শিশু নিপীড়ন রুখতে প্রধান শিক্ষকদের বিশেষ ক্লাস

কলকাতা: স্কুলে শিশুরা নিপীড়নের শিকার হচ্ছে কি না, তা বুঝতে এবং সেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পাঠ নেবেন প্রধান শিক্ষকরা। প্রতি জেলা থেকে তিনশোটি স্কুলের প্রধানদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষিত করবে শিক্ষা দপ্তর। আর এই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্টেট কাউন্সিল অব এডুকেশন রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিংকে (এসসিইআরটি)। তারপর প্রধান শিক্ষকরা যে যাঁর নিজ নিজ স্কুলে গিয়ে বাকি শিক্ষকদেরও এই বিষয়ে অবগত করবেন। জুলাই থেকেই প্রশিক্ষণের কাজ শুরু করে দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। এই বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য একটি পুস্তিকাও তৈরি করেছে এসসিইআরটি। যার নাম শিশু সুরক্ষা নীতি সংক্রান্ত পুস্তিকা।

স্কুলে শিশু সুরক্ষা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু সম্প্রতি রাজ্যের বহু স্কুলেই দেখা যাচ্ছে, শিশুদের অধিকার মারাত্মকভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। কখনও শিক্ষকদের হাতে, কখনও আবার সহপাঠীদের মাধ্যমে এই ঘটনা ঘটছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল, বহু খুদে ছাত্রছাত্রী নিপীড়িত হলে তা প্রকাশ্যে বলতে চায় না। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে এবং আতঙ্কে থাকে তারা। শিক্ষকরা মনে করেন, স্কুলেই একটা নির্দিষ্ট সময় কাটাতে হয় ছাত্রছাত্রীদের। স্বাধীনতা ও মর্যাদা— তাদের জন্য এই দু'টি অতি আব্যশিক। সেখানে যদি পড়ুয়ারা এসব না পায় বা তারা সুরক্ষিত না থাকে, তাহলে সেটা তার সার্বিক বিকাশের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। আর তাই শিশু অধিকার রক্ষার দায়িত্ব স্কুলকেই নিতে হবে। 

ঠিক হয়েছে, তিনশোটির মধ্যে একশোটি মাধ্যমিক এবং বাকি দু'শোটি প্রাথমিক স্কুলের প্রধানদের এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কীভাবে একজন শিক্ষক বুঝবেন যে সংশ্লিষ্ট বাচ্চার সঙ্গে কোনও খারাপ কিছু হয়েছে? এ বিষয়ে যে পুস্তিকা তৈরি করা হয়েছে, তাতে বেশ কিছু শনাক্তকরণের চিহ্ন ও সঙ্কেত তুলে ধরা হয়েছে। যেমন শিক্ষার্থীর মধ্যে একটা তন্দ্রাচ্ছন্নভাব, দীর্ঘ অনুপস্থিতি, আক্রমণাত্মক আচরণ, কোনও নির্দিষ্ট শিক্ষককে দেখলে ভয় পাওয়া, সহপাঠীদের সঙ্গে অস্বাভাবিক আচরণ ইত্যাদি। আগেভাগেই যাতে এমন সঙ্কেত দেখে পদক্ষেপ করতে পারেন প্রধান শিক্ষকরা, তার জন্যই বিশেষ ক্লাস নেওয়া হবে তাঁদের। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, পড়ুয়াদের উপর শারীরিকের চেয়ে মানসিক নির্যাতনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে। তাই একজন ছাত্র বা ছাত্রী সেরকম কোনও ঘটনার শিকার হয়েছে কি না, তাও হাতেকলমে বোঝানো হবে। পাশাপাশি কোন কোন ঘটনায় একজন শিক্ষার্থীর অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, তা নিয়েও অবগত করা হবে। ওই পুস্তিকায় বেশকিছু নমুনাও তুলে ধরা হয়েছে। বিষয়টি ভালো করে বোঝার জন্য এটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলেই জানান শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিকরা। 
প্রশিক্ষণের সময় বেশ কিছু প্রস্তাবও স্কুলগুলিকে দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। তার মধ্যে একটি হল, স্কুলে অভিযোগ সংক্রান্ত একটি বক্স রাখতে বলা হবে। এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে এসসিইআরটি'র কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলেন, কেউ যদি প্রকাশ্যে কিছু না বলতে পারে, তাহলে এই অভিযোগ বক্সে তার সমস্যা জানিয়ে দিতে পারবে। সে তাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে। শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই পাঠ কেবল সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুলের শিক্ষকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে চাইছে না তারা। প্রয়োজনে বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকদেরও এই প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে বলে ভাবনাচিন্তা করছেন কর্তারা।