শিশু ধর্ষণের বিচারেও চাই বিশেষ কোর্ট


নারী-নির্যাতনের মতো মামলার বিচার দ্রুত শেষ করার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বেশ কয়েকটি ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট তৈরি করেছে। এ বার শিশু ও নাবালিকা ধর্ষণের মামলার বিচারে বিশেষ আদালত গড়ার জন্য প্রতিটি রাজ্যকে পরামর্শ দিল কেন্দ্রীয় সরকার।

দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নাবালিকা বা শিশুকন্যা ধর্ষণের একের পর এক ঘটনায় উদ্বিগ্ন কেন্দ্র। কঠোর আইন প্রয়োগের পাশাপাশি এই ধরনের ঘটনায় যুক্ত অপরাধীর দ্রুত সাজা নিশ্চিত করতে প্রতিটি রাজ্যকে নির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপের পরামর্শ দিয়েছে তারা। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারের কাছে চিঠি পাঠিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট অর্ডিন্যান্স হাতে পেয়ে পদক্ষেপের ভাবনাচিন্তা শুরু করে দিয়েছে রাজ্য সরকার।

দিল্লি প্রশাসন সূত্রের খবর, নির্দিষ্ট ব্যবস্থার অঙ্গ হিসেবেই রাজ্যকে কয়েকটি বিশেষ আদালত তৈরির সুপারিশ করেছে কেন্দ্র। তাদের পরামর্শপত্রে বলা হয়েছে, ওই সব আদালতে শুধু শিশু বা নাবালিকা ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচার প্রক্রিয়া চালানো হবে। সেখানে বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি (স্পেশ্যাল পাবলিক প্রসিকিউটর) নিয়োগেরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা প্রধানত এই ধরনের ঘটনার বিচার প্রক্রিয়ায় রাজ্য সরকারের হয়ে আইনি লড়াই চালাবেন। অতি দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শেষ করে দোষীকে যাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শাস্তি দেওয়া যায়, সেই জন্যই কেন্দ্রের এই পরামর্শ বলে মনে করা হচ্ছে। রাজ্যের আইন বিশেষজ্ঞদের অনেকেরই অনুমান, রাজ্য আদালত তৈরি করলে কেন্দ্র তার ব্যয়ভার বহন করবে।

কেন্দ্রের পরামর্শ, এই ধরনের ঘটনার তদন্তে বিশেষ দল তৈরি করুক সরকার। প্রবীণ পুলিশকর্তাদের একাংশের ব্যাখ্যা, শিশু-নাবালিকা নির্যাতনের ঘটনার তদন্তে বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন। কেন্দ্রের সুপারিশের অর্থ, বাছাই করা অভিজ্ঞ পুলিশ আধিকারিকদের নিয়ে তৈরি অনুসন্ধানী দলকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তবেই এই ধরনের কোনও ঘটনায় কাঙ্ক্ষিত সময়ের মধ্যে নিখুঁত তদন্ত করা সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে চার্জশিট গঠনের প্রক্রিয়াও যাতে নির্ভুল হয়, সে-দিকে নজর রাখা প্রয়োজন। অপরাধীর উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা অনেকাংশেই নিখুঁত চার্জশিটের উপরে নির্ভর করে।

বিশেষ মেডিক্যাল কিট সংগ্রহ করারও পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্র। আক্রান্ত বা ধর্ষিত নাবালিকার শারীরিক পরীক্ষানিরীক্ষা, আক্রান্তের কাছ থেকে এবং অকুস্থলের যথাযথ নমুনা সংগ্রহ জরুরি তো বটেই। সেই সব নমুনার সঙ্গে অপরাধীর নানা চিহ্নের নির্ভুল মিল বার করার উপরে তদন্তের গতিপ্রকৃতি অনেকটা নির্ভর করে। তাই ফরেন্সিক ল্যাবেরটরির আধুনিকীকরণ ছাড়াও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে উন্নত মানের কিট সংগ্রহের পরামর্শ দিচ্ছে কেন্দ্র।

পুলিশি সূত্রের খবর, কেন্দ্রের এই সব পরামর্শ কী ভাবে মানা যায়, সেই বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে রাজ্য সরকার। তবে বিষয়টি যে-হেতু অত্যন্ত স্পর্শকাতর, তাই অতি দ্রুত পাকাপাকি সিদ্ধান্তের আশা করছেন পুলিশ আধিকারিকদের একাংশ।