অটোতে গান বাজালেই ধরবে পুলিশ


যাত্রীবোঝাই অটো নিয়ে চালক জোর গতিতেই যশোর রোড ধরে যাচ্ছিলেন। অটোয় জোরে গান চালাতে যাচ্ছেন ঠিক সে সময়ে উল্টো দিক থেকে আসা একটি অটোর সঙ্গে ধাক্কা লেগে উল্টে গেল অটোটি। কয়েকজন যাত্রী জখম হলেন। সম্প্রতি ঘটনাটি ঘটেছে বনগাঁর কালুপুর এলাকায়।

পরিবহণ দফতরের কর্তারা জানান, অটোয় জোরে জোরে গান বাজানো পথ দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। সে জন্য পরিবহণ দফতরের তরফে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বনগাঁ মহকুমায় যাত্রিবাহী অটোয় এখন থেকে কোনও গানের ব্যবস্থা রাখা যাবে না।

শুক্রবার বনগাঁর নীলদর্পণ অডিটোরিয়ামে পথ নিরাপত্তা ও ট্র্যাফিক আইন নিয়ে একটি বিশেষ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।  মহকুমার প্রায় এক হাজার যানচালক উপস্থিত ছিলেন। পরিবহণ দফতরের বনগাঁ মহকুমার সহ-পরিবহণ আধিকারিক বিপ্লব প্রধান বলেন, ''এখন থেকে মহকুমায় কোনও অটোয় আর মিউজিক সিস্টেম রাখা যাবে না। কারণ তা বাজাতে গিয়ে চালক অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছেন। ফলে দুর্ঘটনা ঘটেছে।''

পুলিশ জানিয়েছে, অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে অটো চলাচল বন্ধ করতে হবে। সাধারণত ৪ জন যাত্রী নিয়ে অটো চালানোর কথা। সেখানে ৮-১০ জন যাত্রী তোলা হয়। চালকের ডান দিকে যাত্রী তোলার নিয়ম নেই। কিন্তু এখানে অনেক অটোচালকই তাঁর ডান দিকে যাত্রী তুলছেন। এখন থেকে এই বিষয়গুলির জন্য  কড়া পদক্ষেপ কবরে পুলিশ। বিপ্লববাবু বলেন, ''অটোয় এলইডি আলোর ব্যবহার করা যাবে না। কারণ অতিরিক্ত আলোর ফলে উল্টো দিক আসা যানচলকদের অসুবিধা হয়। ফলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।''

চালকদের কী ধরনের ভুলের কারণে পথ দুর্ঘটনা ঘটছে সে বিষয়ে শিবিরে চালকদের বোঝানো হয়েছে।

 প্রোজেক্টরের মাধ্যমে দুর্ঘটনাগুলি তাঁদের দেখানো হয়। পথ আইন লঙ্ঘন করলে কী ধরনের শাস্তি হতে পারে, সে বিষয়েও যানচালককে এ দিন সচেতন করা হয়েছে। জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ সংস্থার সরকারি সদস্য গোপাল শেঠ বলেন, ''চালকদের গাড়ি চালানোর সময় যে বিষয়ে সর্তক থাকা জরুরি তা বোঝানো হয়েছে। এখন থেকে যানচালকেরা আইন না মানলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে।''

বনগাঁ মহকুমা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত মহকুমায় পথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ৭৬টি। মানুষ মারা গিয়েছেন ২৫ জন। জখম হয়েছেন ৫১ জন। ২০১৭ সালে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৬৬ জন।

পুলিশ ও পরিবহণ দফতরের কর্তারা মনে করছেন, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো হচ্ছে, গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বলছেন চালকেরা, বাইকে দু'জনের বেশি আরোহী তোলা এবং হেলমেট না পরা, বেপরোয়ারা গতিতে গাড়ি চালানো এবং রেষারেষি, সড়কের উপর ইমারতি মালপত্র ফেলে রাখা,  সড়ক জুড়ে বেআইনি ভাবে ট্রাক বা অন্য গাড়ির পার্কিং গজিয়ে ওঠা,  অটোয় অতিরিক্ত যাত্রী তোলা এবং  রিসোল টায়ার (তাপ্পি মারা টায়ার)—এই কারণগুলির জন্য পথ দুর্ঘটনা বেশি হচ্ছে। বনগাঁর এসডিপিও অনিল রায় বলেন, ''যানচালক ও সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। না হলে পথ দুর্ঘটনা পুরোপুরি কমানো সম্ভব নয়। তবে পুলিশের তরফে এখন থেকে ধরপাকড় আরও বাড়ানো হবে।''