এ দেশে রোজ নিঃখোঁজ হচ্ছে ১৭৪ জন শিশু, মিলছে না সন্ধান বেশিরভাগের !

নয়াদিল্লি: সবে স্বপ্ন দেখা শুরু হয়েছিল আইমোল (কাল্পনিক নাম) পরিবারের ৷ পরিবারের সদস্যরা ভেবেছিলেন এবার হয়তো সুখের সকাল দেখবে এই পরিবার ৷ কিন্তু সিঙ্গাপুর থেকে আসা একটা ফোন যেন এক নিমেষেই সব স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করে দিল ৷

জুলি, চাকরির আশায় এক এজেন্টকে ধরে মণিপুর থেকে পাড়ি দিয়েছিল মায়ানমার ৷ কিন্তু সেই এজেন্ট জুলিকে যে কাগজপত্র দিয়েছিল, তা ছিল সিঙ্গাপুরের ! জুলিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সিঙ্গাপুরের এক হোটেলে ৷ জুলি সাহস করেছিল ৷ সুযোগ বুঝে ফোন করেছিল তাঁর পরিবারের লোকজনকে ৷ জুলির পরিবার বুঝেই উঠে পারছিলেন না এই সময় কী করা উচিত ৷ এই সময়ই জুলির পরিবারের পাশে এসে দাঁড়ায় Manipur Alliance For Child Rights (MACR)এর এক সদস্য ৷ তাঁর হাত ধরেই দ্রুত শুরু হয় জুলিকে উদ্ধারের কাজ ৷ মণিপুর রাজ্য সরকার যোগাযোগ করে ইনানগন পুলিশের সঙ্গে ৷ এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় ৬ জনকে ৷ উদ্ধার হয় জুলি ৷ সঙ্গে উদ্ধার হয় আরও কিছু শিশু ৷

কেইশাম প্রদীপকুমার, মণিপুর কমিশন ফর প্রোটেকশন ইফ চাইল্ড রাইটসের সদস্যের মুখেই উঠে আসে জুলির এই ঘচনার কথা ৷ প্রদীপ কুমার জানান, 'দিন দিন মণিপুর হিউম্যান ট্র্যাফিকিংয়ের আখড়া হয়ে উঠেছে ৷ এমনকী, এই রাজ্যকে ব্যবহার করা হচ্ছে সীমান্ত পার করার পথ হিসেবে ৷ এই বিষয়টি সত্যিই খুবই গুরুত্বপূর্ণ মণিপুর রাজ্যের কাছে ৷ '
পরিবারের কাছে ফিরে এসে জুলি জানান, 'আমি পরিবারের কাছে ফিরে আসতে পেরেছি ৷ দ্বিতীয় সুযোগ পেয়েছি৷ তবে এখনও দুঃস্বপ্ন আমাকে পিছু করে ৷ আমার মতো ভাগ্যবান হয়তো সবাই নয় ৷ এখনও তো অনেকে নিঃখোঁজ ! পরিবার থেকে দূরে ৷'

জুলির কথার রেশ ধরে বলা যায়, ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর রিপোর্টে দিকে নজর দিলে দেখা যায়, ২০১৬ সালে এক লাখের থেকে বেশি মিসিং ডায়েরি জমা পড়েছে ৷ তার মধ্যে ৫৫,৬২৫ সংখ্যক হারিয়ে যাওয়া শিশুর সন্ধান মেলেনি ৷ ২০১৬ সালের পরিসংখ্যান বলছে, ১৭৪ জন শিশু প্রতিদিন নিঃখোঁজ হচ্ছে এ দেশে ৷

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর রিপোর্ট অনুযায়ী, গোটা দেশের মধ্যে পাঁচটি রাজ্যেই সব থেকে বেশি নিঃখোঁজ হয় ৷ যার মধ্যে প্রথম স্থানেই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ ৷ তার পরে দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র এবং বিহার ৷ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে নিখোঁজের হার ১৩.১৪ শতাংশ, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র এবং বিহারে ১০.৮ শতাংশ, ৮.৯ শতাংশ, ৫.২ শতাংশ ৷
CRY-এর সিইও পূজা মারওয়ার কথায়, 'এই ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক, যে আমাদের শিশুরা এভাবে নিঃখোঁজ হয়ে যাচ্ছে ৷ আর আমরা তাঁদের ফিরিয়ে আনতে পারছি না ৷ এই পরিসংখ্যান বলছে দেশের বেশ বড়মাপের শিশু, নারী পাচার চক্র চলছে ৷ যার হাত ধরেই শিশু, নারীরা পাচার, নিখোঁজ কিংবা কিডন্যাপ হচ্ছে ৷ '

পূজা আরও জানান, 'এই বিষয়টি নিয়ে দ্রুততায় কাজ করা শুরু করা উচিত ৷ তৃণমূল স্তর থেকেই জানতে হবে, এর পিছনে কীভাবে অর্থনৈতিক, সামাজিক অবস্থান কাজ করছে ৷ মানুষজনকে আরও বেশি সচেতন করে তুলতে হবে ৷ সজাগ থাকতে হবে ৷ এর জন্য প্রয়োজনে বিশেষ ট্রেনিংয় দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে ৷ এই নিখোঁজের ঘটনা, শুধমাত্র একটা সংখ্যা নয় ৷ আমাদের সমাজের কাছে হারিয়ে যাওয়া শিশুজীবনের এক দুঃস্বপ্নও ৷ '