রান্নাঘরে পড়ে দেহ, বন্ধ ফ্ল্যাটে 'ফিল্মি কায়দায়' খুন সরকারি মহিলা অফিসার


কসবা টেগোর পার্কের ফ্ল্যাটে ন্যাশনাল অ্যাটলাসের এক উচ্চপদস্থ মহিলা অফিসারের খুন ঘিরে ক্রমশ জটিল হচ্ছে রহস্য। শনিবার কসবার বন্ধ ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় শীলা চৌধুরী নামে ওই মহিলার দেহ। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিস মনে করছে, পরিচিত কোনও ব্যক্তিই খুন করেছেন শীলা চৌধুরী নামে ওই অফিসারকে।

জানা গেছে, স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে সল্টলেকে এক আত্মীয়ের ফ্ল্যাটে থাকতেন শীলা চৌধুরী। ছেলে বিদেশে থাকেন। কসবার ফ্ল্যাটে মাঝে মধ্যে আসতেন শীলা চৌধুরী। কসবার ফ্ল্যাটে তাঁর এক পরিচারক ও এক ঠিকে কাজের লোক ছিল। শনিবার বিকেলে শীলা চৌধুরীর এক বন্ধু এসে প্রথম দেখতে পান, তিনি রান্নাঘরের মেঝেতে পড়ে রয়েছেন। ওই বন্ধুই পুলিসে ও মৃতার আত্মীয়দের খবর দেন। এরপরই পুলিস এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। সেইসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই ফ্ল্যাটের পরিচারক, পরিচারিকা ও শীলা চৌধুরীর বন্ধুকে আটক করে।

মৃতার মাথায় ভারী আঘাতের চিহ্ন ছিল। রান্নাঘরে দেহের পাশে পড়েছিল আধপোড়া নাইটি ও একটি বালিশ। ড্রয়িংরুমের টেবলে পড়েছিল আধ খাওয়া সরবতের গ্লাস। অন্যদিকে লন্ডভন্ড আলমারি, জামাকাপড় ঘেঁটে তছনছ করা। সেইসঙ্গে গ্যাসের নজেলের সঙ্গে গামছা কেটে কেটে দড়ির মতো তৈরি করে তা বারান্দা দিয়ে ফেলা। যাতে ওই দড়ি ধরে টানলেই গ্যাস বেরতে থাকে। এইসব তথ্য প্রমাণ দেখেই তদন্তকারী অফিসাররা নিশ্চিত হয় যে খুনই করা হয়েছে শীলা চৌধুরীকে।

তবে কোনও কিছু লুঠ করতে এসে যে শীলা চৌধুরীকে খুন করা হয়নি, তা স্পষ্ট জানিয়েছেন তদন্তকারী অফিসাররা। তাঁদের মাতে কোনও পরিচিত ব্যক্তি-ই ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে ওই মহিলাকে খুন করেছেন। জানা গেছে, শনিবার বিকেলে পরিচারক যুবকটিকে সস আনতে পাঠিয়েছিলেন শীলা চৌধুরী। সেইসময় ফ্ল্যাটে একা ছিলেন তিনি। মনে করা হচ্ছে, তখনই ফ্ল্যাটে আসেন তাঁর পরিচিত কেউ। যাঁকে দেখেই দরজা খুলে দিয়েছিলেন শীলা চৌধুরী। নির্দ্বিধায় আগুন্তুককে ভিতরে আসতে দিয়েছিলেন। আর তারপর সে-ই খুন করে শীলা চৌধুরীকে।

প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিস জানিয়েছে, ফ্ল্যাটের ভিতরে মহিলাকে প্রথমে মাথায় ভারী বস্তু দিয়ে আঘাত করে আততায়ী। মহিলা পড়ে গেলে মৃত্যু নিশ্চিত করতে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে মহিলার শ্বাসরোধ করা হয়। এরপর গ্যাসের নজেলের সঙ্গে গামছার টুকরো দিয়ে তৈরি দড়ি বেঁধে, তা বারান্দা দিয়ে ঝুলিয়ে দেয় আততায়ী। দেহের পাশেই একটি নাইটি রেখে তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আগুন যাতে বেশিক্ষণ জ্বলে সেই জন্য রাসায়নিকেরও ব্যবহার করে আততায়ী। আততায়ীর পরিকল্পনা ছিল, ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর গামছা কেটে তৈরি করা দড়ি ধরে টান দেবে সে। এরফলে গ্যাস সিলিন্ডার পড়ে গিয়ে গ্যাস বেরতে থাকবে এবং আগুন আরও বড় আকারে ধরে যাবে। ফলে সব তথ্যপ্রমাণ সহজেই লোপাট হয়ে যাবে। যদিও দড়ি ছিঁড়ে যাওয়ায় শেষ মুহূর্তে ভেস্তে যায় পুরো পরিকল্পনা।

পুলিসের জিজ্ঞাসাবাদারে মুখে মহিলার পরিচারক এবং তাঁর বন্ধু দুজনেই জানিয়েছেন, এরপরই তাঁরা একসঙ্গে ফ্ল্যাটে ঢোকেন। এবং ফ্ল্যাটে ঢুকে মহিলাকে পড়ে থাকতে দেখেন। তবে, খুন নিশ্চিত হওয়ার পরেও খুনের মোটিফ নিয়ে এখনও ধন্দে পুলিস।