অ্যাপ ক্যাবকে টেক্কা দিয়ে যথেচ্ছ ভাড়া হাঁকছে ট্যাক্সি


বুধবার বেলা ১২টা। রুবি হাসপাতালের সামনে থেকে বিমানবন্দর যাওয়ার জন্য ৩৫০ টাকা এবং হাওড়ায় যেতে ৩০০ টাকা দাবি করলেন এক ট্যাক্সিচালক। সাফ কথা, মিটারের রেটে যাবেন না তিনি। ওই সময় অ্যাপ-নির্ভর ট্যাক্সির ভাড়া বিমানবন্দর যাওয়ার জন্য ৩৩০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা এবং হাওড়ার জন্য ৩০০ টাকা। একই দিনে বেলা ১টা নাগাদ গড়িয়াহাট থেকে হাওড়া যাওয়ার জন্য ২০০ টাকা দাবি করলেন এক ট্যাক্সিচালক। অ্যাপ-ক্যাবেও ভাড়াটা এক। বিকেল তিনটে নাগাদ ট্যাক্সিতে এসপ্ল্যানেড থেকে করুণাময়ী যাওয়ার জন্য ভাড়া গুনতে হল ৩০০ টাকা। কোনও অ্যাপ-নির্ভর ট্যাক্সিতে শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে করুণাময়ী যেতে গেলে এর চেয়ে ৫০ টাকা কমই লাগত! 

ট্যাক্সির মিটার থেকেও নেই। কোথাও যেতে হলে কত টাকা ভাড়া দিতে হবে যাত্রীকে, তা মর্জি অনুযায়ী ঠিক করে দেবেন ট্যাক্সিচালক। কোনও কোনও ক্ষেত্রে সেই ভাড়া যে এসি অ্যাপ ক্যাবের থেকেও অনেকটাই বেশি, হাতে-কলমে তার প্রমাণও মিলল। সবচেয়ে মজার কথা, সন্ধে গড়িয়ে রাত নামলেই ট্যাক্সির ভাড়া আরও বাঁধনছাড়া হয়ে ওঠে। ট্যাক্সিচালকদের অজুহাত, পেট্রল ও ডিজেলের সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধি।

রুবির মোড় থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ ট্যাক্সিতে পাড়ি দিতে হিসেব মতো ট্যাক্সিভাড়া ২৬০-২৮০ টাকার মধ্যে থাকা উচিত। কিন্তু ট্যাক্সিচালক মনু সাউ জানিয়ে দিলেন, '৩৫০ টাকা পড়বে।' বিস্তর দরাদরির পরে ৩৩০-এর নীচে কিছুতেই আর নামতে রাজি হলেন না। বললেন, 'তেলের যা দাম, তাতে এ ভাবে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। মালিককে দিনে ৫০০ টাকা দেওয়ার পরে আমার কাছে কিছুই থাকে না।' একই সময় ওলা অ্যাপ জানাচ্ছে, বিমানবন্দর যেতে ৩৫০ এবং উব্‌র অ্যাপে একই দূরত্ব পার করতে ৩৪০ টাকা ভাড়া লাগবে। 
শহরের যে বাসিন্দারা নিয়মিত ট্যাক্সি বা অ্যাপ-ক্যাবে যাতায়াত করেন, তাঁদের অন্যতম দেবাশিস চৌধুরী।

 ট্যাক্সিচালকদের ভাড়া নিয়ে এমন গা-জোয়ারির কথা বলতে গিয়ে দেবাশিস বললেন, 'গত রবিবারের কথা। মেট্রোর সংখ্যা কম। টালিগঞ্জ থেকে জরুরি দরকারে পার্ক স্ট্রিট চত্বরে আসার ছিল। ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের চালক ২০০ টাকা দাবি করলেন। আমি অ্যাপে ট্যাক্সি বুক করলাম। শেয়ারে নয়, একা গেলাম ১৬০ টাকায়।' 

নিউ মার্কেটের বাইরে ট্যাক্সি-বে-তে অপেক্ষারত অনুপ মণ্ডল বললেন, 'তেলের দাম যা বেড়েছে, তাতে মিটারে আর পোষাচ্ছে না। প্রি-পেড ট্যাক্সিতে ভাড়ার বাঁধা চার্ট আছে। না হলে...' কথাটা অসমাপ্তই রেখে অর্থটা বুঝিয়ে দিলেন চালক। বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিমল গুহ বলেন, 'আর কিছু নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেই। যার যা ইচ্ছা হচ্ছে, করছে। অ্যাপ-নির্ভর ট্যাক্সির যেমন বাঁধা ভাড়ায় চলে না, ট্যাক্সিচালকদের একটা বড় অংশ তেমন করছেন। অ্যাপ-নির্ভর ট্যাক্সির ভাড়া কোনও সিস্টেমে না-আনলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।'