নিগৃহীত নারীদের ক্ষতিপূরণে নতুন প্রকল্প চালুর নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের


বিবিধ অপরাধের শিকার যাঁরা , তাঁদের সহায়তায় চালু ভিক্টিম কমপেনসেশন স্কিমের আওতায় নিগৃহীত নারীদের জন্য পৃথক প্রকল্প অনুমোদন করল সুপ্রিম কোর্ট৷ ১১ মে সর্বোচ্চ আদালতে বিচারপতি মদন বি লোকুর ও বিচারপতি দীপক গুন্তের সামাজিক ন্যায় বেঞ্চ ন্যাশনাল লিগাল সার্ভিসেস অথরিটি -র (এনএলএসএ ) প্রস্তাব অনুমোদন করে কেন্দ্রের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রককে দু'সন্তাহের মধ্যে প্রতিটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্যসচিবকে এই প্রকল্প জানানোর নির্দেশ দিয়েছে৷ অনতিবিলম্বেই নতুন হারে ক্ষতিপূরণ চালু করতে হবে প্রতিটি রাজ্যকে৷ জীবনহানিতে ক্ষতিপূরণ ধার্য হয়েছে ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকা (আগে ছিল ২ লক্ষ)৷ 

গণধর্ষণের শিকার যাঁরা , তাঁদের ক্ষেত্রেও ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকা৷ ধর্ষণ ও অস্বাভাবিক যৌন নির্যাতনে ৪ থেকে ৭ লক্ষ টাকা (আগে ধর্ষণে ক্ষতিপূরণ নির্দিষ্ট ছিল ৩ লক্ষ টাকা)৷ 

অঙ্গহানিতে ৮০ শতাংশ শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় ২ থেকে ৫ লক্ষ টাকা, ৪০ থেকে ৮০ শতাংশ প্রতিবন্ধকতায় ২ থেকে ৪ লক্ষ , ২০ থেকে ৪০ শতাংশে ১ থেকে ৩ লক্ষ , ২০ শতাংশের কমে ১ থেকে ২ লক্ষ টাকা (সব মিলিয়ে আগে ছিল ১ থেকে ২ লক্ষ টাকা)৷ গুরুতর শারীরিক বা মানসিক আঘাতে ১ থেকে ২ লক্ষ টাকা, ভ্রুণ নষ্টে ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা (আগে ছিল ৫০ হাজার টাকা), ধর্ষণের ফলে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকা, অগ্নিদগ্ধ হয়ে বা অ্যাসিড আক্রমণে শারীরিক ক্ষতির বিভিন্ন স্তরে ন্যূনতম ২, ৩ , ৫ , ৭ লক্ষ টাকা থেকে ৮ লক্ষ টাকা (আগে ছিল ২-৩ লক্ষ টাকা)৷ সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছে , নতুনহারের চেয়ে কম ক্ষতিপূরণ কোনও অবস্থাতেই গ্রাহ্য হবে না৷ তবে যে কোনও রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এর চেয়ে বেশি আর্থিক ক্ষতিপূরণ বা পুনর্বাসনে আরও কোনও ব্যবস্থা করতে পারে৷ 

সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশেই এনএলএসএ বিশেষ কমিটি গঠন করে বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে কথা বলে৷ তার পরেই প্রস্তাব চড়ান্ত করে গত ২৪ এপ্রিল আদালতে পেশ করে৷ তাতে সম্মতি দিয়ে আদালত ক্ষোভের সঙ্গে জানিয়েছে , ভিক্টিম কমপেনসেশন স্কিমে কত জনকে কী ভাবে সহায়তা করা হয়েছে --অতীতে একাধিক বার হলফনামা তলব করা সত্ত্বেও ২৪টি রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গত ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত কোনও জবাবই দেয়নি৷ সে তালিকায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গও৷ কোর্ট নতুন প্রকল্পের অগ্রগতিতে নজর রাখবে৷ ২৫ জুলাই হবে পরবর্তী শুনানি৷ এমনিতে অপরাধীর সাজা বা খালাসের ছকে বন্দি ফৌজদারি বিচারব্যবস্থায় 'ভিক্টিম ' বা তাঁর পরিজন থেকে যান অন্তরালেই৷ অথচ , তাঁদের দুর্দশা লাঘবও ন্যায়বিচারের গুরুত্বপূর্ণ শর্ত৷ 

১৯৮৫ -র ২৯ নভেম্বর রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদ সেই লক্ষ্যেই ফৌজদারি আইনে 'ভিক্টিম '-এর পুনর্বাসন -ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল৷ সেই মতো ২০০৮ -এ ভারতের আইন কমিশন ফৌজদারি কার্যবিধিতে ৩৫৭ ধারার পরে একটি উপধারা সংযোজনের সুপারিশ করে (৩৫৭এ )৷ সংসদে অনুমোদন এবং রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর ২০০৯ -এর জানুয়ারিতে সেই সুপারিশ আইনে পরিণত হয়৷ সেই মতো রাজ্যগুলিকে ভিক্টিম কমপেনসেশন স্কিম তৈরি করতে বলে কেন্দ্র৷ এ ব্যাপারে কেন্দ্র তহবিলে অর্থ বরাদ্দেও প্রতিশ্রীতিবদ্ধ৷ ২০১২ -র ৮ নভেম্বর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ওই স্কিমের গেজেট বিজ্ঞন্তি জারি করে৷ কিন্ত্ত বাস্তবে পুনর্বাসন -ক্ষতিপূরণের পরিস্থিতি যে করুণ , তা বহুবারই আলোচনায় উঠে এসেছে৷ এ রাজ্যেই যেমন , ২০১২ থেকে ১৬ পর্যন্ত বরাদ্দ হয়েছিল মাত্রই ৫০ লক্ষ টাকা৷ পরে ২ কোটি টাকা৷ বহু ক্ষেত্রেই ক্ষতিপূরণ আদায়ে মামলা করতে হচ্ছে৷ নতুন প্রকল্পে সরাসরি স্টেট লিগাল সার্ভিসেস অথরিটি (এসএলএসএ ) বা ডিস্ট্রিক্ট লিগাল সার্ভিসেস অথরিটি -র (ডিএলএসএ ) কাছে নির্দিষ্ট ফরমে আবেদন করতে পারবেন ক্ষতিগ্রস্তরা৷