গুলি-বোমায় রক্তাক্ত রাজ্য! ভোটের বলি ১২, আক্রান্ত পুলিশ-সংবাদমাধ্যম


ভোটের বলি হতে হল কমপক্ষে ১২ জনকে। হিংসায় প্রাণ গেল শাসক-বিরোধী ও বহিরাগতদের। কোথাও জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হল। কোথাও শরীর ছিন্নভিন্ন করে দিল বুলেট। বুথ দখল করতে গিয়ে স্থানীয়দের প্রতিরোধেরও শিকার হলেন কয়েকজন। 

কাছাড়িবাড়ির নানখানায় বুধখালি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ২১৩ নম্বর বুথের সিপিএম কর্মী দেবু দাসের বাড়িতে রবিবার রাত ১টা নাগাদ আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ঘুমন্ত অবস্থায় অগ্নিগগ্ধ হয়ে মারা যান দেবু দাস ও তাঁর স্ত্রী ঊষা দাস। এই ঘটনায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল উঠেছে। যদিও এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনে রিপোর্ট দিয়ে জেলা পুলিশ দাবি করেছেন যে এটি দুর্ঘটনাবশত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা।

আমডাঙার পাঁচতোড়ায় ভোট চলাকালীন বোমাবাজিতে খুন হন এক সিপিএম কর্মী। নাম তৈবুর গায়েন। আহত আরও দুই সিপিএম সমর্থক। 

ভোটে হিংসার বলি বিজেপিও। বেলডাঙায় খুন করা হয় বিজেপি কর্মী তপন মণ্ডলকে। শোকের ছায়া নেমে আসে পরিবারে।

নওদার পাটকেলবাড়ি এলাকায় খুন হলেন নির্দল প্রার্থী শহীদ শেখ। দক্ষিণ দিনাজপুর তপন-এর মহিউদ্দিন মহালত নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। 

নন্দীগ্রামের হাঁসচড়ায় ২ নির্দল সমর্থককে খুন। নাম অপু মান্না ও যোগেশ্বর ঘোষ। অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। 

তবে শুধু বিরোধীরা নয়, শাসক দলের কর্মীরও প্রাণ গিয়েছে ভোট-সন্ত্রাসে। কুলতলির মেরিগঞ্জের বালিরচর এলাকায় ভোট দিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় আরিফ গাজির(৩৫)। তাঁর পরিবারের দাবি, আরিফ তৃণমূল সমর্থক। তিনি এদিন ভোট দিতে গেলে গুলি ও বোমাবাজি শুরু হয়। বাইক নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেই তাঁকে গুলি করা হয়। SUCI ও CPIM-এর লোকজন গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ।

নাকশিপাড়া থানার বিলকুমারী গ্রামে খুন হন তৃণমূল কর্মী ভোলা দফাদার (৬০)। একটি বাড়ির দোতলায় উঠতে গেলেও তাড়া করে নামিয়ে এনে তাঁকে খুন করা হয়। ভোলাকে দলের সক্রিয় কর্মী বলে দাবি করেছেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহা। তাঁর অভিযোগ, 'সিপিএমের লোকজন ভোটের আগে থেকেই ওখানে সন্ত্রাস করছিল। ওরা বুথ জ্যাম করে। ওদের আক্রমণের শিকার হলেন ভোলা।' 

অপরদিকে, শান্তিপুরে বুথ দখল করতে গিয়ে গণপিটুনিতে মৃত‍্যু হয় একজনের। মৃত সঞ্জিত স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ ছাত্র। গণপিটুনিতে আহত হয়েছেন আরও দু জন। শান্তিপুরের বাবলা পঞ্চায়েতের আদিবাসীপাড়ার একটি বুথ দখল করতে যায় বাইকবাহিনী। তাঁদেরই একজন সঞ্জিত প্রামাণিক জনতার হাতে ধরা পড়ে যান বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। সঞ্জিত শান্তিপুরে তৃণমূলের দলীয় অফিসের কৰ্মী বলে জানান স্থানীয় তৃনমূল বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্য। বাড়ি শান্তিপুর পুরসভা এলাকার সর্বানন্দীপাড়ায়। তবে বিধায়কের দাবি, 'ওই বুথের দলীয় এক পোলিং এজেন্ট সিল গালা চাইলে দুটি বাইকে চার জন মিলে তা পৌঁছে দিতে গিয়েছিল। কিন্তু সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস সেখানে মহাজোট গড়েছে বলে আমাদের নিরীহ ছেলেটাকে পিটিয়ে মারল।' সঞ্জিতের পেটে গুলিও লেগেছিল বলে জানান বিধায়ক। 

এছাড়াও পুলিশ ও সংবাদমাধ্যমের উপর হামলাও ঘটনা ঘটে। মালদার রতুয়াতেও আক্রান্ত হয় পুলিশ। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়ি। বাসন্তীতে বুথ দখল রুখতে গিয়ে আক্রান্ত হন এসআই। জ্যাংড়ায় পুলিশকে লক্ষ করে ইঁটবৃষ্টি করা হয়, ভাঙাচুর চালানো হয় পুলিশের গাড়িতেও। মাদারীহাটে আক্রান্ত হয় সংবাদ মাধ্যম। একটি বুথে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয় মোস্তাক মোর্সেদ হোসেনের, অপহরণ করা হয়েছে সুনীল রায় ও কামাক্ষ্যা দাস নামের দুই সাংবাদিককে।