ত্রিপুরায় ধৃত পাক গুপ্তচর, কলকাতায় খোঁজ শুরু আইএসআই স্লিপার সেলের


উত্তরপূর্ব 'আইএসআই' চরদের কলকাতা যোগ ঘিরে তদন্ত শুরু গোয়েন্দাদের। কলকাতা ও তার আশপাশে পাক চর সংস্থা আইএসআই নতুন করে স্লিপার সেল বা গোপনে কোনও মডিউল তৈরি করেছে কি না, তা খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। বছর দু'য়েক আগেই কলকাতা থেকে আইএসআই-এর একাধিক মডিউল ধরা পড়েছিল লালবাজারের গোয়েন্দাদের হাতে। উত্তরপূর্ব ভারতে গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্ত আইএসআই এজেন্টরা যে বাংলাদেশ থেকে চোরাপথে সীমান্ত পেরিয়ে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা হয়ে কলকাতায় এসেছিল, সেই বিষয়ে নিশ্চিত গোয়েন্দারা। তাদের কলকাতা থেকে ভিনরাজ্যে পাঠানোর পিছনে কোনও স্লিপার সেল রয়েছে বলে সন্দেহ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের। এদিকে, সম্প্রতি নিও জামাত-উল-মুজাহিদিন (বাংলাদেশ) বা নিও জেএমবি-র দুই সদস্য সীমান্ত পেরিয়ে এই রাজ্যে প্রবেশ করেছে বলেও খবর এসেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের কাছে।

ইতিমধ্যে জেএমবি ও নিও জেমএবির বেশ কয়েকটি মডিউল ধরেছেন গোয়েন্দারা। এই জঙ্গি সংগঠনের অনেকগুলি স্লিপার সেল ধরা পড়েছে আগেই। ফের নতুন করে নিও জেএমবির স্লিপার সেলের সন্ধান চালানো হচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি ত্রিপুরার আগরতলা স্টেশনের কাছ থেকে ধরা পড়ে ২৪ জন বাংলাদেশি যুবক। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় প্রচুর দামি অ্যানড্রয়েড মোবাইল। তাদের মোবাইলের সূত্র ধরে গোয়েন্দাদের অভিযোগ, কাশ্মীর ও পাকিস্তানের আইএসআই-এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ আছে গ্রেপ্তার হওয়া এই যুবকদের। কাশ্মীরের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে ওই যুবকদের। যাদের সঙ্গে যুবকদের যোগাযোগ, তারা যে আইএসআই এজেন্ট, সেই সম্পর্কে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হন।

প্রাথমিকভাবে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, বাংলাদেশ থেকে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ সীমান্ত পেরিয়েই এই রাজ্যে প্রবেশ করে তারা। পেট্রাপোল হয়ে বনগাঁ স্টেশন। ট্রেনে করে শিয়ালদহ স্টেশনে এসে পৌঁছয় তারা। গোয়েন্দাদের ধারণা, এক দিন পর তারা হাওড়া থেকে উত্তরপ্রদেশ যাওয়ার জন্য ট্রেন ধরে। উত্তরপ্রদেশের দেওবন্দের কয়েকটি ডেরায় তারা ছিল বলে গোয়েন্দারা জেনেছেন। প্রথমে তারা নিজেদের ছাত্র বলে পরিচয় দেয়। কিন্তু তাদের কাছ থেকে জাল আধার কার্ড ও ভোটার কার্ড উদ্ধার হওয়ার পর তাদের আইএসআই কার্যকলাপ সম্পর্কে গোয়েন্দারা অনেকটাই নিশ্চিত হন।

এর আগে দেওবন্দ থেকে আনসার বাংলা টিম (এবিটি) জঙ্গি সংগঠনের কয়েকজন সদস্যকে গোয়েন্দারা গ্রেপ্তার করেছেন। এ ছাড়াও ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা দেওবন্দের বিভিন্ন ডেরায় আশ্রয় নিয়েছে। দেওবন্দে জঙ্গিদের কয়েকজন এজেন্ট জাল পরিচয়পত্র তৈরি করে। কয়েকটি জাল পরিচয়পত্র তৈরির কারখানাও রয়েছে সেখানে। ত্রিপুরায় ধৃতদের কাছ থেকে যে জাল পরিচয়পত্র মিলেছে, সেগুলিও দেওবন্দের এজেন্টের কাছ থেকে পায় তারা। গোয়েন্দারা জানার চেষ্টা করছেন, কে তাদের বাংলাদেশ থেকে উত্তর ২৪ পরগনা ও কলকাতা হয়ে উত্তরপ্রদেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। গোয়েন্দাদের ধারণা, আইএসআই-এর কোনও স্লিপার সেলের সদস্যই তাদের সাহায্য করছে। আইএসআই ফের কলকাতা বা তার আশপাশের জেলায় ডেরা তৈরির চেষ্টা করছে কি না, তা জানার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।