২১ শীর্ষ জঙ্গির তালিকা প্রকাশ, শীঘ্রই কাশ্মীরে নিকেশ অভিযান শুরু করবে সেনা


শ্রীনগর: জম্মু ও কাশ্মীরে একমাস-ব্যাপী জঙ্গিদমন অভিযানে ওপর স্থগিতাদেশ কেন্দ্র প্রত্যাহার করার কয়েকদিনের মধ্যেই ২১ জন মোস্ট ওয়ান্টেড টেররিস্টের তালিকা প্রকাশ করল সেনা। ওই তালিকায় নাম রয়েছে পাক-মদতপুষ্ট শীর্ষ জঙ্গিদের। সূত্রের খবর, খুব শীঘ্রই রাজ্যে বড়সড় জঙ্গি-নিকেশ অভিযান শুরু করতে চলেছে সামরিক বাহিনী।

জানা গিয়েছে, এই তালিকায় রয়েছে—হিজবুল মুজাহিদিনের ১১ জন, লস্কর-ই-তৈবার ৭ জন, জয়েশ-ই-মহম্মদের ২ জন। এছাড়াও তালিকায় রয়েছে আনসার গাজওয়াত উল-হিন্দের এক জঙ্গি এবং একজন আইএসজেকে-র সঙ্গে জড়িত 'লোন-উলফ' জঙ্গি।

সামরিক বাহিনী সূত্রে খবর, এই জঙ্গিদের অনেকেই 'এ', 'এ+' ও 'এ++' শ্রেণিভুক্ত। মূলত, কে কেমন ও কতগুলি নাশকতামূলক হামলার সঙ্গে জড়িত, সেই নিরিখে জঙ্গিদের শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে।

এক নজরে দেখে নেওয়া যাক সেই জঙ্গিদের তালিকা—

হিজবুল মুজাহিদিন (১১ জন):

মহম্মদ আশরাফ খান ওরফে আশরাফ মৌলবী। বাড়ি- অনন্তনাগ। শ্রেণি- এ+।

আলতাফ আহমেদ দার ওরফে আলতাফ কাছরু। বাড়ি-  কুলগাম। শ্রেণি- এ++। বর্তমানে, দক্ষিণ কাশ্মীরের হিজবুল ডিভিসনাল কমান্ডার।

মহম্মদ আব্বাস শেখ। বাড়ি- কুলগাম। শ্রেণি- এ+।

উমর মজীদ গনাই। বাড়ি- কুলগাম। শ্রেণি- এ++।

সঈফুল্লা মীর। বাড়ি- পুলওয়ামা। শ্রেণি- এ। বর্তমানে পুলওয়ামার কমান্ডার।

জীনত-উল ইসলাম। বাড়ি- শোপিয়ান। শ্রেণি- এ++।

রিয়াজ আহমেদ নাইকু। বাড়ি- অবন্তিপুর। শ্রেণি- এ++। বর্তমানে কাশ্মীরের প্রধান অপারেশনাল কমান্ডার।

লতিফ আহমেদ দার ওরফে হারুন। বাড়ি- অবন্তিপুর। শ্রেণি- এ।

উমর ফয়াজ লোন। বাড়ি- অবন্তিপুর। শ্রেণি- এ।

মানন ওয়ানি। বাড়ি- কুপওয়াড়া। শ্রেণি- বি। আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলার।

জুনেইদ আশরাফ শেহরাই। তেহরিক-এ-হুরিয়তের চেয়ারম্যান আশরাফ শেহরাইয়ের ছেলে। শ্রেণি- বি।

লস্কর-এ-তৈবা (৭ জন):

আবু মুসলিম। বাড়ি- পাকিস্তান। অপারেশন ক্ষেত্র- হাজন। শ্রেণি- এ+।

আবু জারগাম ওরফে মহম্মদ ভা। বাড়ি- পাকিস্তান। অপারেশন ক্ষেত্র- হাজন। শ্রেণি- এ+।

আজাদ আহমেদ মালিক ওরফে দাদা। বাড়ি- অনন্তনাগ। শ্রেণি- এ। বর্তমানে, অনন্তনাগে লস্করের জেলা কমান্ডার।

শাকুর আহমেদ দার। বাড়ি- কুলগাম। শ্রেণি- এ+।

মহম্মদ নাভেদ জাদ। বাড়ি- পাকিস্তান। অপারেশন ক্ষেত্র- পুলওয়ামা। শ্রেণি- এ+।

রিয়াজ আহমেদ দার। বাড়ি- পুলওয়ামা। শ্রেণি- এ।

মুস্তাক আহমেদ মীর। বাড়ি- শোপিয়ান। শ্রেণি- এ++।

জয়েশ-ই-মহম্মদ (২ জন):

জাহিদ আহমেদ ওয়ানি। বাড়ি- পুলওয়ামা।

মুদাসির আহমেদ খান। বাড়ি- অবন্তিপুর।

আনসার গাজওয়াত উল-হিন্দ (১ জন):

জাকির রশিদ ভট্ট ওরফে জাকির মুসা। বাড়ি- অবন্তিপুর। শ্রেণি- এ++।

আইএসজেকে (১ জন):

দাউদ আহমেদ সোফি ওরফে দানিশ। বাড়ি- শ্রীনগর। শ্রেণি- এ++। আইএসজেকে-র প্রধান। গত ২২ জুন বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে খতম।

প্রসঙ্গত, চলতি সপ্তাহেই মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির নেতৃত্বাধীন পিডিপি-র সঙ্গে জোট সরকার ছেড়ে বেরিয়ে আসে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি। যে কারণে, রাজ্যে সরকারের পতন হয়। বর্তমানে সেখানে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি রয়েছে।

প্রাক্তন শরিক পিডিপি-র বিরুদ্ধে বিজেপির অভিযোগ, তারা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে নরম মনোভাব বজায় রেখেছে। পাশাপাশি, রাজ্যে জঙ্গিদমন অভিযান স্থগিত রাখার মেয়াদ বাড়ানোর দাবিও করছিল মুফতি সরকার। যা মেনে নেয়নি বিজেপি।

বিজেপি জানায়, সৌহার্দ্যের বার্তা হিসেবেই কেন্দ্র রমজান মাসে উপত্যকায় জঙ্গিদমন অভিযান স্থগিত রেখেছিল। কিন্তু, পাক-মদতপুষ্ট জঙ্গিরা ও তাদের সমব্যথীরা উল্টে লাগাতার হামলা চালিয়েছে।

অন্যদিকে, জঙ্গিদমন অভিযান স্থগিত রাখার ফলে, কেন্দ্রের তীব্র সমালোচনা করে বিরোধীরা। তাদের দাবি, কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের ফলে সেখানে জঙ্গি হামলা থেকে শুরু করে সীমান্তপার অনুপ্রবেশ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

এছাড়া, রাইজিং কাশ্মীরের সম্পাদক শুজাত বুখারি এবং সেনা জওয়ান ঔরঙ্গজেবের হত্যার ফলে কেন্দ্রের ওপর চাপ ক্রমশ বাড়ছিল। সব খতিয়ে দেখে, জম্মু ও কাশ্মীরের জোট সরকার থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয় বিজেপি।