‘শুধু আমাদের সঙ্গে আসুন, ১০০ গুণ ধনী করে দেব’


ফোনে কথোপথনের ভঙ্গিটা বেশ অন্য রকম— ''শুধু আমাদের সঙ্গে চলে আসুন। আপনাকে ১০০ গুণ বড়লোক করে দেব!''

শুক্রবার সন্ধ্যায় এমনই একটা কথোপকথনের অডিয়ো প্রকাশ করে কর্নাটকে আস্থাভোটের উত্তাপ বহুগুণ বাড়িয়ে দিল কংগ্রেস। তাদের অভিযোগ, কংগ্রেসের বিধায়ক বসনগৌড়াকে এ ভাবেই ফোন করে বিজেপির সঙ্গে হাত মেলানোর প্রস্তাব দিয়েছেন বিজেপি নেতা জনার্দন রেড্ডি। কথা শুনলে বসনগৌড়ার সম্পত্তি ১০০ গুণ বেড়ে যাবে— এমন টোপ দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেসের দাবি, রেড্ডি-র প্রস্তাব পত্রপাঠ খারিজ করেছেন বসনগৌড়া। বিজেপি অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে বলছে, অডিয়ো-টেপটি জাল

অভিযোগের সত্যমিথ্যা যাচাই পরের কথা। আপাতত আস্থাভোটের আগে এমনই নানা অভিযোগ, জল্পনায় ভর করে হু হু করে বাড়ছে উত্তেজনা। সেই উত্তেজনার কেন্দ্রে আছে মনস্তাত্বিক প্রচার থেকে টাকার টোপ, জাতের সুড়সুড়ি থেকে খুনের হুমকি— সবই। অবশ্য সবই অভিযোগের আকারে।

মাত্র দু'দিন আগেও আস্থাভোটের জন্য বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পার হাতে ছিল ১৫ দিন সময়। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সেই কাউন্টডাউনের ঘড়ি শুক্রবার এক ঝটকায় নেমে এসেছে এক দিনে। সময় কমে যাওয়ায় বিপাকে বিজেপি। খুশি কংগ্রেস-জেডি(এস)। যদিও বিজেপি আজও দাবি করেছে, ইয়েদুরাপ্পা কাল অনায়াসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে পারবেন।

দক্ষিণের এক মাত্র রাজ্যে সরকার বাঁচাতে দলের সদর দফতরে ঘাঁটি গেড়েছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। ঘণ্টায় ঘণ্টায় ফোন যাচ্ছে বেঙ্গালুরুতে দল ভাঙানোর কুশীলবদের কাছে। টাকার টোপে দল ভাঙানোর চেষ্টা তারই অঙ্গ, অভিযোগ কংগ্রেসের।

ম্যাজিক সংখ্যা ছুঁতে ইয়েদুরাপ্পার প্রয়োজন ৮ বিধায়কের সমর্থন। হাতে মাত্র কয়েক ঘণ্টা। এই অঙ্ক নিয়েই সরগরম বেঙ্গালুরু থেকে দিল্লি। এর মধ্যেই কংগ্রেস বিধায়ক বি এস আনন্দ সিংহের খবর নেই। আরও অন্তত ৫ কংগ্রেস বিধায়ককে নিয়ে গুঞ্জন— তাঁদের নাকি বিজেপি নেতাদের সঙ্গে দেখা গিয়েছে! বিজেপি এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে। কংগ্রেসও জানিয়েছে, আনন্দ বাদে বাকি সব বিধায়কই দলের সঙ্গে আছেন। কিন্তু আশঙ্কা কাটছে না। খোদ জেডি(এস) নেতা কুমারস্বামীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন অনেকের। ভাঙনের ভয়ে ইগলটন রিসর্ট থেকে বিধায়কদের নিয়ে হায়দরাবাদে পালিয়েছে কংগ্রেস! অভিযোগ, ইয়েদুরাপ্পা পুলিশ পাহারা তুলে নিতেই বিজেপি নেতারা টাকার রিসর্টের দরজায় কড়া নাড়া শুরু করেছিলেন।

রাত পর্যন্ত সেয়ানে-সেয়ানে লড়াই জারি রেখেছে কংগ্রেস। অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির দাবি, ''সংখ্যা আমাদের সঙ্গে রয়েছে। অটুট দলও।'' কংগ্রেস ও জেডি(এস)-এর মোট বিধায়ক সংখ্যা ১১৬ হলেও কুমারস্বামী দু'টি আসন থেকে জিতে আসায় একটি ভোট গণ্য করা হবে। অন্য দিকে, বিজেপির ১০৪ জন বিধায়ক। রাত পর্যন্ত কংগ্রেস ও বিজেপি দুই শিবিরই দাবি করেছে, দুই নির্দল বিধায়ক তাদের সঙ্গেই রয়েছেন।

বিধায়ক কেনাবেচায় বিজেপির হয়ে রেড্ডি ভাইয়েরা সক্রিয় বলে অভিযোগ কংগ্রেসের। বসনগৌড়াকে ফোন করার অভিযোগ ঘিরে কংগ্রেস সেই সুর আরও চড়িয়েছে। সেই সঙ্গে আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা। তাঁর কথায়, ''এমন ফোন সবাই পাচ্ছেন। সব ঘোড়াকে কি সামলানো যাবে!''