‘বাসকে পাশ কাটাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ল শিবাজি’


শিবাজি রায় এবং আসনা।

বাবার নতুন ফেরারি ছেড়ে মাঝরাস্তায় 'আঙ্কল'-এর এসইউভি-তে উঠেছিলেন এক তরুণ। তাঁর জায়গায় ফেরারি-তে ওঠেন বাবারই বন্ধু-কন্যা। কিন্তু রবিবারের আনন্দ-সফর ঢাকল বিষাদে। বরাতজোরে ওই তরুণ বেঁচে গিয়েছেন। দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন তাঁর বাবা। গুরুতর জখম ওই তরুণী।

সকালে সিঙ্গুরের গোপালনগর থেকে ফেরার পথে ডোমজুড়ের পাকুড়িয়া সেতুর গার্ডওয়ালে তীব্র গতিতে এসে ধাক্কা মারে প্রায় চার কোটি টাকা দামের, 'ক্যালিফোর্নিয়া টি' মডেলের ফেরারি। মৃত্যু হয় গাড়ির মালিক তথা চালক, কলকাতার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী শিবাজি রায়ের (৪৩)। তাঁর বন্ধু-কন্যা, বছর আঠারোর আসনা সুরানাকে গুরুতর জখম অবস্থায় দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, মুম্বই রোডে ওই দুর্ঘটনার সময়ে ফেরারির গতি ছিল ঘণ্টায় অন্তত ১৪০ কিলোমিটার। কয়েকটি গাড়িকে ওভারটেক করে সেটি সেতুর রেলিংয়ে ধাক্কা মারে। তার পরে উল্টে যায়। গাড়িটির সামনের দিক পুরো দুমড়ে-মুচড়ে যায়। আসনাকে দরজা খুলে বের করা গেলেও প্রথমে শিবাজিকে বের করা যায়নি। গাড়ির দরজা কাটতে হয়। বেশি গতির জন্যই দুর্ঘটনা বলে পুলিশের অনুমান। নিশ্চিত হতে ফরেন্সিক পরীক্ষা করা হবে বলে হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান।

শিবাজির বাড়ি রাসবিহারী অ্যাভিনিউতে। তাঁর পরিবারের লোকজন তীব্র গতির কথা মানতে চাননি। শিবাজির এক দাদার দাবি, ''অত গতিতে চলছিল না। শিবাজি দক্ষ চালক। কখনও বেপরোয়া চালাননি।'' আসনার কাকা, অতুল সুরানাও অন্য গাড়িতে শিবাজির সফর-সঙ্গী হয়েছিলেন। তাঁর দাবি, ''ফেরার পথে হঠাৎ সেতুতে উল্টো দিক থেকে আসা একটি বাসকে পাশ কাটাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ল শিবাজি।''

অতুল জানান, তাঁরা কয়েকজন ব্যবসায়ী-বন্ধু মিলে প্রতি রবিবার সকালেই গাড়ি নিয়ে বেড়াতে যান। পরিবারের লোকজনও থাকেন। এ জন্য তাঁরা একটি ক্লাবও গড়েছেন। এ দিন সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ শিবাজিরা ছ'টি গাড়িতে ১৩-১৪ জন প্রথমে ক্যামাক স্ট্রিটে জড়ো হন। সেখান থেকে গন্তব্য ছিল সিঙ্গুরের গোপালনগরের একটি কফি-শপ। ফেরার পথে পাকুড়িয়া সেতুতে ওঠার বেশ কিছুটা আগে শিবাজির ছেলে শ্রেয়াংশ গাড়ি পাল্টে আসনাদের এসইউভি-তে গিয়ে ওঠেন। আসনা ফেরারিতে সওয়ার হন।

এ বছর তিনি সিবিএসই-র দ্বাদশ শ্রেণি উত্তীর্ণ হয়েছেন। বেলা ১১টা নাগাদ দুর্ঘটনা। ফেরারির সামনে শিবাজির বন্ধুদের চারটি গাড়ি ছিল। ফেরারির পিছনে থাকা আর একটি গাড়ি থেকেই দুর্ঘটনার কথা জানতে পারেন বাকিরা।

ফেরারি ক্যালিফোর্নিয়া টি
দাম ৩ কোটি ৯৭ লক্ষ
•  সর্বোচ্চ গতি ৩১৫ কিমি প্রতি ঘণ্টা
• ১০০ কিমি প্রতি ঘণ্টা গতি হয়ে যায় ৩.৬ সেকেন্ডে

গাড়ির শখ শিবাজির দীর্ঘদিনের। তিনি ১২-১৩টি গাড়ির মালিক। বাড়ির দেওয়ালেও মাসির্ডি়জ বেঞ্জের সঙ্গে তাঁর বিশাল ছবি টাঙানো রয়েছে। ফেরারিটি তিনি কেনেন মাসতিনেক আগে।

কিন্তু 'সুপার-কার' গাড়িতে চড়ার আনন্দ দীর্ঘস্থায়ী হল না। এ দিন ওই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান শিবাজি। আসনা একবালপুর এলাকার বাসিন্দা। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর বুকে, মাথায় এবং পায়ে গুরুতর চোট রয়েছে। ৪৮ ঘণ্টার আগে কিছু বলা সম্ভব নয়।

এ দিন পাকুড়িয়ায় ওই দুর্ঘটনার পরে স্থানীয় লোকজন জানান, প্রতি রবিবারই মুম্বই রোড দিয়ে ফেরারি, জাগুয়ার, ল্যাম্বারগিনি-র মতো 'হাইস্পিড' গাড়ি তাঁরা যেতে দেখেন। গাড়িগুলি এত জোরে চলে, প্রতি মুহূর্তে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। আগে দুর্ঘটনা ঘটেছেও। সেতুতে গতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয় না বলেও অভিযোগ। পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, ট্র্যাফিক আইন ভাঙলে গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা, জরিমানা করা হয়।