পরীক্ষায় ভালো ফল করেও আত্মঘাতী ছাত্র !


সোনারপুর থানার পাঁচপোতা ঢালুয়া এলাকার একটি আবাসন থেকে বুধবার এক কিশোরের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের অনুমান, মা মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ায় সৈকত বড়াল নামে একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্র মানসিক অবসাদে আত্মঘাতী হয়েছেন।

পুলিশ জানায়, ওই ছাত্রের ঘরে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া গিয়েছে। গত শনিবারেই পার্ক সার্কাসের একটি আবাসন থেকে একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীর দেহ উদ্ধার করা হয়। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, দশম শ্রেণির পরীক্ষায় ভাল ফল করায় আরহাম রহমত (১৭) নামে ওই ছাত্রীকে মোবাইল ফোন কিনে দিয়েছিলেন দাদা। তা নিয়ে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ায় বাড়িতে শাসন করা হয় ওই ছাত্রীকে। তার পরেই ঘটে ওই মর্মান্তিক ঘটনা। অল্প দিনের ব্যবধানে একই ধরনের ঘটনা ঘটায় পুলিশ, মনোবিদ, সমাজতত্ত্ববিদ থেকে সকলেই চিন্তিত। 

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সৈকত যাদবপুরের একটি সরকারি স্কুলে পড়তেন। মাধ্যমিক পরীক্ষায় খুব ভাল ফল করেছিলেন তিনি। ফলপ্রকাশের পরেই সৈকতের বাবা সত্যজিৎ বড়াল একটি দামি মোবাইল ফোন কিনে দিয়েছিলেন ছেলেকে। সৈকতের পরিজনদের কথায়, ফোন হাতে পাওয়ার পরে সেটা নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন ওই ছাত্র। পড়শোনায় মন না-দেওয়ায় মাঝেমধ্যেই মা মিনু বড়াল ছেলেকে বকাবকি করতেন। মঙ্গলবার দুপুর থেকে মোবাইল রেখে পড়াশোনায় মন দেওয়ার জন্য মা সৈকতকে একাধিক বার বকুনি দেন। কিন্তু ছেলে মায়ের কথা না-শোনায় বিকেলে মোবাইল কেড়ে নেন মা। তার পরেই নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন সৈকত। রাতে মায়ের সঙ্গে কথা বলেননি। খাবার খেয়ে নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়েন তিনি।

বুধবার সকালে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে যাওয়ার কথা ছিল সৈকতের। সকালে ছেলের ঘরের দরজায় বারবার ধাক্কা দিয়ে কোনও সাড়া না-পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন মা। কিছু পরে কয়েক জন পড়শিকে বাড়িতে ডেকে আনেন মিনুদেবী। ঘরের পিছনের জানলা দিয়ে সৈকতকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখা যায়। খবর যায় পুলিশে। দরজা ভেঙে তাঁকে নামানো হয়। তদন্তকারীদের কথায়, সুইসাইড নোট থেকে জানা গিয়েছে, মা মোবাইল কেড়ে নেওয়ায় সৈকত মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। তাই তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন। তাঁর মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয় বলে সুইসাইড নোটে উল্লেখ করা হয়েছে। বারুইপুর জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ''সৈকতের পরিজনেদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে তদন্ত চলছে।''