১০ দিনে ৯ বার বাড়ল তেলের দাম, রেকর্ড গড়ল ডিজেল, ১৮ জুন বড়সড় ধর্মঘট পরিবহণে


টানা বৃদ্ধি জ্বালানি তেলের দামে। ১০ দিনের ৯ বার বেড়ে গেল তেলের দাম। ডিজেল ছাড়িয়ে গেল ৭০ টাকা। পেট্রলের লিটার ছুঁল প্রায় ৮০ টাকা। মূল্যবৃদ্ধির এই হার নজির গড়ে ফেলেছে দেশের ইতিহাসে। আগে কখনও এই ভাবে একটানা দাম বাড়েনি পেট্রোপণ্যের। ডিজেলের দামও আগে কখনও ৭০ টাকায় পৌঁছয়নি। এই বিপুল মৃল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ১৮ জুন দেশ জুড়ে ধর্মঘটে সামিল হচ্ছে ট্রাক মালিকদের একাধিক সংগঠন। বাংলায় একই দিনে ধর্মঘটে যাচ্ছে পাম্প মালিকদের সংগঠনও।

কর্নাটকে ভোটের আগে পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে সামান্য রাশ টানা হয়েছিল। ভোট মিটতেই উল্কাবেগে ঊর্ধ্বমুখী পেট্রোপণ্যের দাম। দক্ষিণী রাজ্যে ভোট মিটেছে ১০ দিন হল। আর সেই ১০ দিনে পেট্রল-ডিজেলের দাম বাড়ল মোট ৯ বার। গত রবিবারই কলকাতায় লিটার পিছু ডিজেলের দর ৭০ টাকা পার করেছে। আগামী কয়েক দিনে দাম আরও ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ দিন কলকাতা, দিল্লি, মুম্বই এবং চেন্নাই চার মেট্রো শহরেই বেড়েছে ডিজেলের দাম। লিটার প্রতি ২৬ থেকে ২৮ পয়সা করে দাম বা়ড়ানো হয়েছে। ফলে কলকাতায় ডিজেলের লিটার প্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ৭০.৬৩ টাকায় এবং পেট্রলের দাম পৌঁছেছে ৭৯.২৪ টাকায়। অন্য দিকে, রাজধানী দিল্লিতে ডিজেলের দাম বেড়ে হয়েছে ৬৮.০৮ টাকা। পেট্রলের দাম বেড়ে হয়েছে ৭৬.৫৭ টাকা।

বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম বাড়া ও ডলারে টাকার পতনের যুক্তিতে দেশে পেট্রল, ডিজেলের দাম বাড়াচ্ছে তেল সংস্থাগুলি। এই অবস্থায় তেল রফতানিকারী দেশগুলির সংগঠন ওপেকের সদস্য সৌদি আরবের কাছে সম্প্রতি অশোধিত তেলের দরে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আর্জি জানিয়েছেন পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। ইতিমধ্যেই তেলের ক্রমাগত দাম বাড়া নিয়ে সরব হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইট করে এ বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন তিনি। 

পরিবহণ শিল্প জোর ধাক্কা খেয়েছে মূল্যবৃদ্ধির এই বেনজির হারে। 'অল ইন্ডিয়া মোটরস কংগ্রেস' দেশ জুড়ে আগামী ১৮ জুন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছে 'ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক অপারেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন', 'ফেডারেশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক অপারেটার্স অ্যাসোসিয়েশন'-সহ ভারী পণ্য পরিবহণ সংগঠনগুলি।

বাস মালিকদের সংগঠন এখনও ধর্মঘটের ডাক দেয়নি। তবে বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের পক্ষে তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আমাদের ধর্মঘট ডাকতে হবে না। এমনিতেই বাস, মিনিবাস বসে যাবে। ন্যূনতম ৬ টাকা ভাড়ায় আর বাস চালানো সম্ভব নয়।'' তিনি জানান, বহুবার পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর উপস্থিতিতে বৈঠক হয়েছে। তার পরেও রাজ্য সরকার ভাড়া বাড়াতে আগ্রহী হচ্ছে না। গত কয়েক বছরে গাড়ির যন্ত্রাংশ, জ্বালানি, সিএফ-এর খরচ কয়েকগুণ বেড়েছে বলে তপনবাবুর দাবি। তাঁর কথায়, ''বাসের ভাড়া ন্যূনতম ১০ টাকা হওয়া উচিত। সরকারি বাসেরও ন্যূনতম ভাড়া ৭ টাকা।তাহলে আমরা বঞ্চিত হব কেন? জোর করে ভাড়া বাড়ানো আটতে দিলে অচিরেই বাস শিল্পের মৃত্যু ঘটবে।"

ট্রাক সংগঠনগুলির মতোই ধর্মঘটের পথেই হাঁটতে চাইছে ট্যাক্সি চালকদের দু'টি সংগঠন— 'ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্যাক্সি অপারেটার্স কো-অর্ডিনেশন কমিটি' এবং 'ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্যাক্সি ওয়ার্কার্স ফেডারেশন'। এই দু'টি সংগঠনের পক্ষে নওলকিশোর শ্রীবাস্তব বলেন, "আমরা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি। আগামী ১২ জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করব। তার পরেও যদি এই অবস্থা থাকে, তাহলে ১৮ জুন ধর্মঘটে সামিল হব।ওই দিন কেউ গাড়ি চালাবে না।''

১৮ জুন ধর্মঘটের পথ নিচ্ছে পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনও। সংগঠনের সভাপতি তুষার সেন বলেন, ''আগামী দিনে জ্বালানি তেলের দাম আরও বাড়তে পারে। অবিলম্বে জিএসটি লাগু করা উচিত। তা হলে তেলের দাম ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমে যেতে পারে।''