বধূর চেষ্টায় প্রাণ বাঁচল পড়শিদের


বছর বত্রিশের বধূ সকলকে ঘুম থেকে ডেকে না তুললে কী হত, তা ভেবেই শিউরে উঠছেন নিউ টাউনের সুলংগুড়ি কলোনির বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার রাত ১টা নাগাদ ওই কলোনিরই একটি গুদামে আগুন লাগে। ভয়াবহ সেই আগুনে প্রাণও যেতে পারত অনেকের। যায়নি শুধু সুপর্ণা হালদার নামে এক বধূর একার চেষ্টায়।

গৌরাঙ্গনগরে পিচের রাস্তা থেকে ঢাল দিয়ে নামলেই সুলংগুড়ি কলোনি। সেখানে পাঁচ কাঠা জমির উপরে সঞ্জয় মণ্ডলের গুদাম। শুটিংয়ের সেট তৈরির ব্যবসা তাঁর। তাই গুদামে কাঠ, প্লাইউড, রং-সহ প্রচুর দাহ্য পদার্থ মজুত করা ছিল। আর রাখা ছিল কয়েকটি ব্যাটারি-চালিত স্কুটার। গুদামের পিছনের জমিতে বাড়ি তৈরি করছেন সুপর্ণার স্বামী স্বপন হালদার। তার জন্য গুদামের পাশে একটি বাড়িতে আপাতত ভাড়া আছেন তাঁরা। ঢালাইয়ের কাজের জন্য বৃহস্পতিবার রাতে রড এসেছিল। তার জন্য ঘরের কাজ সেরে শুতে সুপর্ণার দেরি হয়ে যায়। রাত ১টা নাগাদ বাড়ির সামনে বাসন মাজছিলেন তিনি। আচমকা দেখেন, সারা গলি ধোঁয়ায় ভর্তি। গুদামের দিকে চোখ যেতেই বুঝতে পারেন, বড় বিপদ। স্বামীকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। তার পরে গুদামের দরজা ভেঙে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন দম্পতি। কিন্তু বালতির জলে যে ওই আগুন নেভানো সম্ভব নয়, তা বুঝতে পেরে বাড়ির গলির দিকে ছোটেন বধূ।

তাঁদের ভাড়াবাড়ির পাশেই নন্দকিশোর সাহার দোতলা বাড়ি। তাঁদের ঘুম থেকে তোলেন সুপর্ণা। এর পরে একে একে পাড়ার সকলকে সজাগ করেন তিনি। এরই মধ্যে গুদামের মধ্যে থাকা গ্যাস সিলিন্ডার ফাটার শব্দ পান বাসিন্দারা। যার জেরে আগুন আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। একটি পরিবার ঘুম ভেঙে যখন আগুনের হাত থেকে ঘরের সামগ্রী বাঁচাতে ব্যস্ত, তখন সুপর্ণা এক দরজা থেকে আর এক দরজায় ছুটে গিয়ে খবর দিচ্ছেন। তাঁর কথায়, ''তখন শুধু মনে হচ্ছিল, কারও যেন ঘুমের মধ্যে মৃত্যু না হয়। লোকজনকে জাগাতে দরজায় ইট ছুড়ছিলাম। যাতে জোরে শব্দ হয়!"

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জগৎপুর মৃধা মার্কেট থেকে আগুনের লেলিহান শিখা দেখে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। দমকলের পাঁচটি ইঞ্জিনের লড়াই শুরু হওয়ার আগেই স্থানীয় বাসিন্দারা আগুন নেভানোর কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। নর্দমা হোক বা বাড়ির জলাধার— যে যেমন ভাবে পারেন, জল জোগাড় করে আগুনের মোকাবিলায় নামেন। সেই কাজ করতে গিয়ে সিঁড়ি থেকে পড়ে সুপর্ণার স্বামীর মাথা ফাটে। নন্দকিশোরবাবুর দুই ছেলেও জখম হন। আর আগুনের ভয়াবহতা দেখে অসুস্থ হয়ে পড়েন নন্দকিশোর। রাতে তাঁকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

এ দিন ঘটনাস্থলের ছবি থেকেই আগুনের ব্যাপকতা মালুম হয়। নন্দকিশোরের একতলার দু'টি ঘরের দরজা পুড়ে গিয়েছে। জানলার কাচ ভাঙা। দোতলার বারান্দায় আলমারির ভিতরে থাকা নথি, টাকা পুড়ে ছাই। এমনকী, আগুনের তাপে পিছনের বাড়ির ছাদের জলাধার পর্যন্ত গলে গিয়েছে। নন্দকিশোরের বাড়ির একতলায় ওড়িশার বাসিন্দা ভাগ্যশ্রী রাউত এবং রাজশ্রী রাউতকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। শুক্রবার স্থানীয় বাসিন্দা অভিজিৎ সাহা বলেন, ''পিছনের দিকে যে ডোবা রয়েছে, আতঙ্কে সেখানেই সকলে গ্যাস সিলিন্ডার ফেলতে শুরু করেন।"

পুলিশ সূত্রের খবর, গুদামের দাহ্য পদার্থ সিগারেটের টুকরো বা অন্য কোনও ভাবে আগুনের সংস্পর্শে আসাতেই ঘটে বিপত্তি। অগ্নি-সুরক্ষা বিধি না মেনে ব্যবসা করার জন্য গুদামের মালিকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।