দু’দিনের সন্তানকে ফেলে দেওয়ার আগে চুমু খেলেন বাবা, তারপর...


তিনটে সন্তানের পর আরও একটা সন্তান। সমাজে তো এ বার মুখ দেখানো যাবে না! আত্মীয়-পরিজন, প্রতিবেশীরা ছিঃ ছিঃ করবে। তা হলে উপায়?

উপায় অবশ্য বের করে ফেলেছিলেন স্বামী-স্ত্রী মিলে। পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধুদের পরিহাস থেকে বাঁচতে তাই জন্মানোর পরই নবজাতককে রাতের অন্ধকারে ফেলে রেখে এলেন একটি গির্জার বাইরে। ওই দম্পতি ভেবেছিলেন, যাক রক্ষা পাওয়া গেল। আর কৈফিয়ত্ দিতে হবে না, পরিহাসের মুখোমুখি হতে হবে না। কিন্তু শেষ রক্ষা হল কোথায়! 'এক জন' অলক্ষ্যে নজর রাখছিল তাঁদের উপর। আর তা হল গির্জার সিসিটিভি ক্যামেরা। সেই ক্যামেরার ফুটেজই রহস্যোদ্ঘাটন করল।

ঘটনাটা কেরলের কোচির। ওয়াড়াক্কানচেরির বাসিন্দা বিট্টু ও তাঁর স্ত্রী প্রতিভা। তাঁদের তিন সন্তান রয়েছে। ফের গর্ভবতী হন প্রতিভা। ত্রিশূরের একটি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। গত বুধবারেই ফুটফুটে একটি সন্তানের জন্ম দেন তিনি। পরিবারে নতুন অতিথি আসায় আনন্দের থেকে আশঙ্কাই ঘিরে ধরে বিট্টু ও প্রতিভাকে। বাড়ি ফিরলেই বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশীদের কাছ থেকে শুনতে হবে নানা রকম কথা। তাই হাসপাতালে বসেই দু'জনে শিশুটিকে কোথাও রেখে আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, পুলিশের কাছে অন্তত তেমনটাই দাবি করেছেন বিট্টু। লোকলজ্জার হাত থেকে বাঁচতে তাই হাসপাতাল থেকে সকলের মজর এড়িয়েই শুক্রবার রাতে তাঁরা সোজা চলে আসেন এরাপল্লির সেন্ট জর্জ ফোরেন গির্জায়। সে সময় গির্জায় আশপাশটা পুরো নির্জনই ছিল। সুযোগও এসে যায়। শিশুটিকে খুব সন্তর্পণে গির্জার সামনে রেখে দেন তাঁরা। রাখার আগে শিশুটির কপালে 'স্নেহভরা' চুম্বনও করেন বিট্টু। তার পর নিঃশব্দে সেখান থেকে সরে পড়েন।

রাত তখন সাড়ে ৮টা। গির্জার নিরাপত্তরক্ষী হঠাত্ই শিশুর কান্নার আওয়াজ পেয়ে এগিয়ে আসেন। দেখেই চমকে ওঠেন। একটি সদ্যোজাত শিশুকে যত্ন করে কাপড় দিয়ে জড়িয়ে শোয়ানো রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। শিশুটির মা-বাবার খোঁজ করে পুলিশ। তবে তাঁদের খোঁজ পেতে অবশ্য বেশি বেগ পেতে হয়নি পুলিশকে। গির্জার সিসিটিভি ফুটেজে সংগ্রহ করে সংবাদমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করে তারা। তার পরই বিট্টু ও প্রতিভার খোঁজ পাওয়া যায় ত্রিশূরের ওয়াড়াক্কানচেরিতে।

পুলিশ ওই দু'জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে। বিট্টু জেরায় পুলিশকে জানিয়েছেন, বার বার গর্ভবতী হওয়ায় পাড়ায় প্রতিভাকে অনেকেই উপহাস করতেন। বন্ধু-বান্ধবরাও কটাক্ষ করতে ছাড়ত না। এ সবের হাত থেকে মুক্তি পেতেই সদ্যোজাত সন্তানকে রেখে আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। কিন্তু শুধুই কি লোকলজ্জার কারণ, না কি এর পিছনে আরও কোনও কারণ আছে, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।