ফোনে হুমকি, ফেসবুকে কটূক্তি, আতঙ্ক কাটছে না নিগৃহীত ছাত্রের


খোদ শিক্ষামন্ত্রী বলছেন, ''অভিযুক্তদের ধরতেই হবে।''

পুলিশ দাবি করছে, অভিযুক্ত ছাত্রদের সন্ধানে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চলছে। কলেজের সামনে মোতায়েন রয়েছে পুলিশও। তবু তাদের সন্ধান মিলছে না।

কিন্তু, চার-চারটি দিন পার হয়ে গেলেও সেন্ট পলসের সেই নিগৃহীত ছাত্রের আতঙ্ক কাটেনি। তাঁর কথায়: "আতঙ্কে আছি। চার দিন হয়ে গেলেও অধরা অর্ণব ঘোষেরা। ফোনে হুমকি দিচ্ছে। ফেসবুকে কটূক্তি করছে। তা-ও কেন গ্রেফতার করা যাচ্ছে না?"

পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে এ ভাবেই ক্ষোভ উগরে দিলেন সেন্ট পলস কলেজের নিগৃহীত সেই ছাত্র। মঙ্গলবারেও শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, "অভিযুক্তদের ধরতেই হবে।"

বাস্তব চিত্রটা অবশ্য অন্য। পুলিশ এখনও 'চারমূর্তি'র খোঁজ পাচ্ছে না। যদিও আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার দাবি, ইতিমধ্যেই ট্যাংরা, হাওড়া-সহ বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়েছে। অভিযুক্তের বাড়ি তো বটেই, এমনকি তাদের আত্মীদের বাড়িতেও খোঁজখবর করা হয়েছে। তবুও সন্ধান মিলছে না। আর তাতেই ক্ষোভ বাড়ছে কলেজ পড়ুয়াদের মধ্যে। ঘটনার পর কলেজে আসতে কিছুটা দ্বিধাবোধ করছিলেন নিগৃহীত ছাত্র। লজ্জায়, কিছুটা ভয়েও সিঁটিয়ে ছিলেন। যাঁরা ওই ছাত্রের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁরাও আতঙ্কিত হয়েছিলেন। শেষে তাঁদেরও না এমন হাল হয়! অবশেষে তাঁরা বুঝেছেন, এ ভাবে গুটিয়ে থাকলে চলবে না।

এ দিন অবশ্য তাঁদের শারীরিক ভাষায় ভয়ের বিন্দুমাত্র চিহ্ন দেখা গেল না। বরং তাঁরা একসঙ্গে বলে উঠলেন, "অভিযুক্তরা যত দিন না গ্রেফতার হবে, আমরা একসঙ্গে আন্দোলন চালিয়ে যাব। ফোন, ফেসবুকে কত হুমকি দিতে পারে তা-ও দেখে নেব। শুধু এই ঘটনাই নয়, খোঁজ নিয়ে দেখুন, এমন অনেক কুকীর্তি করেছে অর্ণব ও তার অনুগামীদের। অর্ণব ছ'বছর ধরে ফেল করছে। আর কলেজে ভর্তি হচ্ছে।"

বন্ধুদের পাশে পেয়ে কিছুটা ভয় কেটেছে নিগৃহীত ছাত্রের। তাঁর বক্তব্য, "ওরা খুবই ক্ষমতাশালী। না হলে শিক্ষাকর্মীকে নিয়ে মদ খেতে পারে? কলেজে আসছি ঠিকই, ভয়ে যে পাচ্ছি না, তা নয়। শিক্ষামন্ত্রী নিজে উদ্যোগী হয়েছেন। তাই আমরা আশায় রয়েছি।"

অন্য দিকে, ছাত্র নিগ্রহের ঘটার পর কলেজে শুরু হয়েছে নতুন নিয়ম। এ বার থেকে কলেজে ঢুকতে গেলে লকবুকে সই করতে হবে। বিকেল ৫টার পর প্রধান ফটক বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ জারি হয়েছে। কলেজের সামনে মোতায়েন রয়েছে পুলিশেও। কলেজের সাধারণ সম্পাদক বলেন, "ভয়, হুমকি উপেক্ষা করে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে সেন্ট পলস কলেজের পড়ুয়ারা। কলেজ কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি তৈরি করেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্টও দেওয়া হবে।"

নিগ্রহের ঘটনায় ইতিমধ্যেই সাসপেন্ড করা হয়েছে শিক্ষাকর্মী অনন্ত প্রামাণিককে। গত ১৭ মে টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের ওই ছাত্রকে নগ্ন করে হেনস্থা করা হয়। সেই ভিডিয়ো ছড়িয়ে প্রথমে ভাইরাল করে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়। আতঙ্কে চুপ করেছিলেন সেই ছাত্র। তাঁর অজান্তেই সেই ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ে কলেজের মধ্যে। তার পরেই পুলিশে অভিযোগ জানান তিনি। এই ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে টিএমসিপি-র নেতা অর্ণব ঘোষ, শিক্ষাকর্মী অনন্ত প্রামাণিক এবং বহিরাগত টিএমসিপি সদস্য শেখ ইনামুল হক ওরফে তপু এবং এই কলেজের ছাত্র অভিজিৎ দলুইয়ের বিরুদ্ধে।