ইদের ছুটির বিজ্ঞপ্তিও ভুয়ো! কর্মচারিদের মধ্যে তুমুল বিভ্রান্তি


সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া খবর ঘিরে গত কয়েক বছরে দেশের নানা প্রান্তে একাধিক অশান্তি এমনকি প্রাণহানি, সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু উৎসবের ছুটিকে কেন্দ্র করে একেবারে জাল 'সরকারি নির্দেশিকা' ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা আগে ঘটেছে বলে মনে করতে পারছেন না অনেকেই। আসন্ন ইদের ছুটি সংক্রান্ত এমন একটি নির্দেশিকা ঘিরেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রাজ্যে। সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে পুলিশের ভূমিকায় 'অখুশি' নবান্নের শীর্ষমহল মনে করছে, পুলিশের এ নিয়ে আগেই তৎপর হওয়া দরকার ছিল। 'ভুয়ো' খবর ছড়ানোর বিষয়টি ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে দেখার জন্য পুলিশকে নির্দেশও দিয়েছে নবান্ন।

গত দু'দিন ধরে খোদ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অর্থ বিভাগের লেটারহেডে ইদের ছুটি সংক্রান্ত একটি নির্দেশিকা ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। আর ওই নির্দেশিকা ঘিরেই রাজ্য সরকারি কর্মচারি মহলে তুমুল বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।  

বিজ্ঞপ্তিটি 'ভুয়ো' জানিয়ে রবিবার টুইট করেছে কলকাতা পুলিশ। এ দিন এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা জানান, বিজ্ঞপ্তিটি 'সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন'। দোষীদের চিহ্নিত করতে তদন্ত শুরু হয়েছে। পাশাপাশি, যাঁরা এই ভুয়ো বিজ্ঞপ্তিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ করা হবে বলে জানান এডিজি।

ভুয়ো বিজ্ঞপ্তিটি সম্পর্কে পুলিশ জানিয়েছে, সেটির তারিখ ৮ জুন। অর্থ (অডিট) দফতরের একটি নির্দেশিকার আকারে তৈরি সেটি। ওই নির্দেশিকায় লেখা আছে, ১২ থেকে ১৫ জুনের মধ্যে ইদ হওয়ার সম্ভাবনা। তাই পূর্ব নির্ধারিত ১৬ জুন ইদের দিনের সঙ্গে যুক্ত করে ১২ জুন থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, প্রশাসনিক পরিভাষায় যে ভাবে রাজ্যপালের কথা উল্লেখ করে সরকারি সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়, সে ভাবেই বিজ্ঞপ্তিটির বয়ান তৈরি করা হয়েছে। নির্দেশিকাটিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের লোগোও ব্যবহার করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের অতিরিক্ত সচিবের নামের উপরে একটি সইও রয়েছে নির্দেশিকায়।

অর্থ দফতরের কর্তাদের দাবি, নির্দেশিকাটি ভুয়ো। ছুটির এমন কোনও নির্দেশিকা তাঁরা জারি করেননি। সংশ্লিষ্ট কর্তারা জানাচ্ছেন, নির্দেশিকাটি দৃশ্যতই ত্রুটিপূর্ণ। তাঁদের যুক্তি, সাধারণ ভাবে সরকারি নির্দেশিকায় রাজ্যের লোগো এখনও ব্যবহার করা হচ্ছে না। শুধু মাত্র সরকারি চিঠি, ফাইল ইত্যাদিতে তার ব্যবহার হচ্ছে। সেই জায়গায় ছড়িয়ে পড়া নির্দেশিকায় ওই লোগোর উপস্থিতি রয়েছে। নির্দেশিকার যে নম্বর ছাপানো রয়েছে, তা অর্থ দফতরের প্রথার সঙ্গে মানানসই নয়। অর্থ দফতর নিজেদের প্রকাশ করা নির্দেশিকার নম্বরে 'F' ব্যবহার করে থাকে। সেখানে ওই নির্দেশিকায় সেই অক্ষরের অস্তিত্ব নেই।

অর্থ দফতরের কর্তারা যা-ই বলুন, বিজ্ঞপ্তিতে কার লোগো কী ভাবে ব্যবহার করা হবে বা কোন পদস্থ আধিকারিকের সই তাতে থাকবে, তা জনতার পক্ষে জানা সম্ভব নয়। ফলে সাধারণ মানুষ তো বটেই, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ট-২ পরীক্ষার্থীরাও বিভ্রান্ত হয়েছেন বিজ্ঞপ্তিটিতে। কারণ, বিজ্ঞপ্তিতে থাকা ছুটির দিনগুলিতে তাঁদের পরীক্ষা রয়েছে। হ্যাকিং বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত বলেন, ''ওয়েবসাইটে ভুয়ো বার্তা দেওয়া হলে তাঁকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। কিন্তু চ্যাটে ভুয়ো খবর ছড়ালে তার উৎস খুঁজে বের করা প্রায় অসম্ভব।''

রাজনৈতিক মহলের একাংশ এতে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন। কারণ, এ ধরনের ভুয়ো বার্তা ছড়িয়ে আগেও অশান্তির বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। সে কারণেই এই বার্তার পরিণাম সুদূরপ্রসারী বলে আশঙ্কা তাঁদের।