দুর্ঘটনায় যুবকের মৃত্যুর পর মা-বাবার কাছে এভাবেই ‘বেঁচে’ রইলেন ছেলে


বাইক নিয়ে ছেলে বেরিয়েছিল কাজে। ট্রাফিক আইন মেনে সঙ্গে ছিল হেলমেটও। কিন্তু আচমকা বেপরোয়া বাসের ধাক্কা কেড়ে নেয় যুবকের প্রাণ। দুর্ঘটনায় ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে একেবারে ভেঙে পড়ার বদলে মনকে শক্ত করলেন মা-বাবা। অন্য কারও মধ্যে ছেলেকে খুঁজে পেতে সঙ্গে সঙ্গেই সিদ্ধান্ত নিলেন ছেলের চোখ ও ত্বক দান করবেন।

যেমন ভাবনা তেমন কাজ। মৃত যুবকের মা-বাবাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এল কলকাতা পুলিশও। পর্ণশ্রী থানার পুলিশ ও ট্রাফিক আধিকারিকদের চেষ্টায় কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সম্পন্ন হল সেই কাজ। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত যুবকের নাম ত্রিজিত ঘোষ (২৬)। তিনি একটি কসমেটিকস সংস্থায় সেলসে কাজ করতেন। সেলসের কাজেই তিনি এসেছিলেন বেহালায়। দুপুর সওয়া একটা নাগাদ তিনি পর্ণশ্রীতে আসেন। উপেন্দ্র ব্যানার্জি রোড দিয়ে বাইক চালিয়ে আসার সময়ই বেপরোয়াভাবে পিছন থেকে একটি বেসরকারি বাস এসে তাঁকে ধাক্কা দেয়। তিনি বাইক থেকে ছিটকে পড়েন। যুবকের হেলমেট ছিল। তা সত্ত্বেও বাসের ধাক্কায় তাঁর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুরুতর আঘাত লাগে। বিদ্যাসাগর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁর মৃত্যু হয়।

এই খবর পৌঁছয় কালীঘাটে নেপাল ভট্টাচার্য রোডে ত্রিজিতের বাড়িতে। হাসপাতালে ছুটে যান তাঁর মা-বাবা। ছেলের দেহ দেখার পরও ভেঙে পড়েননি তাঁরা। পুলিশ আধিকারিকদের জানান, অন্য কারও মধ্যে তাঁরা ছেলেকে দেখতে চেয়েছিলেন। তাই অনুরোধ জানান, ছেলের চোখ ও ত্বক যেন সংরক্ষণ করা হয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে চোখের কর্নিয়া সংগ্রহ করলে তা থেকে দৃষ্টি ফিরে পেতে পারে কোনও দৃষ্টিহীন। আবার ত্বকও কাজে লাগাতে পারেন প্লাস্টিক সার্জনরা। তাই পর্ণশ্রী থানা ও ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ আধিকারিকরা যোগাযোগ করেন স্বাস্থ্য দপ্তরের সঙ্গে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই যুবকের কর্নিয়া সংগ্রহ করা হয়। এসএসকেএম হাসপাতালে সংরক্ষণ করে রাখা হয় তাঁর ত্বক। এদিকে, হেলমেট পরা সত্ত্বেও কীভাবে ওই যুবকের মৃত্যু হল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দুর্ঘটনাটির তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।