘটনায় মৃতার শাশুড়িও অভিযুক্ত। তিনি পলাতক।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দু'মাস আগে মধুমিতা-নেপালের বিয়ে হয়। নেপাল কাঠমিস্ত্রি। বিয়ের সময়ে মধুমিতার বাড়ি থেকে পণে নগদ টাকা এবং গয়না দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সোনার গয়না মধুমিতার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের পছন্দ হয়নি। অভিযোগ, সে জন্য প্রায়ই নববধূকে গঞ্জনা শুনতে হতো। এক সপ্তাহে আগে নেপালদের বাড়ি থেকে কিছু টাকা খোওয়া যায়। এ জন্য মধুমিতাকে সন্দেহ করেন শ্বশুরবাড়ির লোকেরা।

ভরতবাবুর অভিযোগ, ''ওই ঘটনায় মেয়েকে চোর অপবাদ দিয়ে গালিগালাজ করে ওরা। দু'দিন খেতে দেয়নি। বলা হয়, বাপের বাড়ি থেকে ৮০ হাজার টাকা না আনলে খুন করা হবে। মেয়েকে ওরা শ্বাসরোধ করে খুন করে দেহ ঝুলিয়ে দিয়েছে।''

এ দিন সকালে মেয়ের শ্বশুরবাড়ি থেকে ফোনে ভরতবাবুদের জানানো হয়, মধুমিতা আত্মঘাতী হয়েছেন। ভরতবাবুরা কাঠিলাবাড়ে এসে মধুমিতার ঝুলন্ত দেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠায়।