স্বেচ্ছামৃত্যু জীবন-বিমুখ অস্ট্রেলিয় বিজ্ঞানীর, রেখে গেলেন প্রশ্ন


জীবন শেষ হল জীবন বিমুখ সেই ১০৪ বছর বয়সী অস্ট্রেলীয় বিজ্ঞানীর। একটি সুইস ফাউন্ডেশন বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ব্রিটিশ সময় সকাল সাড়ে দশটায় ডেভিড গুডঅল ওষুধের সহায়তায় আত্মহত্যা করেন।

কয়েকদিন আগে ডেভিডের ইচ্ছা শুনে সাড়া পড়ে গিয়েছিল বিশ্বে। তিনি জানিয়েছিলেন, তাঁর কোনও প্রাণঘাতি রোগ নেই। কিন্তু তাও তিনি আর বেঁচে থাকতে চান না। কারণ তাঁর জীবনের মান বা কোয়ালিটি অসম্ভব পড়ে গিয়েছে। জীবনে আর কিছু পাওয়ার বা দেওয়ার নেই তাঁর। তাই তিনি মরতে চান। কিন্তু তাঁর দেশ অস্ট্রেলিয়ায় একমাত্র ভিক্টোরিয়া প্রদেশ ছাড়া আর কোথাও স্বেচ্ছামৃত্যু বৈধ নয়। তাই তিনি পারি দিয়েছিলেন সুইজারল্যান্ডে। তাঁকে সেদেশে আসতে সহায়তা করেছিল এক্সিট ইন্টারন্যাশনাল নামে এক সংস্থা। এদিন সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা ফিলিপ নিৎসকেই প্রথম জানান ডেভিড গুডঅল-এর মৃত্যুসংবাদ। তিনি জানিয়েছেন, গুডাল সুইজারল্যান্ডের বাসেল শহরে 'শান্তিতে মৃত্যুবরণ করেন'। ফিলিপ নিৎসকে আরও জানান, গুডালের দীর্ঘ জীবনের শেষ কয়েক মুহূর্ত কেটেছে 'লাইফ সাইকল ক্লিনিক' নামে এক ক্লিনিকে। সেখানেই তাঁকে একটি কড়া ঘুমের ওষুধের মিশ্রন দিয়ে চিরঘুমে পাঠানো হয়।

শেষ বয়স পর্যন্ত ডেভিড গুডঅল ছিলেন পার্থের এডিথ কোয়ান ইউনিভার্সিটির সাম্মানিক গবেষক। এক সপ্তাহ আগে তিনি চিরঘুমের দেশে যাবেন বলে যাত্রা শুরু করেছিলেন অস্ট্রেলিয়া থেকে। আসার পথে গিয়েছিলেন ফ্রান্সে। সেখানে তাঁর পরিবারের বাকি সদস্যদের কাছ থেকে শেষবারের মতো বিদায় নিয়ে গত সোমবার এসে পৌঁছান সুইজারল্যান্ডে। তারপর আজ তিনি পারি দিলেন চুড়ান্ত গন্তব্যে।

গতকাল (বুধবার) তিনি শেষবার মুখোমুখি হয়েছিলেন সাংবাদিকদের। তিনি বলেন, 'আমি আর বেঁচে থাকতে চাই না। আগামীকাল এই জীবন শেষ করার সুযোগ পাচ্ছি, তাই আমি খুশি। আর এখানকার চিকিৎসা কর্মীরা আমাকে এই সুযোগ করে দিচ্ছেন, তার জন্য তাদের প্রশংসা প্রাপ্য।' পাশাপাশি তিনি আশা করেছেন, তাঁর ঘটনা গোটা পৃথিবীতে যেভাবে সাড়া ফেলেছে, তাতে অস্ট্রেলিয়া ও অন্যান্য দেশ স্বেচ্ছামৃত্যু আইন নিয়ে নতুন করা ভাবতে বাধ্য হবে। ডেভিড বলেন, 'অস্ট্রেলিয়াতে জীবন শেষ করতে পারলে বেশি খুশি হতাম। এব্যাপারে যে অস্ট্রেলিয়া সুইজারল্যান্ডের পেছনে রয়েছে, তা নিয়ে আমার দুঃখ থাকবে।'

গুডঅল এবছরের গোড়ায় একবার নিজে নিজে আত্মহত্যার করতে গিয়ে ব্যর্থ হন। তারপরই তার মাথায় স্বেচ্ছামৃত্যুর ভাবনা আসে। ওষুধের প্রভাবে সাহায্যপ্রাপ্ত আত্মহত্যা বা স্বেচ্ছামৃত্যু বেশিরভাগ দেশেই অবৈধ। অস্ট্রেলিয়ার একমাত্র ভিক্টোরিয়া প্রদেশে গত বছর থেকে একে বৈধতা দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানেও শর্ত রয়েছে। মরণাপন্ন রোগী, যাদের আযু মেরেকেটে আর ছয় মাস, তাদের ক্ষেত্রেই স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। সুইস আইন অনুযায়ী, সুস্থ মনের কোনও ব্যক্তি, যিনি জীবন শেষ করার জন্য ধারাবাহিকভাবে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তাদেরকে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন করতে দেওয়া হয়। বুধবারও ডেভিড গুডঅলকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তার মনে কোনও সংশয় আছে কিনা। তিনি স্পষ্ট করে জানান, 'না, একেবারেই না।'