নীরব মোদির থেকেও বড় দুর্নীতির পর্দা ফাঁস শহরেই, মণিকাঞ্চনে ১২ হাজার কোটির সোনা কেলেঙ্কারি!


নীরব মোদির চেয়েও বড়সড় আর্থিক কেলেঙ্কারির খোঁজ পেল ডিরেক্টর অব রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স (ডিআরআই)। এই কেসে ডিআরআই ছাড়াও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট, সিবিআই সহ আরও অন্যান্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা একযোগে তদন্ত শুরু করেছে। সবমিলিয়ে প্রতারণার অঙ্ক ১২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগে নীলেশ পারেখ নামে এক জুয়েলারি ব্যবসায়ীকে শুক্রবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুল্ক ছাড়ের সুবিধা নিয়ে বিদেশে সোনার অলঙ্কার না পাঠিয়ে তা দেশের বিভিন্ন জায়গায় তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ। সোনার গয়না বিক্রি বাবদ আসা টাকা তিনি হাওলার মাধ্যমে বিদেশে পাচার করে সেখানে বিভিন্ন জায়গায় লগ্নি করেছেন বলেও জানা যাচ্ছে। এর ফলে সরকারের ক্ষতি হয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। 

ঘটনাটি এক বছর আগেই নজরে এসেছিল সিবিআইয়ের। ব্যবসা দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন এই জুয়েলারি ব্যবসায়ী। কিন্তু সেই টাকা তিনি শোধ না করায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। যদিও পরে তিনি জামিন পেয়ে যান। কিন্তু তদন্ত চালাতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। দেখা যায়, তিনি একাধিক কোম্পানি খুলেছেন। সেখানে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ টার্নওভার দেখিয়েছেন। ফোলানো-ফাঁপানো এইসব নথি জমা দিয়ে ব্যাঙ্কের কাছে ঋণের অঙ্ক বাড়িয়ে গিয়েছেন প্রতি বছর। কিছুদিন পর লোকসান দেখিয়ে কোম্পানি বন্ধ করেছেন। এরপর সেখানে বিনিয়োগ হিসেবে দেখানো টাকার একটা বড় অংশ হাওলার মাধ্যমে বিদেশে পাচার করে দিয়েছেন বলে সিবিআইয়ের দাবি। সেখানে তাঁর একাধিক কোম্পানি রয়েছে। সেখানেই এই টাকা খাটছে বলে সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে। 

জানা গিয়েছে, কয়েক বছরের মধ্যেই নীলেশ পারেখ ২ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা ঋণ পেয়ে গিয়েছিলেন। এই টাকা তিনি শোধই করেননি। সিবিআই তদন্ত করতে গিয়ে দেখে, শুধু ব্যাঙ্ক প্রতারণাই নয়, জুয়েলারি ব্যবসার মাধ্যমেও বিপুল পরিমাণ টাকার শুল্ক ছাড় নিয়েছেন এই ব্যবসায়ী। এর বিনিময়ে বিদেশে সোনার অলঙ্কার ও মূল্যবান পাথর পাঠানোর চুক্তি থাকলেও তিনি তা লঙ্ঘন করেছেন। নিয়ম ভেঙে এগুলির পুরোটাই দেশীয় বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন। শুল্ক ছাড় ও বিদেশের প্রসঙ্গ জড়িয়ে যাওয়ায় বিষয়টি জানানো হয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এবং ডিআরআইকে। তারা এই নিয়ে আলাদাভাবে তদন্ত শুরু করে।

ডিআরআই তদন্ত করতে গিয়ে বিপুল অঙ্কের কেলেঙ্কারির খোঁজ পায়। নীলেশের জুয়েলারি সংস্থার কাজ কারবার খতিয়ে দেখতে গিয়ে রীতিমতো চোখ কপালে ওঠে তদন্তকারী অফিসারদের। দেখা যায়, সোনার অলঙ্কার তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করবেন বলে সল্টলেকস্থিত এসইজেড 'মণিকাঞ্চন'-এর ডেভেলপমেন্ট কমিশনারের কাছে প্রস্তাব পাঠান তিনি। প্রস্তাবে অনুমতি দেন ওই পদস্থ কর্তা। এর বিনিময়ে শুল্ক ছাড়ের সুবিধা পান ওই জুয়েলারি ব্যবসায়ী। তা ব্যবহার করেই বিদেশ থেকে ৩৫ হাজার ৭৪৬ কেজি সোনা নিয়ে আসেন। বিনিময়ে ৩৪ হাজার ৪১কেজির অলঙ্কার তৈরি করে বিদেশে পাঠান বলে দেখান নীলেশ পারেখ। মোট ৭ হাজার ৪৫০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছেন বলে দেখানো হয়। এসইজেডে নীলেশের ইউনিটে হানা দেয় ডিআরআই। সেখানে থাকা ভল্টে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার হয় সোনা ও মূল্যবান পাথর। যার আনুমানিক মূল্য ৩৬.০৫ কোটি টাকা বলে জানা যাচ্ছে। কিন্তু তদন্ত করতে গিয়ে উঠে আসে, যে টাকার ব্যবসা দেখানো হয়েছে, তা দেশেই আসেনি। এই নিয়ে খোঁজখবর করতে গিয়ে জানা যায়, বিদেশে সোনার অলঙ্কার যে সমস্ত কোম্পানিতে পাঠানো হয়েছে বলে দেখানো হয়, তার পুরোটাই ভুয়ো। অর্থাৎ খাতায়-কলমে দেখানো হয়েছে অলঙ্কার দুবাই, সিঙ্গাপুর, হংকং সহ বিভিন্ন দেশে গিয়েছে। অথচ বাস্তবে তা হয়নি বলে নজরে এসেছে ডিআরআইয়ের। এই ভুয়ো লেনদেন দেখিয়েও তিনি সরকারের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ কর ছাড় পেয়েছেন। বিদেশে ব্যবসার কারণে যে পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা দেশে আসার কথা ছিল, তাও আসেনি। ফলে সরকারি কোষাগারের বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।