পায়ে লিখে কলেজে, স্বপ্ন দেখেন চাকরির


বৃষ্টি হলে ছাতাটুকুও ধরতে পারেন না তিনি। রোজকার সাধারণ কাজেও ভরসা মা। পোলিও আক্রান্ত দুর্বল দুই হাতে এমন জোর নেই যে পেন ধরে লিখবেন। কিন্তু মনের জোর? সেই জোর অসীম। আর তার সামনেই তুচ্ছ হয়ে গেছে অনেক বাধা।

তিনি সাবানা ইয়াসমিন। মধ্যমগ্রাম বিবেকানন্দ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। পার্ট টু পরীক্ষা দিচ্ছেন পা দিয়ে লিখে।

ছোটবেলায় পোলিওয় আক্রান্ত হয়েছিলেন সাবানা। দুর্বল হয়ে পড়ে দু'টি হাতই। আর পাঁচটা শিশু যখন  স্কুলে যাচ্ছে, তখন সাবানার কথা ভাবেননি তাঁর মা-বাবা। দুই হাতেই যার জোর নেই, কী ভাবে লেখাপড়া করবে সে? কিছু দিন পরে তাঁরা দেখেন, পা দিয়েই পেনসিল আঁকড়ে লিখছেন সাবানা। বারাসতের কৃষ্ণমাটির বাসিন্দা সাবানাকে তখন ভর্তি করানো হয় স্কুলে। সেই শুরু। এর পরে আর থামেননি দৃঢ়চেতা মেয়েটি। পা দিয়ে লিখেই পৌঁছে গিয়েছেন কলেজ পর্যন্ত। উচ্চ মাধ্যমিকে পেয়েছিলেন ৫৫ শতাংশ নম্বর।

এর পরে জেনারেল কোর্সে বাংলা, ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে ভর্তি হন কলেজে। এ বছর পরীক্ষা দিতে যাচ্ছেন বারাসত রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। মেঝেয় শতরঞ্চি পেতে সাবানার বসার ব্যবস্থা হয়েছে। তবে পরীক্ষায় অতিরিক্ত সময় নিচ্ছেন না তিনি। নির্দিষ্ট সময়েই উত্তরপত্র জমা দিচ্ছেন।

এই লড়াইয়ের কথা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদের থেকে জানতে পারেন উপাচার্য বাসব চৌধুরী। তিনি ডেকে পাঠান সাবানার অভিভাবককে। বৃহস্পতিবার সাবানার মা দেখা করেন তাঁর সঙ্গে। উপাচার্য জানিয়েছেন, পড়াশোনার বিষয়ে সাবানার যাবতীয় দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় নেবে। এ দিন বাসববাবু বলেন, ''এত সংগ্রাম করে যিনি পড়াশোনা করছেন, তাঁর পাশে বিশ্ববিদ্যালয় সব সময়ে থাকবে।''

এ দিন সাবানা বলেন, ''রোজ কলেজে যেতে পারি না। যে দিন যাই, মা সঙ্গে যায়। অন্যদের সাহায্য নিয়ে বাসে তোলে। ক্লাসে তো মা ঢুকতে পারে না। তখন সহপাঠীরা সাহায্য করে।'' বছর দুয়েক আগে সাবানার বাবার মৃত্যু হয়েছে। বাড়িতে আছেন মা, দাদা এবং এক ভাই। ভাই নবম শ্রেণীর ছাত্র। বাবা গাছ কাটার কাজ করতেন। দাদাও তাই করেন।

লড়াকু মেয়ের পাখির চোখ এখন বিএ পাশ করে একটা চাকরি। তার আগে বিএড করতে চান সাবানা। বললেন, ''এই অবস্থা নিয়ে যে চাকরি পাব, তাই-ই করব।''