গণপিটুনির পর জুতোর মালায় গ্রাম ঘোরানো হল যুবককে, কিন্তু কেন ?


প্রেম করার 'অপরাধে' এক যুবককে বেধড়ক মারধর করে, চুল কেটে গলায় জুতোর মালা পরিয়ে গ্রামে ঘোরানোর অভিযোগ উঠল। বৃহস্পতিবার মেজিয়ার সরাকডিহি গ্রামের ঘটনা। পুলিশ গিয়ে যুবকটিকে কোনওরকমে উদ্ধার করে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করিয়েছে।
ওই যুবকের বাবা চণ্ডী মুখোপাধ্যায় এ দিন সন্ধ্যায় মেজিয়া থানায় কয়েক জনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তার দাবি, ''আমার ছেলেকে মিথ্যা অভিযোগে কিছু লোক নির্মম ভাবে মারধর করল। দোষীদের কড়া সাজা দিতে হবে।'' পুলিশ জানিয়েছে, ছ'জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়েছে। তাদের মধ্যে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, নির্যাতনের শিকার ওই যুবক সমীরণ ওরফে কেশব মুখোপাধ্যায় মেজিয়া থানার পায়রাশোলের বাসিন্দা। তিনি পায়রাশোল থেকে মেজিয়া রুটে ট্রেকার চালান।
ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বছর ছাব্বিশের ওই যুবক। তিনি দাবি করেন, "সরাকডিহির এক তরুণীর সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু, বহু দিন আগেই ওই মেয়েটির সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছে। অথচ কেউ রটিয়ে দেয় আমি ওকে রেজিস্ট্রি বিয়ে করেছি। এই মিথ্যা গুজবেই ওরা আমার উপরে নির্যাতন চালাল।"

কী ঘটেছিল এ দিন? কেশব জানান, অন্যান্য দিনের মতো এ দিনও সকালে তিনি ট্রেকার নিয়ে বেরিয়েছিলেন। পথে সরাকডিহি গ্রামে তাঁর ট্রেকার আটকায় ওই তরুণীর পরিবার ও গ্রামবাসীরা। তাঁকে ট্রেকার থেকে জোর করে নামিয়ে টানতে টানতে নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের ভিতর। তাঁর অভিযোগ, ''ওরা আমার কোনও কথা শুনতেই চায়নি। প্রথমে মাথার চুল এবড়ো খেবড়ো ভাবে কেটে দেয়। তারপরে জুতোর মালা পরিয়ে আমাকে গ্রামে ঘোরানো হয়। সেই সময় ভিড়ের মধ্যে থেকে কেউ লাঠি পেটা করে, কেউ পাথর ছুড়ে মারে। কখনও আবার মাটিতে ফেলে এলোপাথাড়ি মারও দেওয়া হয়। যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে ওদের কাছে না মারতে অনুরোধ জানিয়েছি। কিন্তু, কেউ শোনেনি।''
মেজিয়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কেশব দাবি করেন, ''মধ্যযুগীয় বর্বরতা চলে। কেউ কেউ হাততালি দিয়ে 'আরও মার' বলে উল্লাসে চিৎকার করছিল, কেউ আবার মোবাইলে ছবিও তুলছিল। কী দোষে আমাকে মারধর করা হচ্ছে, চিৎকার করে জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, এক জনও আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। প্রতিবাদ জানালে উল্টে মার বেড়ে যায়। পুলিশ না এসে পৌঁছলে হয়তো আমাকে খুনই করে ফেলত ওরা।''

এই ঘটনার পর থেকেই গ্রামে পুলিশের টহল শুরু হয়েছে। যদিও এলাকার অনেকেই ধরপাকড়ের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। কেন কেশবের উপরে এ ভাবে চড়াও হলেন লোকজন, তার সদুত্তর পাওয়া যায়নি। চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি ওই তরুণীর পরিবারের লোকজনের সঙ্গেও। গ্রামবাসীরা ঘটনাটি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। সরাকডিহির এক বাসিন্দা শুধু দাবি করেন, ''কিছু লোক এই ঘটনায় জড়িত। সবাইকে সেই সারিতে ফেলা ঠিক নয়।''
ঘটনার নিন্দা করেছেন শালতোড়ার বিধায়ক স্বপন বাউরি। তিনি বলেন, "পুলিশকে আমি বলেছি দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এমন ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না।''

নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ এ দিন অনেকের মোবাইলে ছড়িয়ে পড়ে। তা দেখে আঁতকে উঠেছেন অনেকেই। তা দেখে অনেকেই ওই যুবকের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।

তাঁদের দাবি, ওই যুবক যদি অন্যায় কিছু করে থাকেন, তার জন্য পুলিশ, আদালত রয়েছে। সেখানে কেউ যেতে পারতেন। কিন্তু, আইন তুলে নেওয়া মোটেই ঠিক হয়নি। কঠোর সাজা দিতে হবে।