ডিম বিক্রির পৌষ মাস !


প্রবল গ্রীষ্মে ডিমপট্টির গলিতে যেন বসন্তের হাওয়া। এমন গ্রীষ্মকাল বহু দিন দেখেননি ডিম ব্যবসায়ীরা। সৌজন্যে ভাগাড় কাণ্ড!

শিয়ালদহের মণীন্দ্র মিত্র রো-এ কলকাতার সব থেকে বড় ডিমের পাইকারি ব্যবসা। এই এলাকা 'শিয়ালদহ ডিমপট্টি' নামে বিখ্যাত। এখান থেকেই কলকাতার অধিকাংশ এলাকায় ডিম সরবরাহ হয়। গরম বাড়লে ডিমের চাহিদা সাধারণত কমে। এত বছর ধরে এমনই অভিজ্ঞতা ছিল ডিম ব্যবসায়ীদের। এ বারের গ্রীষ্ম ব্যতিক্রম। 

শিয়ালদহ ডিমপট্টির ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, গরম বা়ড়লেও ডিমের চাহিদা কমার তো কোনও লক্ষণই নেই, বরং তা বেড়েছে। পোলট্রির ডিম, হাঁসের ডিম, মুরগির ডিম বা ডবল কুসুম ডিম— যে কোনও ধরনের ডিমের চাহিদাই এই গরমে বেশ ভাল। 

এই চাহিদা বাড়ার নেপথ্যে যে ভাগাড় কাণ্ড সে নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই ডিম ব্যবসায়ীদের। উজ্জ্বল সাহা নামে ডিমপট্টির এক ব্যবসায়ীর কথায়, ''আমাদের দোকান থেকে পাড়ার বা বাজারের মুদিখানা ছাড়াও দক্ষিণ কলকাতার বেশ কয়েকটি ফাস্ট ফুডের দোকানে ডিম সরবরাহ হয়। প্রত্যেক দিন কমপক্ষে দশ থেকে বারো পেটি ডিম যায় ফাস্ট ফুডের দোকানগুলোয়। ভাগাড় কাণ্ডের পর থেকে ওই সব দোকানে আরও পাঁচ থেকে ছ'য় পেটি বেশি ডিম লাগছে। ওঁদের কাছে এখন ডিমই লক্ষ্মী।'' 

ডিমপট্টিতে একটি দোকানের সামনে রিকশা ভ্যানে ডিমের পেটি তুলছিলেন গড়িয়াহাটের এক ফাস্ট ফুডের দোকানদার বিনয় দাস। তিনি বলেন, ''কলকাতার বেশির ভাগ ফাস্ট ফুডের দোকানে প্রধান উপকরণই তো ডিম। রোল থেকে শুরু করে এগ চাউমিন, এগ ডেভিল, মোগলাই পরোটা সবেতেই লাগে। এখন ভাগাড় কাণ্ডের পরে আমরা চিকেন বা মাটনের মেনু কমিয়ে দিয়ে ডিমের মেনু বাড়িয়ে দিয়েছি। অন্য বার গরম কালে ডিমের মেনু কমিয়ে চিকেনের মেনু বাড়াতাম।। ভাগাড় কাণ্ডের পরে এখন ডিমই ভরসা।'' 

কলকাতা এগ মার্কেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজল দত্ত বলেন, ''আমাদের এখান থেকে প্রতি দিন ৩০ থেকে ৩৫ লক্ষ ডিম বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ হয়। গরম কালে এর পরিমাণ নেমে আসে ২০ থেকে ২৫ লক্ষে। চাহিদা কমায় দামও কিছুটা কমে। কিন্তু এই গ্রীষ্মে ব্যতিক্রম চলছে। এখন এই তীব্র দাবদাহের মধ্যেও প্রতি দিন ৩০ থেকে ৩৫ লক্ষ ডিমের চাহিদা থাকছে।'' 

কাজলবাবু জানান, গরমে ডিমের চাহিদা কম থাকায় তারা ডিমগুলিকে কোল্ড স্টোরেজে পাঠিয়ে দেন। এ বার কোল্ড স্টোরেজে পাঠানোর দরকার হয়নি। ডিমের চাহিদা বাড়ায় ১০০টি ডিমের পাইকারি দাম ৩৫০ থেকে বেড়ে ৩৭০ থেকে ৩৮০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। ব্যবসায়ীদের মতে, পাইকারি ডিমের দাম বাড়ায় খোলা বাজারে খুচরো ডিমের দামও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ডিমের এই সুদিনে শুধু একটি ক্ষেত্রেই ব্যতিক্রম বলে জানালেন ডিমপট্টির ব্যবসায়ী সঞ্জয় বারিক। তিনি বলেন, ''বেশ কিছু বিরিয়ানির দোকানদার প্রতিদিন বেশ কয়েক পেটি করে ডিম কিনতেন। তাঁরা বিরিয়ানিতে মাংস ও আলুর সঙ্গে সঙ্গে একটা ডিমও দিতেন। অনেক বিরিয়ানির দোকানদারেরা ভাগাড় কাণ্ডের জেরে বিরিয়ানি বানানোই বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে সেই দোকানদাররা গত ক'দিন ধরে আর আসছেন না।''