পুরুলিয়ায় ফের এক বিজেপি কর্মীর ঝুলন্ত দেহ!


হাইটেনশন টাওয়ার থেকে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় উদ্ধার বলরামপুরের ডাভা গ্রামের বাসিন্দা দুলাল কুমারের দেহ।

বিজেপি কর্মী ত্রিলোচন মাহাতোর মৃত্যুর রহস্যের এখনও কিনারা হয়নি, তার মধ্যেই আরও এক বিজেপি কর্মীকে খুনের অভিযোগ উঠল তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। এ বারও সেই পুরুলিয়ার বলরামপুর।

চার দিকে ধূ ধূ করছে মাঠ। মাঠেরই মাঝখান দিয়ে চলে গিয়েছে হাইটেনশন বিদ্যুতের লাইন। সেই বিদ্যুতের একটি টাওয়ার থেকে শনিবার সাতসতালে বছর পঁয়ত্রিশের এক ব্যক্তির দেহ ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান স্থানীয় লোকজন।
বিদ্যুতের টাওয়ারে প্রায় ১০ ফুট উপর থেকে ঝুলছিল দেহটি। পরনে ছিল জিন্স। আর কোমরে জড়ানো ছিল গেরুয়া রঙের একটি কাপড়। পুলিশ জানিয়েছে মৃতের নাম দুলাল কুমার (৩৫)। যেখান থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে, সেখান থেকে দু'শো মিটারের মধ্যেই ডাভা গ্রাম। ওই গ্রামেরই বাসিন্দা দুলাল। বলরামপুর-বাঘমুণ্ডি রাস্তার পাশে একটি দোকান চালাতেন দুলাল। সেই দোকানে রাতে তাঁর বৃদ্ধ বাবা শুতেন। শুক্রবার রাতে বাবাকে খাবার দিতে এসেছিলন। তার পর সেখান থেকে বেরিয়ে যান। গ্রামে ঢোকার আগেই নিখোঁজ হয়ে যান বলে দাবি পরিবারের। রাতে বাড়ি না ফেরায় খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। কিন্তু তাঁর কোনও হদিস পাওয়া যায়নি। এ দিন সকালে বলরামপুর-বাঘমুণ্ডি রাস্তা থেকে একশো মিটার দূরে বিদ্যুতের টাওয়ার থেকে দুলালের দেহ উদ্ধার হয়।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় বেশ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এলাকায় বিশাল পুলিশবাহিনী পৌঁছয়। দলে দলে গ্রামবাসীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। 'জয় শ্রী রাম' ধ্বনিও ওঠে। পরিস্থিতি বিগড়াতে পারে আঁচ পেয়ে আরও পুলিশ ডাভা গ্রামে পৌঁছয়। ঘটনাস্থলে নিয়ে আসা হয় পুলিশ কুকুরও। দেহ উদ্ধার করতে গেলে গ্রামবাসীদের বাধার মুখে পড়তে হয় পুলিশকে। তাদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়ে গ্রামবাসীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সামান্য লাঠিচার্জও করতে হয় পুলিশকে। পরে দুপুর দেড়টা নাগাদ দুলালের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। 

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে থেকেই বিজেপি করতে শুরু করেন। বিজেপি নেতৃত্বও দুলালকে তাঁদের এক জন সক্রিয় কর্মী হিসাবে দাবি করেছে। তাঁদের অভিযোগ, জগন্নাথ টুডু, ত্রিলোচন মাহাতোর পর এ বার তাঁদের আরও এক কর্মী দুলালকে খুন করে ঝুলিয়ে দিয়েছে শাসকদলের লোকেরা। জেলা পরিষদের ১১ নম্বর আসনের বিজেপির জয়ী প্রার্থী গোপীনাথ গোস্বামীর অভিযোগ, ওঁরা তো কলকাতা থেকেই বলেছে পুরুলিয়াকে বিরোধীশূন্য করব, তার পরই একের পর এক বিজেপি কর্মীকে খুন করতে শুরু করেছে। যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, এটা খুন না আত্মহত্যা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলেই তা স্পষ্ট হবে। পুলিশ তদন্ত করে দেখুক আসল ঘটনাটা কী। বিজেপি নেতা মুকুল রায় পুরুলিয়ার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।  
 
এ দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ ডেরেক ও' ব্রায়েন টুইট করে বলেন, "আমরা এই খুনের তীব্র নিন্দা করছি। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হবে। এই জঘন্য কাজ যারা করেছে তাদের শাস্তি হবেই। এই ঘটনায় মাওবাদী, বজরং দল, বিজেপি বা ঝাড়খণ্ড সীমান্ত এলাকার কারও যোগ আছে কি না সঠিক তদন্ত করে সত্যটা খুঁজে বের করতে হবে।" অন্য দিকে বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই খুন করেছে। বিজেপি এখানে ভাল ফল করছে বলেই মাওবাদীদের কাজে লাগিয়ে তাদের কর্মীদের খুন করছে।

এ দিকে, সুপুরডি গ্রামের ত্রিলোচন মাহাতোর মৃত্যুর ঘটনার তদন্তভার নিল সিআইডি। সূত্রের খবর, দুলাল কুমারের মৃত্যুর তদন্তভারও সিআইডি নিতে পারে। ত্রিলোচনের খুনের অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনার পর তিন দিন কেটে গেলেও এখনও ধরা পড়েনি অভিযুক্তরা। বিজেপি সিবিআই তদন্তের দাবি করে। পুরুলিয়ার জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর অভিযোগ, পুলিশ জানাচ্ছে তদন্ত চলছে। অথচ ঘটনার দু'দিন পরে শুক্রবার পর্যন্ত পুলিশ এক জনকেও গ্রেফতার করতে পারেনি। তাঁর আরও অভিযোগ, খুনের পিছনে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হাত থাকায় রাজ্য পুলিশের তদন্তে আস্থা নেই। একমাত্র সিবিআই তদন্ত হলেই প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটিত হবে বলে তিনি আর্জি জানিয়েছেন।    

গত ৩০ মে বলরামপুরের সুপুরডি গ্রামে বিজেপির যুব মোর্চার কর্মী ত্রিলোচন মাহাতোর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। তাঁর টি-শার্টে লেখা ছিল— 'এ বার বোঝ ১৮