বেকার সমস্যায় ৩০০ কোটির প্রকল্প!


পঞ্চায়েত ভোটে বিশাল সাফল্যের পর পাখির চোখ লোকসভা ভোট। তাই ২০১৯ সালের আগেই গ্রামীণ এলাকার এক লক্ষ বেকারকে স্বনির্ভর করে তুলতে ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিল রাজ্য সরকার। রাজ্যের সমবায় দপ্তর তাঁদের বিভিন্ন ব্যবসার সরঞ্জাম কিনে স্বনির্ভর করার লক্ষ্য নিয়েছে। গত বৃহস্পতিবারই এই প্রকল্পের অনুমোদনের জন্য অর্থ দপ্তরের কাছে ফাইল পাঠানো হয়েছে। অর্থ দপ্তর অনুমোদন দেওয়ার পর তা মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করাতে হবে। তারপরই এই প্রকল্প ঘোষিত হবে। 
সমবায় দপ্তর সূত্রের খবর, মাসখানেক আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই রকম একটি প্রকল্প তৈরি করার জন্য দপ্তরের মন্ত্রী অরূপ রায়কে নির্দেশ দেন। তারপরই সমবায় দপ্তর দ্রুত এই প্রকল্প তৈরি করে। আগামী দু'মাসের মধ্যে এই প্রকল্প অনুমোদন পেয়ে যাবে এবং কাজ শুরু করে দেওয়া যাবে বলে সমবায় কর্তারা আশাবাদী।

দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিকভাবে গ্রামীণ এলাকার এক লক্ষ মানুষকে এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এরপরই শহরের যুবকদেরও এই প্রকল্পে আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তার জন্য বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট তৈরির কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। চলতি বছরেই গ্রামীণ ও শহরের বেকারদের কর্মসংস্থানে রাজ্য সরকার জোর দিয়েছে। রাজ্যের সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, মুখ্যমন্ত্রী শহরের পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকার মানুষের উন্নীতকল্পে প্রচুর প্রকল্প তৈরি করেছেন। এই প্রকল্পটিও ওই রকম। এই প্রকল্প অনুমোদনের জন্য অর্থ দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। ৩০০ কোটি টাকার এই প্রকল্পে গ্রামীণ এলাকার এক লক্ষ পরিবার অর্থাৎ প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ উপকৃত হবেন। দ্রুত এই প্রকল্প চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সূত্রে জানা গিয়েছে, সমবায় সমিতির মাধ্যমে এই প্রকল্প কার্যকর করা হবে। গ্রামীণ এলাকার বেকার যুবক-যুবতীদের স্বনির্ভর করতে ব্যবসায় অনুপ্রাণিত করা হবে। এর জন্য কেউ বাড়ির কাছে নিজের জমিতে পশুপালন করতে চাইলে তাঁকে আর্থিকভাবে সাহায্য করা হবে। আবার কেউ কম্পিউটার সেন্টার বা সাইবার কাফে তৈরি করতে চাইলে, তাঁকে তার জন্য আর্থিক সাহায্য করা হবে। এছাড়া কেউ সবজি চাষ করতে চাইলে, তাঁদের বীজ ও সার বিনামূল্যে সমবায় সমিতি থেকে সরবরাহ করা হবে। মূলত ব্যবসার প্রয়োজনীয় জিনিস তাঁদের কিনে দেওয়া হবে। এরপর তাঁরা ব্যবসা করে লাভ করলে সেখান থেকেই তাঁরা তাঁদের ব্যবসার পরিধি বাড়াতে পারবেন।

সমবায় দপ্তরের হিসেবে এইভাবে ছোট ছোট ব্যবসায় অনুপ্রাণিত করা গেলে এক-একজনের প্রতি মাসে কমপক্ষে ৮-৯ হাজার টাকা রোজগার হবে। একটি পরিবারে দু'জন বা তিনজন এই ব্যবসায় হাত লাগালে আয়ের পরিমাণ অনেকখানি বাড়বে। শুধু স্বনির্ভর গোষ্ঠী বা সমবায় সমিতির সদস্য নয়, সাধারণ বেকার যুবক-যুবতীদেরও এই প্রকল্পে নেওয়া হবে। এর ফলে গ্রামীণ অর্থনীতি অনেকখানি চাঙ্গা হবে বলেই সমবায় দপ্তরের অফিসাররা মনে করছেন।

সমবায় দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ স্বরোজগার নিগম এই রকমই একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কিন্তু, তাতে শুধুমাত্র স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এখানে গ্রামের সমস্ত বেকার যুবক-যুবতীকে এই প্রকল্পে আনা হচ্ছে। এই মুহূর্তে রাজ্যে ৫৬০০ সক্রিয় সমবায় সমিতি আছে। তার অধীনে ১ লক্ষ ৮০ হাজার স্বনির্ভর গোষ্ঠী আছে। প্রতিটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা গড়ে ২০ জন। মূলত বেকার যুবক-যুবতীদের দেশি মুরগি ও ব্ল্যাক বেঙ্গল গোট দেওয়া হবে। বাজারে যার দাম অনেক বেশি। সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে খবর, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হতে এখন শুধুমাত্র অর্থ দপ্তরের অনুমোদনের অপেক্ষা।

সমবায় দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, জনপ্রতি ৩০ হাজার টাকার ব্যবসার সরঞ্জাম কিনে দেওয়া হবে বেকার যুবকদের। রাজ্য সরকার এই টাকা পাঠাবে সমবায় সমিতির কাছে। সমবায় সমিতিগুলি প্রাপক নির্বাচন করে বাজার থেকে সরাসরি সরঞ্জাম কিনে তাঁদের হাতে তুলে দেবে।