দুরারোগ্য চিকিত্‍সায় নয়া দিশা কলকাতার বিজ্ঞানীর


ডেঙ্গিতে গত এক বছরের মৃত্যুর সংখ্যাটা কত? রাজ্য সরকারের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী সংখ্যাটা ১০-এর মধ্যে। কিন্তু বেসরকারি মতে সংখ্যাটা ১০০ ছুঁয়ে গিয়েছে। ক্যানসারের আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর দিকে তিল তিল করে এগিয়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যাটাও কম নয়। গুণতে বসলে নিজেদেরই অবাক হতে হবে। এখন প্রচুর শিশুই ডিসট্রোফি নামে টিস্যুর এক গুরুতর রোগে আক্রান্ত। এতে শিশুদের শরীরের মাসল তৈরি হয় না। ফলে, শরীরটা একটা মাংসপিণ্ডের মতো হয়ে যায়। বলতে গেলে এমন এক পরিস্থিতিতে এক নতুন আশার আলো জাগিয়েছেন কলকাতার ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়ান্সেসের বিজ্ঞানী ডক্টর সুরজিৎ সিনহা।


জিন থেরাপি-তে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছেন সুরজিৎ। যার দৌলতে যে কোনও রোগের জিনকে চিহ্নিত করে তার পার্সোনালাইজড মেডিসিন তৈরি সম্ভব। এই পার্সোনালাইজ মেডিসিন তৈরি নিয়ে বিশ্বজুড়ে বহুদিন ধরে গবেষণা চলছে। ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়ান্সেসের অর্গানিক কেমিস্ট্রি বিভাগের প্রধান ও প্রোফেসর ডক্টর সুরজিৎ সিনহা দীর্ঘদিন ধরে জিন থেরাপি-র উপরে কাজ করছেন। এই ধরণের গবেষণা চালাতে গেলে যে ধরণের পরিকাঠামো এবং সাহায্য লাগে তা না পেলেও চেষ্টা থামাননি সুরজিৎ। কলকাতার বুকে থেকেই জিন থেরাপির উপরে নিরন্তর কাজ করে গিয়েছেন। আর এভাবেই আবিষ্কার করে ফেলেছেন এমন এক মলিকিউলের-যার মাধ্যমে পার্সোনালাইজড মেডিসিন তৈরি করা সম্ভব।
 
ওয়ান ইন্ডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্রোফেসর সুরজিৎ সিনহা জানান, 'যে কোনও রোগের মূলেই থাকে জিন। প্রথমে খুঁজে বের করতে হবে ক্ষতিগ্রস্ত জিনটিকে। এরপর তার চরিত্র বিশ্লেষণ করে পার্সোনালাইজড মেডিসিন তৈরি করে নিলেই রোগ নিরাময় সম্ভব। এই পার্সোনাইলজড মেডিসিন তৈরি করতে যে মলিকিউল তৈরি করতে হয় সেটাই আমি বের করেছি। অবশ্য আমেরিকার সারেপটা থেরাপেটিকও পার্সোনালাইজড মেডিসিন তৈরির মলিকিউল আবিষ্কার করেছে। বিশ্বজুড়ে এই মুহূর্তে আমি ও সারেপটা থেরাপেটিক জিন থেরাপি-তে এই পার্সোনালাইজড মেডিসিন তৈরির পেটেন্ট পেয়েছি।'

প্রায় ৮ বছর ধরে পার্সোনালাইজড মেডিসিন তৈরির মলিকিউল তৈরি নিয়ে লড়াই চালিয়েছেন সুরজিৎ। অবশেষে পেটেন্ট অফিস অফ আমেরিকা থেকে মিলেছে পেটেন্টের সত্ত্ব। দিন কয়েক আগেই এসে পৌঁছেছে পেটেন্টের সেই সার্টিফিকেট। তবে, আশার আলো জ্বালিয়েও কিছুটা হতাশ সুরজিৎ। কারণ, তাঁর বের করা মলিকিউল থেকে পার্সোনালাইজড মেডিসিন তৈরির জন্য যে পরিকাঠামো দরকার তা তাঁর কাছে এই মুহূর্তে নেই। বহু সংগঠন ইতিমধ্যেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এই পার্সোনালাইজড মেডিসিন তৈরির জন্য। কিন্তু, সেভাবে কোনও ফার্মাসিউটিক্যাল কম্পানি যোগাযোগ করেনি। সবচেয়ে বড় কথা আমেরিকার সারেপটা থেরাপেটিক বলে যে সংস্থা এই পার্সোনালাইজড মেডিসিন তৈরি করছে তারা এই মুহূর্তে ডিসট্রোফি-র উপরে কাজ করছে। কিন্তু, ভারতে সেই ওষুধ আনতে গেলে কোটি টাকার কাছে তার দাম। সুরজিৎ জানিয়েছেন সেই একই ওষুধ তিনি কলকাতায় বসে বানাতে পারেন। এর দাম পড়বে অতি সামান্য। কিন্তু, পরিকাঠামো না পেলে যে তা সম্ভব নয় নিজেই জানিয়েছেন তিনি।

এই পার্সোলাইজড মেডিসিনের জাদু এটাই যে বাজার চলতি কোনও জেনরিক ওষুধের উপরে আর নির্ভর করতে হবে না, শুধু ক্ষতিগ্রস্ত জিনটাকে চিহ্নিত করে তার মতো করে ওষুধ বানিয়ে নিলেই হল। এর ফলে ডেঙ্গি থেকে শুরু করে ক্যানসারের চিকিৎসাকে আরও সুনির্দিষ্ট দিশা দেওয়া সম্ভব বলেও জানিয়েছেন সুরজিৎ। একটা সময় নাসার বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের সঙ্গে কাজ করেছেন সুরজিৎ। কলকাতার বুকে থেকে গবেষণা করতে চান বলে আমেরিকার থেকে ফিরে এসেছিলেন বীরভূম লাভপুরের ছেলে সুরজিৎ।

তাঁর মতে, ডেঙ্গি ভাইরাস বাহিত মশা বারবার জিন বদলে ফেলছে। ফলে বারবার ফিরে আসছে ডেঙ্গি। কিন্তু ডেঙ্গি ভাইরাস বাহিত মশাদের জিন বিশ্লেষণ করে পার্সোনালাইজড মেডিসিন তৈরি করে নেওয়া যেতে পারে। এর ফলে ডেঙ্গির প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ করার অনেক সহজ হয়ে যাবে। এমনকী, ডেঙ্গি ভাইরাসকে সাময়িকভাবে নির্মূলও করা যেতে পারে।