‘শিক্ষক শুধু বই দেখে পড়ে যান’


এক-দু'জায়গায় নয়, সংক্রমণ ছড়িয়ে গিয়েছে সারা শরীরেই!

সরকারি, সরকার পোষিত ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্তরে পঠনপাঠনের ত্রুটি-বিচ্যুতি খুঁজতে উদ্যোগী হয়েছিল রাজ্য। সেই সমীক্ষায় রাজ্যের অধিকাংশ পড়ুয়ার দৈন্যই ফুটে উঠেছে বলে জানান বিকাশ ভবনের এক কর্তা। পাঠ্যক্রম ও প্রতিটি বিষয়ের প্রতি সম্যক ধারণা তো নেই-ই এমনকি, নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধির কোনও চেষ্টাও লক্ষ্য করা যায়নি পড়ুয়াদের মধ্যে। শিক্ষকদের একাংশের পড়ানোর কাজে গাফিলতি ও উদাসীনতাকেই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করা হয়েছে।

বিকাশ ভবন সূত্রের খবর, গত বছর মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক এ রাজ্যের তৃতীয়, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের নিয়ে সমীক্ষা করে। সেখানে পড়ুয়াদের দৈন্য দশা ফুটে ওঠে। কারণ খুঁজতে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় স্টেট কাউন্সিল অব এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এসসিইআরটি)-কে সমীক্ষার দায়িত্ব দেন। সম্প্রতি সমীক্ষা শেষ হয়েছে। চলতি সপ্তাহে মন্ত্রীকে রিপোর্ট দেওয়ার কথা।

স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে বেশির ভাগ পড়ুয়াই ইংরেজিতে লিখতে এবং কথা বলতে পারে না। সাধারণ জ্ঞানও বিশেষ নেই বহু পড়ুয়ার। পাঠ্যপুস্তকে কী বিষয় পড়ছে, সেটাও স্পষ্ট জানে না তাদের অনেকে। পাঠ্যপুস্তকের বাইরের বিষয় নিয়ে আগ্রহও নেই বেশির ভাগের। স্কুলে পড়ে কিছু জেনে নেওয়ার থেকে গৃহশিক্ষক কী বললেন, সে দিকেই ঝোঁক বেশি। পড়ুয়াদের একটি বড় অংশ এই তালিকায় পড়ছে। স্কুলগুলিতে মনোযোগী পড়ুয়া যে নেই তা নয়, তবে সংখ্যায় তা একেবারেই কম বলে উঠে এসেছে সমীক্ষায়।  

কলকাতা-সহ একাধিক জেলায় এই সব স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা কমে যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিলই। তার উপরে যে রিপোর্ট উঠে আসছে, তা স্কুল ও পড়ুয়াদের সঙ্কটজনক অবস্থার দিকেই ইঙ্গিত করছে বলে মত দফতরের কর্তাদের। এর জন্য শিক্ষকদেরকেই মূলত কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে সমীক্ষক দল। সূত্রের খবর, রিপোর্টে বলা হয়েছে শিক্ষকেরা ক্লাসে বই দেখে শুধু পড়ে যান। কোনও পড়ুয়া শুনল কি না বা শুনলেও বুঝল কি না, সে বিষয়ে মাথাব্যথা নেই শিক্ষকদের একাংশের। পাশ-ফেল না থাকার কারণে কেউ আদৌ কিছু শিখল কি না, সেটা শিক্ষক বা অভিভাবকেরা ভেবেই দেখছেন না। এ ছাড়া, বই পড়ার অভ্যাসই বিশেষ নেই স্কুলপড়ুয়াদের। স্কুলে গ্রন্থাগার আছে কি না, সেটাও জানা নেই অনেকের। ফলে গ্রন্থাগার থাকলেও কেউ সেটি ব্যবহার করে না।

সূত্রের খবর, অনেক অভিভাবকের কাছে মিড-ডে-মিল, বিনামূল্যে ব্যাগ-জুতোর মতো সুযোগ-সুবিধা সন্তানকে পাইয়ে দেওয়ার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে স্কুলগুলি। ফলে বহু স্কুল থেকে পড়াশোনার পরিবেশ ক্রমশ লুপ্ত হচ্ছে। এক কর্তা বলেন, ''পাঠ্যক্রম উন্নত করে শিক্ষকদের উপরে নজরদারি বাড়াতে হবে। না হলে পড়ুয়াদের উন্নতি অসম্ভব। এ নিয়ে শেষ সিদ্ধান্ত নেবে সরকারই।''