টাওয়ার বসানোর নামে দেশজোড়া প্রতারণা, কিংপিন সল্টলেকে?



ওই ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া একটি স্ক্রিন শট। 

রামকরণ ভুয়ালকা অভিজ্ঞ ব্যাবসায়ী। আসল-নকলের পার্থক্য ভালই বোঝেন। পাঁচ মাস আগে যখন তাঁর বিবেকানন্দ রোডের বাড়িতে টাওয়ার বসানোর জন্য নামী মোবাইল সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়, তখন তিনি খুব ভাল করেই খতিয়ে দেখেছিলেন। সব কিছু নিখুঁত মনে হওয়ার পরেই রাজি হয়েছিলেনসেই সংস্থার প্রস্তাবে।

চুক্তি অনুযায়ী টাওয়ার বসানোর জন্য মোবাইল সংস্থা রামকরণকে মাসে ৩৫ হাজার এবং এককালীন ২০ লাখ টাকা দেওয়ার কথা। সেই টাকা পাওয়ার জন্য মোবাইল সংস্থা রামকরণকে জানায়, সব মিলিয়ে সাড়ে চার লাখ টাকা প্রক্রিয়াকরণ এবং জিএসটি বাবদ টাকা দিতে হবে। রামকরণ বলেন,"সেই প্রসেসিং ফি ফেরত পাওয়া যাবে বলেছিল ওই সংস্থা। তাই আমি সেই টাকা দিয়েছিলাম। টাকা ট্রান্সফার করার সময় দেখলাম, অ্যাকাউন্টটিও ওই মোবাইল সংস্থার নামেই রয়েছে। তাই অবিশ্বাস করার কোনও কারণ ছিল না।"

টাকা পাঠানোর কয়েকমাস পরেও যখন রামকরণ টাকা পেলেন না তখন তাঁর টনক নড়ে। তিনি সেই ইমেল এবং ফোন নম্বরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন এবং ব্যর্থ হন। তারপরেই তিনি সল্টলেক সেক্টর-ফাইভে সেই মোবাইল সংস্থার অফিসে যান। সেখানে যাওয়ার পরই তিনি জানতে পারেন গোটাটাই জাল। ওই সংস্থা আদৌ এরকম টাওয়ার বসানোর জন্য বিবেকানন্দ রোডে কারও সঙ্গে চুক্তি করেনি। কেবল রামকরণ নন, ঠিক একই ভাবে রাজ্যে এবং কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে টাওয়ার বসানোর ফাঁদে পা দিয়ে লাখ-লাখ টাকা খোয়াচ্ছেন অসংখ্য মানুষ।

যেমন পূর্ব মেদিনীপুরের স্বদেশ বেরা বা পশ্চিম মেদিনীপুরের মনোরঞ্জন মন্ডল। এঁরাও প্রত্যেকেই ওই সংস্থার নামে থাকা ওয়েবসাইট দেখে নিশ্চিত হয়ে তবেই টাওয়ার বসাতে রাজি হয়েছিলেন। আর সেই ফাঁদে পা দিয়েই প্রসেসিং ফি বা অন্য খরচের নামে প্রতারকদের হাতে তুলে দিয়েছেন এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ পর্যন্ত টাকা।এ দিন রামকরণ বলেন,"ওরা যে ওয়েবসাইটের অ্যাড্রেস দিয়েছিল, সেটা দেখে আসল মনে হল। তারপরে ইমেল আইডি থেকে শুরু করে চুক্তিপত্রের কাগজ কোনওটাই নকল বলে মনে হওয়ার কোনও কারণ ছিল না।"

বিধাননগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম শাখায় এ মাসেই এই প্রতারণা নিয়ে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। কিন্তু এখনও সেই ভুয়ো ওয়েবসাইট Reliancejiotower.net রমরম করে চলছে। সেখানে পরিষ্কার লেখা রয়েছে, ওই মোবাইল সংস্থা সারা দেশে নতুন ছ'হাজার টাওয়ার বসাবে। সেখানে শহর এবং গ্রামাঞ্চলে ১৫ বছরের জন্য টাওয়ার বসানোর জন্য ৫০০ বর্গ ফুট জমি ওই মোবাইল সংস্থা কত টাকার বিনিময়ে লিজ নেবে তার বিস্তারিত তথ্যও দেওয়া রয়েছে। সেই সাইট আপাত ভাবে আসলই মনে হবে। ওই মোবাইল সংস্থার নিরাপত্তা এবং জালিয়াতি দমন শাখার প্রধান অনিমেষকুমার দাস বলেন, "আমরা ইতিমধ্যেই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছি। শুধু এই রাজ্যে নয়, সারা দেশে এই চক্র সক্রিয়।"

বিধাননগর পুলিশের এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, "আমরা ওই চক্র সম্পর্কে কিছু তথ্য পেয়েছি।খাস সল্টলেক সেক্টর ফাইভ থেকেই দেশজোড়া এই কোটি কোটি টাকার প্রতারণা চলছে। পিছনে আছে তথ্য প্রযুক্তিবিদরাও। তাঁদের সাহায্যেই নকল ওয়েবসাইট থেকে শুরু করে ভুয়ো কাগজপত্র সব কিছু বানানো হচ্ছে।"