একটি মৃত্যু, জোড়া ডেথ সার্টিফিকেট

অসহায়: গোপালচন্দ্র মজুমদার।

তদন্তে জানা যায়, ২০১৫-র ৭ এপ্রিল বীণা মজুমদারের মৃত্যুর পর তিন বছর ধরে তাঁর দেহ ফ্রিজারে সংরক্ষণ করে রাখেন তাঁর ছেলে শুভব্রত। মৃত্যুর পরেও প্রায় তিন বছর তাঁর পেনশনের টাকা তোলা হয়েছিল একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে, এমনটাই অভিযোগ।



একজন মানুষের দু'বার মৃত্যু হয়েছে! প্রথমবার মারা যাওয়ার তিন বছর পর ফের তিনি মারা গিয়েছেন!অদ্ভুতুড়ে? 

নথি অনুযায়ী, বেহালার জেমস লং সরণির বীণা মজুমদারের প্রথমবার মৃত্যু হয় ২০১৫-র ৭ এপ্রিল। তারপর ২০১৮-র ৫ এপ্রিল। প্রথম মৃত্যুর ডেথ সার্টিফিকেট দেন বেহালার বালানন্দ ব্রহ্মচারী হাসপাতালের চিকিৎসক। পরের বার দিয়েছে কলকাতা পুরসভা।  

তদন্তে জানা যায়, ২০১৫-র ৭ এপ্রিল বীণা মজুমদারের মৃত্যুর পর তিন বছর ধরে তাঁর দেহ ফ্রিজারে সংরক্ষণ করে রাখেন তাঁর ছেলে শুভব্রত। মৃত্যুর পরেও প্রায় তিন বছর তাঁর পেনশনের টাকা তোলা হয়েছিল একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে, এমনটাই অভিযোগ। এ বছর ৫ এপ্রিল ভোরে বীণার মৃতদেহ পুলিশ উদ্ধার করে।

সম্প্রতি বীণার 'ফ্যামিলি পেনশনের' দাবি করে তাঁর স্বামী গোপালচন্দ্র মজুমদার যে নথি ওই ব্যাঙ্কে পেশ করেছেন, তাতেই কার্যত চোখ কপালে উঠেছে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের। গোপাল কলকাতা পুরসভার দেওয়া ডেথ সার্টিফিকেট পেশ করে জানান, তাঁর স্ত্রী ২০১৮-র ৫ এপ্রিল মারা গিয়েছেন এবং ওই দিন থেকে 'ফ্যামিলি পেনশন' চালু করা হোক। 
গত ৫ এপ্রিল বিদ্যাসাগর হাসপাতালে বীণার দেহ প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই দিনই কাঁটাপুকুর মর্গে হয় ময়নাতদন্ত। চার দিন পর কেওড়াতলা শ্মশানে সৎকারের সময়ে বিদ্যাসাগর হাসপাতাল ও কাঁটাপুকুর মর্গের নথি পেশ করা হয়েছিল। শ্মশানে কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের অফিস যে ডেথ সার্টিফিকেট দেয়, সেখানে বীণার মৃত্যুর তারিখ ২০১৮-র ৫ এপ্রিল।

কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ''ভয়ঙ্কর ব্যাপার। ওই নথি অনুযায়ী, বীণাদেবীর দেহ তিন বছর ধরে সংরক্ষণ করে রাখা, তাঁকে জীবিত প্রতিপন্ন করে জালিয়াতির মাধ্যমে পেনশন তোলার অভিযোগ সব মিথ্যা হয়ে যায়!'' ওই অফিসারের কথায়, ''পুরসভার তো এ ক্ষেত্রে ওদের ক্রিমেশন সার্টিফিকেট দেওয়ার কথা।'' পুরসভার এক অফিসার বলেন, ''যে নথি মিলেছে, ডেথ সার্টিফিকেট তার ভিত্তিতেই দেওয়া হয়েছে। পুলিশের উচিত ছিল বিষয়টি শ্মশানে জানানো।'' পুলিশকর্তা পাল্টা বলছেন, ''পুরসভার কর্মীরা মানুষ, নাকি যন্ত্র! এত বড় ঘটনা, তাঁরা খেয়াল রাখবেন না!''