সন্ধান রথের, মিলল শিরোস্ত্রাণ, খননে নতুন দিশা


রথের চাকা...রথে বসার আসনের ভাঙা অংশ...বেশ কয়েকটা সমাধির গর্ত। সোমবার উত্তরপ্রদেশের সানাউলিতে এই কয়েকটি জিনিসের খোঁজ মেলার পরই রীতিমতো উত্তেজিত পুরাতাত্ত্বিকরা। দেশে প্রথম বার ব্রোঞ্জযুগের রথের নিদর্শন মিলেছে এ দিনের খননকার্যের সময়। লৌহযুগেরও আগে রথের বেশ কয়েকটি নিদর্শন হরপ্পা সভ্যতায় ঘোড়ার অস্তিত্বের প্রশ্নটা আরও এক বার উস্কে দিল।

সভ্যতার প্রাচীন ইতিহাসে ভারত যে একেবারেই পিছিয়ে ছিল না, এ দিনের খননকার্যের পর নিদর্শন তারই প্রমাণ। শুধু রথের চাকাই নয়। খননে মিলেছে শিরোস্ত্রাণও। শক্তপোক্ত এই শিরোস্ত্রাণ ইঙ্গিত দিচ্ছে যোদ্ধাগোষ্ঠীর অস্তিত্বেরও। তা হলে কি নতুন করে মহাভারতের যুগের কোনও ইঙ্গিত মিলতে পারে? জানা যেতে পারে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ আদৌ হয়েছিল কি না? হরপ্পায় ঘোড়ার প্রথম অস্তিত্বই বা কবে, এই প্রশ্নের উত্তর এ বার মিলতে পারে বলেই মনে করছেন পুরাতাত্ত্বিকেরা।

ওই রাজ্যের রাখিগিরি, কালিবঙ্গান, লোথালে এর আগেও সমাধির গর্তের নিদর্শন মিলেছে। কিন্তু এ দিনের খননকার্যে পাওয়া রথের অস্তিত্ব একেবারেই প্রথম। অর্থাৎ, লৌহযুগেরও আগের সভ্যতায় ছিল রথের ব্যবহার। কিন্তু প্রশ্নটা হল, সেই রথ টানত কারা? ঘোড়া, ষাঁড় নাকি অন্য কিছু?

চলতি বছরের মার্চ থেকেই দেশের পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণের অধিকর্তা এস কে মঞ্জুলের নেতৃত্বে দশ জন পুরাতাত্ত্বিক রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় এই খননকার্য পরিচালনা করছেন। মেসোপটেমিয়ার সভ্যতার মতোই এই রথের চাকাতে‌ও কোনও দণ্ড নেই। একটা আস্ত চাকা, আর মাঝে একটা গর্ত। ব্যস।

রথের নিদর্শন মেলার পরই মঞ্জুল বলেন, ''মেসোপটেমিয়া, গ্রিক, জর্জিয়ার মতো আমাদের দেশের সমসাময়িক সংস্কৃতিতেও ছিল রথের ব্যবহার। এ দিনের খনন অন্তত তাই বলছে। বিশেষ করে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আমাদের দেশ রীতিমতো এগিয়ে ছিল। বিশাল মাপের কাঠের কারুকাজ করা সমাধি, মাটির গয়না কিংবা তামার নকশা করা আয়নার সঙ্গে সঙ্গে প্রাক-লৌহযুগের রথের নিদর্শন প্রাপ্তির পর এটা নিশ্চিত, সেই সময় জীবনযাত্রার মানে যথেষ্ট আভিজাত্য ছিল।'' আর এই কারণেই ঘোড়ার কঙ্কালের সন্ধানের উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে। পুরাতাত্ত্বিকদের মত, খননে প্রাপ্ত শিরোস্ত্রাণ যদি যোদ্ধাগোষ্ঠীর হয়, তা হলে তারা ঘোড়ার আরোহী না হওয়ার কোনও কারণ নেই।

অধিকর্তা মঞ্জুল বলেন, ঋকবেদে ঊষা দেবী কিংবা অগ্নিদেবের রথে চড়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। কাজেই দুই সহস্রাব্দের আগেই দেশে রথের প্রচলন ছিল এটা বলা যেতেই পারে। গত তিন মাসের খননকার্যের ফলে তাম্রযুগেও ঘোড়ার অস্তিত্বের নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। তার মধ্যেই প্রাক-লৌহযুগের রথের নিদর্শন প্রাপ্তির ঘটনায় দেশের ইতিহাসকে অন্য ভাবে দেখার সময় এসেছে। সারা বিশ্বের ইতিহাস যদি দেখা যায়, মধ্য ইউরোপ, এমনকী মেসোপটেমিয়াতেও চার সহস্রাব্দের মাঝামাঝি সময়ে চাকাওয়ালা যানের উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু চাকার আবিষ্কার তা হলে কারা করেছিল, এই প্রশ্ন অমীমাংসিত রয়ে গিয়েছে।

এরই পাশাপাশি ঐতিহাসিক ডি এন ঝা বলছেন, বৈদিক যুগের একেবারে শেষের দিকে বা তার পরেই লৌহ যুগের শুরু। কিন্তু ঘোড়ায় টানা রথ বৈদিক যুগেরই বৈশিষ্ট্য। হরপ্পা সভ্যতায় এ সবের অস্তিত্ব ছিল না। মহাভারতের যুগে রথের ব্যবহারের কথা তাঁর অজানা বলে মন্তব্য করেন ঝা।