দিনমজুরের কাজ করেও পরীক্ষায় নজির সঞ্জীবের


সঞ্জীব মণ্ডল।

পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতে হত দিনমজুরি করেই। বেশি দিন স্কুল ছুটি থাকলে পাড়ি দিতেন দিল্লি। সেখানে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করে কিছু বাড়তি আয়। তার পরে ফের পড়াশোনা। উচ্চ মাধ্যমিক দেওয়ার পর দিনই ফের তিনি পাড়ি দেন দিল্লিতে। পাশ করলে ভর্তির টাকা জোগাড় করতে হবে যে!

মহানন্দটোলা কাটাহা দিয়ারা হাই স্কুলের এই অদম্য ছাত্রের নাম সঞ্জীব মণ্ডল। উচ্চ মাধ্যমিকে তাঁর প্রাপ্ত নম্বর চাঁচল মহকুমার স্কুলগুলোর কলা বিভাগের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

এখনও দিল্লিতে শ্রমিকের কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। স্কুলে পড়ে রয়েছে তাঁর মার্কশিট। চোখে দেখেননি নিজের নম্বর। রতুয়ার ফুলহারের ওপারে চর এলাকা সম্বলপুরের বাসিন্দা সঞ্জীবের মোট নম্বর ৪৬৬। বাংলায় তিনি পেয়েছেন ৯৭, ইংরেজিতে ৮০, ভূগোলে ৯৮, ইতিহাসে ৯৪ আর রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ৯৪।

বাবা বংশী মণ্ডলও দিনমজুরের কাজ করেন। ফুলহার নদীর ওপারে চর এলাকায় কাজ জোটে না নিয়মিত। থাকেন ভাঙাচোরা মাটির ঘরে। তাঁর এক ছেলে, এক মেয়ে। অর্থাভাবে মেয়ের বিয়ে এখনও দিয়ে উঠতে পারেননি।  ছেলের টিউশনের ব্যবস্থা করা তো দূরের কথা, দু'বেলা দু'মুঠো খাবার জোটাতে হিমশিম খেতে হয় বংশীকে। নিজের পড়ার খরচ জোগাতে তাই দিনমজুরিই করতে হয় সঞ্জীবকে। এলাকার বহু বাসিন্দাই দিল্লিতে শ্রমিকের কাজ করেন। মাধ্যমিক পরীক্ষার পর ভর্তির টাকা জোগাড় করতে তাঁদের সঙ্গেই সেখানে প্রথম যান তিনি।
এই প্রতিকূলতার মধ্যে ভাল ফল করে হাল ছাড়তে রাজি নন সঞ্জীব। দিল্লি থেকে তাঁর গলায় শোনা গেল প্রত্যয়ের সুর। তিনি বলেন, ''যে ভাবেই হোক, পড়তে হবে আমাকে! ইংরেজি অনার্স নিয়ে পড়ে একটা চাকরি জোটাতেই হবে। বাবা-মায়ের দুঃখ তা না হলে তো দূর হবে না। কয়েক দিনের মধ্যেই বাড়ি ফিরব। কলেজে ভর্তি হয়ে ফের দিল্লি গিয়ে কাজ করব।''

মা সুমিত্রা বলেন, ''ছেলেটাকে দু'বেলা পেট ভরে খাবারও দিতে পারি না। শুনেছি, ভাল ভাবে পাশ করেছে। কয়েক দিনের মধ্যেই বাড়ি ফিরবে বলেছে।'' সঞ্জীবের স্কুলের প্রধান শিক্ষক গোপাল প্রামাণিকের কথায়, ''শিক্ষকরা ওকে সব রকম সাহায্য করতেন। জীবনের সঙ্গে লড়াই করে ও যা করেছে, তাতে আমরা গর্বিত।''