১০ বছরে ৬০ কোটি টাকার পচা মাংসের কারবার বিশুর


দক্ষিণ ২৪ পরগনা: গত দশ বছর ধরে শুধুমাত্র রাজ্যের বাইরে ভাগাড়ের মাংস পাঠিয়ে মুনাফা করেছে ৬০ কোটি টাকা। তদন্তকারীদের দফায় দফায় জেরার পর এমন কথা কবুল করেছে বিশ্বনাথ ঘোড়ুই। ভাগাড়ের মাংস কারবারের চাঁই বিশু এও জানিয়েছে, শহর কলকাতা ও সংলগ্ন কয়েকটি জেলার তুলনায় বাইরের রাজ্যে প্রক্রিয়াজাত ভাগাড়ের মাংসের বাজার খুবই ভালো। প্রতি মাসে এজন্য রাজাবাজারের কোল্ড স্টোরেজ থেকে ভিন রাজ্যে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার মাংস পাঠাতে হত। তদন্তকারী অফিসারদের কাছে বিশু এও কবুল করেছে, বাজারের পুরোটা কবজা করার জন্য হাওড়া, হুগলি, মেদিনীপুরে নতুন নতুন ভাগাড়ের দিকে নজর দিয়েছিল সে। তদন্তকারী অফিসারদের জেরায় বিশু বলেছে, গত ১০ বছর ধরে প্রতি মাসে এই পরিমাণ মাংস পাঠিয়ে তার কারবার হয়েছে ৬০ কোটি টাকারও বেশি। ইতিমধ্যে বিশুর একাধিক ব্যাঙ্ক আকাউন্ট ঘেঁটে বিষয়টি যাচাইয়ের কাজ শুরু করেছে পুলিস।

ডায়মন্ডহারবার জেলা পুলিসের এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কলকাতায় কোন কোন হোটেল ও রেস্তরাঁতে এ যাবৎ সে মাংস পাঠিয়েছে। তার উত্তরে বিশু জানিয়েছিল, কলকাতা ও সংলগ্ন জেলায় হোটেল ও রেস্তরাঁতে মাংস দেওয়ার কাজ করে লিঙ্কম্যানরা। তারাই পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। সে এর কিছুই জানে না। কিন্তু পুলিস তা বিশ্বাস করেনি। শেষ পর্যন্ত তার মুখ খোলানোর জন্য ভাগাড় কাণ্ডের কিংপিন সানি মল্লিক, উত্তর ২৪ পরগনার মাংস টাইকুন শরাফত হোসেন সহ আরও একজন লিঙ্কম্যানকে বিশুর সামনে বসিয়ে জেরা করা হয়। তাতে সানি মল্লিক ও শরাফত বিশুর দশ বছরের মাংস কারবারের গোপন তথ্য দেওয়ার পর সে মুখ খুলতে বাধ্য হয়।

বিশ্বনাথ স্বীকার করে নেয়, রাজাবাজারের হিমঘর থেকে কলকাতা ও রাজ্যের বাইরে মাংস পাঠানো হত। কলকাতার কোথায় কোথায় দেওয়া হত, সেই সব সম্ভাব্য জায়গার নামও সে পুলিসকে বলে দেয়। জেরাতেই মাংস কারবারের চাঁই জানিয়ে দেয়, কলকাতা ও সংলগ্ন জেলায় এর চাহিদা যতটা তার চেয়ে চার গুণ ভিন রাজ্যে। তার উদাহরণ দিতে গিয়ে সে জানায়, রাজাবাজার হিমঘর থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া কুড়ি টন ভাগাড়ের মাংসের পাঁচ টন কলকাতা ও জেলায় পাঠানোর জন্য রাখা হয়েছিল। বাকি ১৫ টন রাজ্যের বাইরে যেত। সেই হিসেবে ভিন রাজ্যে প্রতি মাসে একহাজার টন মাংস পাঠাতে হত। যদিও সেই সব রাজ্যগুলির নাম খোলসা করেনি বিশু। এত মাংস ক'টা ভাগাড় থেকে জোগাড় হত? বিশুকে জেরার সময় এই প্রশ্ন করেছিলেন বজবজ থানার তদন্তকারী অফিসাররা। তাতে বিশু জানিয়েছে, উত্তর ও দক্ষিণ ছাড়াও হাওড়া ও হুগলির সব মিলিয়ে ২৫টির বেশি ভাগাড় থেকে এই পরিমাণ পচা মাংস আসত। বিশু পুলিসকে জানিয়েছে, ভাগাড়ের মাংসের সাপ্লাই লাইন এতটাই ভালো দেড়দিনে দেড় টন মাংস জোগাড় করে দিতে পারত।

এদিকে, ভাগাড় কাণ্ডের পর নড়েচড়ে বসেছে পুরসভাগুলি। বজবজ ভাগাড় থেকে পচা মাংস নিয়ে যাওয়া সময় প্রথম বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। সেই পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান গৌতম দাশগুপ্ত বলেন, ওই ঘটনার পর ভাগাড়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ভাগাড়ে আগেই পাঁচিল দেওয়া ছিল। এবার সেখানে সিসি টিভি বসানো হল। চেয়ারম্যান পল্লব দাস বলেন, নজরদারির জন্য তিনটি শিফটে জঞ্জাল বিভাগের কর্মীদের রাখা হয়েছে।