হাওয়াইতে অগ্নুৎপাত! এলাকা খালি করতে বলা হল বাসিন্দাদের


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপের কিলাউয়া আগ্নেয়গিরি থেকে আশপাশের বসতি এলাকায় অগ্ন্যুৎপাতের জেরে বৃহস্পতিবার প্রায় ১০ হাজার বাসিন্দাকে তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি একের পর এক ধারাবাহিক ভূমিকম্পে ফের জেগে উঠেছে আগ্নেয়গিরিটি। হাওয়াই কাউন্টির অসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানায়, 'ভূমিকম্পে বিগ আইল্যান্ডের পাহোয়া শহরের কাছে লিলানি এস্টেটে একটি ফাটল দেখা দিয়েছিল। সেটি থেকে বাষ্প ও লাভা বের হচ্ছে।'

স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলে দেখানো ফুটেজেও দেখা গিয়েছে, মাঝরাস্তায় একটি ফাটল থেকে ফোয়ারার মতো লাভা বের হচ্ছে। ড্রোন-ফুটেজে পাশের জঙ্গলে লাভা-স্রোত বইতে দেখা গিয়েছে। বিগ আইল্যান্ডের বাসিন্দা ইকিকা মারজো সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ফাটল থেকে একেকটি লাভার গোলা প্রায় ১৫০ ফুট ওপরে উঠে যাচ্ছে তারপর নিচে প্রায় ২০০ ইয়ার্ড এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে গলন্ত লাভা। তিনি বলেন, 'মনে হচ্ছে যেন একটা জেট ইঞ্জিন চলছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গ অবস্থা খারাপ হচ্ছে।'

ভূমিকম্পের পর থেকেই অগ্নুৎপাতের আশঙ্কা করেছিল প্রশাসন। কাউন্টি, স্টেট ও ফেডেরাল কর্মকর্তারা বাসিন্দাদের বারবার সতর্ক করেছিলেন তার জন্য প্রস্তুত থাকতে। বলা হয়েছিল অগ্ন্যুৎপাতের ক্ষেত্রে ব্য়বস্থা নেওয়ার সময় খুব কম পাওয়া যায়। তাই এলাকা ছেড়ে যাওয়ার জন্য বাসিন্দাদের তৈরি থাকতে বলে হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও এলাকাবাসীর হেলদোল ছিল না বলেই জানা গিয়েছে।

অগ্নুৎপাত শুরু হতেই কাউন্টি প্রশাসন লিলানি এস্টেটের সমস্ত বাসিন্দাদের বাধ্যতামূলকভাবে এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। ২০১০ সালের জন গননা অনুযায়ী এই এস্টেটে মোট ১৫০০ মানুষ থাকেন। আশপাশের কমিউনিটি সেন্টারগুলি তাদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।
পাহোয়া ডিস্ট্রিক্ট পার্কের জিমন্যাশিয়ামে রেড ক্রস একটি ইভাকুয়েশন সেন্টার খুলেছে। সেখানে বাস্তুচ্যুতদের থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। পার্কের রিক্রিয়েশন ডিরেক্টর রেনসন ইউনেডা জানান, ইতিমধ্যেই প্রায় ১৫ জন মানুষ ওই কেন্দ্রে এসেছেন। কয়েকজনের সঙ্গে তাদের পোষ্যরাও রয়েছে। সবাই জানতে চাইছে ব্যাপারটা ঠিক কী হয়েছে। তিনি বলেন, 'সবাই কেবল জানতে চাইছে ঠিক কী চলছে। কারণ তাদেরকে শুধু বলা হয়েছে ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতেই হবে। এটা বাধ্যতামূলক।'

মার্কিন জিওলজিকাল সার্ভে জানিয়েছে বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই এলাকার মাটিতে নতুন করে একটি ফাটল দেখা দিয়েছে। যার থেকেও গরম বাষ্প ও লাভা উদগিরণ শুরু হয়েছে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, অগ্ন্যুৎপাতের এলাকার ঢালু অংশগুলো লাভায় ঢেকে যেতে পারে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্ভাবনা লিলানি এস্টেটে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন শুধু লিলানি এস্টেট নয়, নতুন কোনও ফাটল দিয়ে লাভা উদগিরণ হতে পারে যে কোনও সময়ে এবং সেটা কোথায় হবে তা আগে থেকে বলা সম্ভব নয়।

দিনকয়েক ধরেই বেশ কয়েকটি ভূমিকম্প হয় ওই এলাকার পিউনা ডিস্ট্রিক্ট-এ। প্যাসিফিক সুনামি ওয়ার্ণিং সেন্টার সোমবার সন্ধ্যায় জানিয়েছিল আগ্নেয়গিরির দক্ষিণ ভাগে একটি ৪.৬ কম্পাঙ্কের ভূমিকম্প হয়েছে। ওই ভূমিকম্পে কিলাউয়া আগ্নেয়গিরির 'পিউ ও' জ্বালামুখটি ধসে যায়। তারপর থেকে মঙ্গল ও বুধবারের মধ্যে এই এলাকায় প্রায় ৭০টি ২.৫ বা তার অধিক কম্পাঙ্কের কম্পন ধরা পড়েছে। ভেঙে পড়ে এলাকার একটি স্কুল বাড়ি। ধারাবাহিক কম্পনে একাধিক জায়গায় ফাটল ধরে বন্ধ হয়ে যায় রাস্তাঘাট। 'পিউ ও' জ্বালামুখ ধসে যাওয়ার ফলে মাটির নিচ দিয়ে পাহাড়ে ঢাল ১০ মাইলেরও নিচে চলে এসেছে লাভাস্রোত। এখনও ওই স্রোত এগোচ্ছে দ্বীপের সবচেয়ে জনবহুল দক্ষিণপূর্ব উপকূলের দিকে।

হাওয়াই কাউন্টি সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি মঙ্গলবার থেকে এলাকাটি বন্ধ করে দিয়েছে। পর্যটকদের ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রাইভেট ট্যুর কোম্পানিগুলিকেও আপাতত কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিলাউয়া দীর্ঘদিন ঘুমিয়ে ছিল। কিন্তু ১৯২৪ সালে এক অগ্ন্যুৎপাতে প্রায় ১০ টন ওজনের ছাই ও পাথর উদগিরণ হয়েছিল। এই ঘটনায় এক ব্যক্তি মারা গিয়েছিলেন। সেই থেকে মাঝে মাঝেই গা ঝাড়া দিয়েছে এই আগ্নেয়গিরি।