ভারতবাসীর লক্ষ কোটি টাকা নয়ছয় করছে দেশের ব্যাঙ্কগুলি


লোনের নামে ফের ১ লক্ষ ৪৪ হাজার কোটি টাকা নয়ছয় করেছে ব্যাঙ্কগুলি৷ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে একটুও বদলায়নি ভারতের ব্যাঙ্কগুলি৷ লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা নয়ছয় করেছে ব্যাঙ্কগুলি গত আর্থিক বছরেও৷ ICRA বা Indian independent and professional investment information and credit rating agency -র সাম্প্রতিক রিপোর্টে উঠে এসেছে মারাত্মক সেই তথ্য৷

১ লক্ষ ৪৪ হাজার কোটি টাকা বাজে ঋণ৷ শুধুমাত্র গত আর্থিক বছরে। যে ঋণ আর উদ্ধার করা যাবে না৷ যা ইতিমধ্যেই মুছে ফেলা হয়েছে ব্যাঙ্কগুলির হিসাবের খাতা থেকে। রিপোর্টে এমন তথ্যই উঠে এসেছে৷ এদিকে, শেষ ১০ বছরের হিসাব ধরলে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া একাই ১ লক্ষ ২৩ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা ঋণ আদায় করতে পারে নি শেষ এক দশকে৷ অনাদায়ী ঋণকে ব্যাঙ্কের হিসাবের খাতা থেকে মুছে ফেলা ছাড়া আর কোন উপায়ই নেই স্টেট ব্যাঙ্কের৷
 
ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া গত ১০ বছরে আদায় করতে পারে নি ২৮০৬৮ কোটি টাকার ঋণ৷ গত ১০ বছরেই কানাড়া ব্যাঙ্ক আদায় করতে পারে নি ২৫৫০৫ কোটি টাকার ঋণ৷ লিস্টে আছে পাঞ্জাব ন্যাশান্যাল ব্যাঙ্ক সহ অন্যান্য ব্যাঙ্কগুলিও৷

ICRA বা Indian independent and professional investment information and credit rating agency র সাম্প্রতিক রিপোর্টে এসেছে সেই ভয়ানক তথ্য৷ রিপোর্টে বলা হয়েছে, শেষ ১০ বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি বা PSU ব্যাঙ্কগুলি ৪,০০,৫৮৪ কোটি টাকা বা ৪ লক্ষ ৫৮৪ কোটি টাকা ঋণ আদায় করতে পারে নি৷ শেষ ১০ বছরে, প্রাইভেট ব্যাঙ্কগুলি আদায় করতে পারে নি ৭৯,৪৯০ কোটি টাকার ঋণ৷ ICRA এর হিসাব মত মোট ৪,৮০,০৯৩ কোটি ঋণের টাকা বাজার থেকে ফেরত পায় নি ব্যাঙ্কগুলি৷ ক্ষতি হিসাবে মুছে ফেলা হয়েছে হিসাবের খাতা থেকে।

বছরের পর বছর সবকিছু দেখেও যে শিক্ষা নেয় নি ভারতের ব্যাঙ্কগুলি তা প্রমাণ হয় গত আর্থিক বছরের হিসাবটা দেখলেই৷ গত বছরেও সব ব্যাঙ্কগুলি ১,৪৪,০০০ কোটি টাকার বাজে ঋণ দিয়েছে৷ পুরো টাকাটাই আর উদ্ধার করতে পারবে না ব্যাঙ্কগুলি৷ পুরো টাকাটাই ক্ষতি ধরে নিয়ে হিসাবের খাতা থেকে তা মুছে দিয়েছে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ৷

এপ্রিল ২০১৭ থেকে মার্চ ২০১৮ পর্যন্ত এই লোন উদ্ধার করতে পারে নি ব্যাঙ্কগুলি৷ গত আর্থিক বছরের চেয়ে যা প্রায় ৬১.৮ শতাংশ বেশি৷ গত আর্থিক বছরে এই অনাদায়ী ঋণের পরিমাণটা ছিল ৮৯,০৪৮ কোটি টাকা৷ বিজয় মালিয়া, নীরব মোদী কান্ড থেকে তাহলে কি কিছুই শিক্ষা নিল না ভারতের ব্যাঙ্কগুলি? প্রশ্ন কিন্তু উঠছে৷

২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত, ৪,৮০,০৯৩ কোটি টাকা ঋণের টাকা উদ্ধার করতে পারে নি ব্যাঙ্কগুলি৷ যার মধ্যে পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্ক বা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৪,০০,৫৮৪ কোটি টাকা৷ মোট অনাদায়ী ঋণের প্রায় ৮৩.৪ শতাংশ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের৷ প্রাইভেট সেক্টর ব্যাঙ্কগুলিকে মোট ৭৯,৪৯০ কোটি টাকার ক্ষতি স্বীকার করে টাকার পরিমাণ হিসাবের খাতা থেকে মুছে ফেলতে হয়েছে৷

ব্যাঙ্ক তখনই হিসাবের খাতা থেকে বাজে লোন বা ক্ষতির কথা মুছে দেয় যখন তারা সেই টাকা উদ্ধার করতে পারে না বা উদ্ধার করার কোন আশা দেখে না৷ যখনই বাজে লোন Write off করে দেওয়া হয়, তখনই ব্যাঙ্কের খাতা থেকে সেই ঋণের সমস্ত তথ্য মুছে দেওয়া হয়৷

রিপোর্টে বলা হয়েছে, এত কিছু দেখার পরও ২০১৭-১৮ সালে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ৪০,২৮১ কোটি টাকা বাজে লোন তাদের ব্যাঙ্কের হিসাব থেকে বাদ দিতে বাধ্য হয়েছে৷ লাস্ট ১০ বছরে সেই সংখ্যাটা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১,২৩,১৩৭ কোটি টাকা৷ অন্যান্য ব্যাঙ্কেরও সেই একই হাল৷

প্রাইভেট ব্যাঙ্কগুলি গত আর্থিক বছরে ২৩,৯২৮ কোটি টাকার ঋণ আদায় করতে পারে নি৷ শেষ ১০ বছরে যে সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ৭৯,৪৯০ কোটি টাকা৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাঙ্ক ঋণের টাকা একেবারেই উদ্ধার করতে না পারলে তখনই হিসাব মুছে দেবার বা loan write off করার চিন্তাভাবনা করে৷

প্রশ্ন এখানে একটাই৷ বছরের পর বছর কি এর থেকে কোন শিক্ষাই নিচ্ছে না ব্যাঙ্কগুলি? বিজয় মালিয়া, নীরব মোদীর লোন খেলাপের একের পর এক ঘটনার পরও ব্যাঙ্কগুলো কেন শিক্ষা নিচ্ছে না? আমজনতার টাকা নিয়ে নয়ছয় করার অনুমতি কতদিন পাবে ব্যাঙ্কগুলি? প্রশ্ন কিন্তু উঠছে৷