জঞ্জাল-শহর ১৯টি, স্বচ্ছতায় পিছিয়ে বাংলা


বায়ুদূষণে কলকাতা ও হাও়়ড়া আগেই দেশের মধ্যে প্রথম সারিতে এসেছিল। এ বার কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের 'স্বচ্ছ ভারত প্রকল্প'-এর সমীক্ষা বলছে, দেশের ২৫টি নোংরা শহরের মধ্যে ১৯টিই পশ্চিমবঙ্গের! সেই তালিকায় দার্জিলিং, শিলিগুড়ি, বাঁকুড়ার সঙ্গে রয়েছে কলকাতার অদূরবর্তী উত্তর ব্যারাকপুর এবং মধ্যমগ্রামও। শুধু তা-ই নয়, স্বচ্ছতার নিরিখে পশ্চিমবঙ্গের ঠাঁই তলানিতে। এ রাজ্যের পিছনে রয়েছে শুধু নাগাল্যান্ড, পুদুচেরি আর ত্রিপুরা।
এই নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে তরজা শুরু হয়েছে। শিলিগুড়ির মতো কোনও কোনও শহর ঘিরে একই ভাবে চাপান-উতোর চলছে রাজ্যের শাসক ও বিরোধী শিবিরের মধ্যে।

কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় রবিবার আসানসোলে বলেন, ''কেন্দ্রীয় সরকার সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে, দেশের প্রথম ১০টি নোংরা শহরের মধ্যে এই রাজ্যেই রয়েছে সাতটি!'' রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সোমবার তার জবাবে বলেন, ''রাজনৈতিক সম্পর্ক ভাল নয় বলেই কুৎসা করার চেষ্টা চলছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক।'' তাঁর দাবি, এই রাজ্যের পুর এলাকায় জঞ্জাল সাফাইয়ের কাজে নাগরিকেরা সন্তুষ্ট।

জনতার অভিজ্ঞতা অবশ্য বলছে, মধ্যমগ্রাম স্টেশন চত্বর থেকে শুরু করে নোয়াই খাল সংলগ্ন এলাকায় যত্রতত্র আবর্জনা পড়ে থাকে, দুর্গন্ধ ছড়ায়। নোয়াই খাল নর্দমার চেহারা নিয়েছে। বাড়ি থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করে তা দিগবেড়িয়ার-তেঁতুলতলার ভাগা়ড়ে ফেলা হয়। মৃত পশুর দেহ এবং হাসপাতালের নোংরাও ফেলা হয় সেখানে। ''সমীক্ষার সময় আমার বা এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলা হয়নি। কিসের ভিত্তিতে এই সমীক্ষা হয়েছে, এর বাস্তবতা কী, তারও জবাব চাইব,'' বলেন মধ্যমগ্রামের পুর চেয়ারম্যান রথীন ঘোষ।

১৮৬৫ সালে তৈরি বাঁকুড়া পুরসভার বাসিন্দাদের পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। রাস্তার পাশে নিকাশি নালায় মলত্যাগ চলছে, প্লাস্টিকে ভরে আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। কোনও কোনও এলাকায় ভেঙে পড়েছে নর্দমা। পথেঘাটে ডাস্টবিনও খুব কম। তার উপরে নিয়মিত সাফাই হয় না। যদিও তৃণমূল পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্তের দাবি, ''ওই সমীক্ষা সম্পূর্ণ ভুল। শহর পরিদর্শন না-করেই সমীক্ষার রিপোর্ট তৈরি হয়েছে।''

শিলিগু়ড়ি শহরে রোজ গড়ে ৪০০ মেট্রিক টন আবর্জনা জমা হয়। হিলকার্ট রোড, বিধান রোড, বর্ধমান রোড, সেবক রোডেও আবর্জনা পড়ে থাকে। অভিযোগ, বস্তি এলাকায় সাফাই ঠিকঠাক হয় না। মহানন্দা নদী 'মহানর্দমা'য় পরিণত হয়েছে। সেবক রোডের দুই মাইলের ভাগা়ড়ে অপরিকল্পিত ভাবে আবর্জনা ফেলা হয়। পুরসভার বিরোধী দলনেতা, তৃণমূলের রঞ্জন সরকার জানান, বাম পরিচালিত বোর্ড শহরকে আবর্জনায় ভরিয়ে তুলেছে। মেয়র অশোক ভট্টাচার্য অবশ্য বলছেন, ''এই রিপোর্ট ঠিক নয়। সিপিএমের বোর্ড বলেই এই রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যের অনেক শহরের থেকে শিলিগুড়ির দূষণ কম।''

পাহা়ড়ের 'রানি' দার্জিলিঙে এক সময় ম্যালের টুংসুং, চৌরাস্তার কাছে, ডিআইজি অফিসের সামনের এলাকা আবর্জনায় ভরে থাকত। এখন শহরের নোংরা শ্মশানের নীচে ফেলা হয় বলে পুরসভার দাবি। কিন্তু ছোট ছোট গলি, দোকান সংলগ্ন জায়গা, নর্দমা অপরিষ্কারই থাকে। পুরপ্রধান প্রতিভা রাই বলেন, ''সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত রাস্তার ধারে আবর্জনা ফেলা যাবে না, এই মর্মে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।''