ভাড়া বাড়াল অটো, জানেই না প্রশাসন


বাসের ভাড়া বৃদ্ধির পরে শহরের একাধিক রুটে ভাড়া বাড়ল অটোরও। কোথাও এক টাকা, কোথাও বা দু'টাকা। তবে এই ভাড়া বৃদ্ধির কথা জানে না খোদ প্রশাসনই। খবর নেই পরিবহণমন্ত্রীর কাছেও। যা শুনে অনেকেই বলছেন, ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করছিলেন বাসমালিকেরা। এমনকি, ভাড়া না বাড়ালে ধর্মঘটের ডাকও দিয়েছিলেন তাঁরা। এত সবের পরেও বেসরকারি বাসের ভাড়া বেড়েছে সর্বাধিক এক টাকা করে। কিন্তু কোনও রকম আন্দোলন-কসরত ছাড়াই রাতারাতি অটোর ভাড়া বাড়ল দু'টাকা করে!
নিত্যযাত্রীদের একাংশ বলছেন, স্থানীয় ভাবে অটোর ভাড়া বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রশাসনের যে কোনও নিয়ন্ত্রণই নেই, তা ফের প্রমাণ করেছে এই নয়া বর্ধিত ভাড়া। প্রশ্ন উঠেছে, নজরুল মঞ্চে অটো ইউনিয়নগুলির সঙ্গে বৈঠক করে তা হলে কী লাভ হল? সেখান থেকে বেপরোয়া অটোয় লাগাম টানার কোনও দিক্ নির্দেশিকা মেলেনি। এ বার আটকানো গেল না ভাড়া বৃদ্ধিও।

বাস এবং ট্যাক্সি ইউনিয়নগুলির মতো ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই সরব শহরের প্রায় ১২৫টি রুটের অটো ইউনিয়ন। অনেকেরই ধারণা ছিল, বেসরকারি বাস এবং ট্যাক্সির ভাড়া বাড়ানোর পরে অটোর ভাড়া বৃদ্ধি এখন সময়ের অপেক্ষা। এই পরিস্থিতিতে গত বুধবারই নজরুল মঞ্চে অটো ইউনিয়নগুলির সঙ্গে বৈঠক করেছে পরিবহণ দফতর। সেখানে ১৪ পাতার 'অটো নীতি'ও প্রকাশ করা হয়েছে। তবে তাতে অটোর ভাড়া সংক্রান্ত কোনও নির্দেশিকা ছিল না। মনে করা হয়েছিল, এখনই অটোর ভাড়া বৃদ্ধির সম্ভাবনা আটকেছেন পরিবহণমন্ত্রী। তা যে আদতে হয়নি, সেটাই প্রমাণ হল দিন দুয়েকের মধ্যেই ভাড়া বৃদ্ধির ঘটনায়।

উল্টোডাঙা-জো়ড়াবাগান, উল্টোডাঙা-লঞ্চঘাট রুটে অটোর ভাড়া বেড়েছে সর্বাধিক দু'টাকা। গড়িয়া-টালিগঞ্জ, টালিগঞ্জ-হাজরা রুটে ভাড়া বেড়েছে এক টাকা করে। একাধিক অটো ইউনিয়নের সদস্যেরা জানাচ্ছেন, গত ১১ জুন সরকার বর্ধিত বাসভাড়া কার্যকর করার দিনই অটোর বর্ধিত ভাড়া ঠিক করে ফেলেছিলেন তাঁরা। তবে পরিবহণমন্ত্রীর বৈঠকে এ ব্যাপারে কথা হোক, তাঁরা চাননি। ঠিক ছিল, বৈঠকের দিন দুয়েকের মধ্যে অটোয় অটোয় নতুন ভাড়ার তালিকা সাঁটিয়ে দেওয়া হবে। সেই মতোই উল্টোডাঙা-জো়ড়াবাগান, উল্টোডাঙা-লঞ্চঘাট রুটের অটোয় বর্ধিত ভাড়ার তালিকা সাঁটানো হয়েছে বৃহস্পতিবার। ফলে উল্টোডাঙা থেকে শোভাবাজার পর্যন্ত যেতে ১০ টাকার বদলে এখন দিতে হচ্ছে ১২ টাকা।

উল্টোডাঙা-জোড়াবাগান রুটের অটো ইউনিয়নের সম্পাদক নীতিন সাউ বললেন, ''ভাড়া না বাড়িয়ে উপায় ছিল না। আমরা মাত্র দু'টাকা করে বাড়িয়েছি।'' তাঁর যুক্তি, ''গত কয়েক বছরে বিমার খরচ, শুল্ক, গ্যাসের দাম— সবই বেড়েছে। বাসের ভাড়াও তো বাড়ল।'' দক্ষিণ কলকাতা তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি (দক্ষিণ কলকাতার একাধিক অটো রুটের দায়িত্বপ্রাপ্ত) শুভাশিস চক্রবর্তী অবশ্য দাবি করেছেন, গড়িয়া-টালিগঞ্জ বা টালিগঞ্জ-হাজরা রুটে অটোর ভাড়া বাড়েনি। তাঁর কথায়, ''অটোচালকদের একটা দাবি ছিল ঠিকই। তবে গ্যাসের দাম সে ভাবে বাড়েনি বলে আমরা এখনই ভাড়া বা়ড়াইনি।'' তবে ওই রুটেরই অটো ইউনিয়নের নেতা গোপাল সুতার জানাচ্ছেন, জিনিসের দাম এতই বেড়ে গিয়েছে যে, ভাড়া বাড়াতেই হয়েছে।

অটোর ভাড়া নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তাঁদের করুণ অবস্থার কথা মেনে নিয়েছে পরিবহণ দফতর। দফতরের এক আধিকারিক বলছেন, ''বাসভাড়া বাড়লেই যে অটো ইউনিয়নগুলি ভাড়া বাড়াবে, তা জানাই ছিল। তবে স্থানীয় ভাবে সব ঠিক হয় বলে আমরা কিছুই বলতে পারি না।'' খোদ পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলছেন, ''কে বাড়িয়েছে, জানি না। অটোর ভাড়া সরকার নিয়ন্ত্রণ করে না।'' তা হলে অটোর যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্য দেখবে কে? এ প্রশ্নের উত্তর অবশ্য পাওয়া যায়নি মন্ত্রীর কাছে।