ভাগ্নির সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে মামার মর্মান্তিক পরিণতি


সিউড়ি: তিনি নিজে বিবাহিত৷ বয়স ৩০৷ ঘরে স্ত্রীও রয়েছে৷ তবু দূর সম্পর্কের ২৭ বছরের ভাগ্নির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন পরকীয়ায়৷ বিষয়টি জানতে পেরে ওই তরুণীর ভাই আলাদা করে মামাকে ডেকে সাবধানও করেছিল৷ তা নিয়ে মাস খানেক আগে তর্কাতর্কি থেকে হাতাহাতিও হয় মামা-ভাগ্নের মধ্যে৷
অভিযোগ, তারপরেও সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চাননি বিবাহিত মামা৷ আর তার জেরে মর্মান্তিক পরিণতি হল ওই যুবকের৷ প্রাণের বিনিময়ে পরকীয়ার মূল্য চোকাতে তাঁকে৷

সিউড়ির কড়িধ্যায় সুব্রত ওরফে পিন্টু অঙ্কুরকে নৃশংসভাবে খুনের নেপথ্যে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে পুলিশি তদন্তে৷ পুলিশ সূত্রের খবর, সিউড়ির মল্লিকপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চাকদহতে বাড়ি সুব্রতর৷ তিনি সিউড়ি শহরের একটি বাইকের শোরুমে কাজ করতেন৷

বাড়িতে স্ত্রী থাকা স্বত্ত্বেও সিউড়ি শহরের অদূরে কড়িধ্যার ডোমপাড়ার সম্পর্কিত ভাগ্নির সঙ্গে সুব্রত পরীকায়ার সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন বলে অভিযোগ৷ ইতিমধ্যে ওই ঘটনায় নিহত সুব্রতর দূর সম্পর্কের নাবালক ভাগ্নে ও তার এক বন্ধুকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ৷ ধৃতদের জেরা করেই পুলিশ ওই সম্পর্কের কথা জানতে পেরেছে৷

পুলিশের দাবি, জেরায় নিহত সুব্রতর ১৪ বছরের ভাগ্নে পুলিশকে জানিয়েছে যে তার দিদির সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল মামা (সুব্রত)৷ পুলিশের কাছে ধৃত ওই নাবালক জানিয়েছে যে সে অবৈধ সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার জন্য মামাকে বারংবার সাবধানও করেছিল৷

কিন্তু সুব্রত তার কথাকে কোনও পাত্তা দেয়নি৷ উলটে অবৈধ সম্পর্ক জারি রেখেছিল৷ ফলে তর্কাতর্কি থেকে দু'জনের মধ্যে হাতাহাতিও হয়৷ তখন থেকেই মামা-ভাগ্নের শত্রুতা ক্রমেই বাড়তে থাকে৷

জেরায় ওই নাবালক জানিয়েছে, মামার ওপর আক্রোশ ছিলই৷ বুধবার বৃষ্টি ভেজা রাতে সে মোক্ষম সুযোগটি পেয়ে যায়৷ তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, বুধবার বাইকের শোরুমের কাজ সেরে সহকর্মী সঞ্জয় মালকে ছাড়তে বাইকে করে কড়িধ্যায় গিয়েছিলেন সুব্রত৷

সঞ্জয়কে জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, বাড়িতে দু'জনে বসে মদ্যপানও করেন তাঁরা৷ কিন্তু গাড়ির তেল শেষ হয়ে যাওয়ায় সঞ্জয়ের বাড়িতে গাড়ি রেখেই রাতে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন সুব্রত৷

নিহতর ধৃত ভাগ্নে পুলিশি জেরায় স্বীকার করেছে যে রাত ১০টা নাগাদ সে ও তার এক বন্ধু যখন কড়িধ্যায় ফিরছিল তখনই রাস্তার ধারে মদ্যপ মামাকে বেহুঁশ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন৷ তখনই পুরনো আক্রোশ থেকে সে সিদ্ধান্ত নেয় মামাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবে৷ যেমন ভাবা তেমন কাজ৷

চটজলদি বাড়ি থেকে একটি হাঁসুয়া এনে প্রথমে মামার বাম হাতের কবজি কেটে ফেলে তারা৷ কাটা হয় পুরুষাঙ্গ৷ মাথাও ফাটিয়ে দেওয়া হয়৷ মৃত্যু নিশ্চিত করতে বুক থেকে পেট ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে ফেলে তারা৷

বাম হাতের কাটা কবজিটি অদূরের জঙ্গলে ফেলে দিয়েছিল ওই দু'জন নাবালক৷ শুক্রবার পুলিশ তাদেরকে নিয়ে গিয়ে কড়িধ্যার ডোমপাড়ার সংশ্লিষ্ট জঙ্গল থেকে বাম হাতের কাটা কবজি উদ্ধার করেছে৷ সুব্রতর স্ত্রী রিঙ্কুদেবী প্রথমে সুব্রতর সহকর্মী সঞ্জয় মালের বিরুদ্ধে থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন৷

পুলিশের দাবি, সঞ্জয়কে জেরা করেই মামা-ভাগ্নির অবৈধ সম্পর্কের কথা উঠে আসে৷ এরপরই সুব্রতর সম্পর্কিত ভাগ্নেকে আটক করে পুলিশ৷ পুলিশের দাবি, টানা জেরার মুখে নাবালক ওই কিশোর মামাকে খুনের কথা স্বীকার করে নেয়৷ খুনে সহযোগিতা করার অভিযোগে ওই কিশোরের এক বন্ধুকেও গ্রেফতার করে পুলিশ৷ পুলিশ সূত্রের খবর, জেরায় মামার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের কথা মেনে নিয়েছেন দূর সম্পর্কের ওই ভাগ্নিও৷